কৃষকের জীবন যাপন যত স্থিতিশীল হতে থাকবে জৈবচাষ তত বিস্তারলাভ করতে থাকবে।
কি কি পথ ধরে এগোলে কৃষকের জীবন যাপন ক্রমশ স্থিতিশীলতার দিকে যেতে পারে? একটা ব্যাপার শুধু মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশ কিন্তু বহুজাতিক সংস্থা নির্দেশিত উদারনীতির অর্থনৈতিক পথ ধরেই চলছে। কৃষিতে তথাকথিত প্রথম ‘সবুজ বিপ্লব’- জনিত কারণে সংকটের চেহারা কি নিয়েছে দেখা যাক। প্রথমত, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমশ নিম্নমুখী। দ্বিতীয়ত, চাষের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ফসলের দাম না পাওয়ায় কৃষিকাজ বর্তমানে অলাভজনক পেশায় পরিনত হয়েছে।দেশে আজ প্রতিদিন ২০০০কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে বড় বড় শহরে বা অথবা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। তৃতীয়ত,মহাজনী দেনায় জড়িয়ে চাষিরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। চতুর্থত, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীক লোভ এবং আরও আরও রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। পঞ্চমত, পুরাতন দেশি জাতের বীজগুলি প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে। ষষ্ঠত, চাষিদের ফিবছর বীজ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে কোম্পানির কাছ থেকে। ইত্যাদি। উল্টোদিকে বহুজাতিক কোম্পানিরদের লাভ ক্রমশ উর্ধ্বোমূখী হয়েছে।তাদেরই অনুকূলে কৃষিআইন তৈরি হয়েছে, এদেরই স্বার্থে কৃষিপণ্যের খুচরো বিপণন ও কৃষিতে এফডিআই আইন তৈরি হয়েছে।এর ফলে আজ কৃষির সমস্ত কর্মকান্ডগুলি দৈত্যাকার বহুজাতিক সংস্থাগুলোর কুক্ষিগত হয়ে চলেছে এবং এইসমস্ত কিছুরই বিপর্যয়কর ফলাফল নেমে এসেছে কৃষকের জীবনে। এবং তার সাথে সাথে সবারই। খাদ্য ঘাটতি, অপুষ্টি কর্মহীনতা, ধারদেনা বাড়ছে, বাড়ছে চাষিদের দুঃখ-যন্ত্রনা-ক্ষোভ। এইরকম অবস্থায় বিশ্বায়নের বর্তমান পর্যায়ে কৃষিক্ষেত্রের সংকটগুলি মোকাবেলা করার নামে তারা আওয়াজ তুলছে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের। বহুজাতিক সংস্থাগুলো তাদের মুনাফার সন্ধান তাদের মতো করে করবে, কিন্তু আমরা আমাদের সমাধান কোন পথে এগোবো যাতে ধীরে ধীরে কৃষকবন্ধুরা স্থিতিশীল হতে থাকবে। পূর্ববর্তী একটি লেখায় বিগত ঘটে যাওয়া কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রকৃত সামাজিক ও পরিবেশ সংকটের সমাধানকল্পে দুটি মতামত আমি রেখেছিলাম। প্রথমটি ছিল,আশু কর্মসূচী হিসাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রুপরেখা কি কি হবে তা ঠিক করে এগোনো। দ্বিতীয়টি ছিল, সনাতনী কৃষি পদ্ধতির অগ্রনী দিকগুলোর প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চাষবাস শুরু করা।এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলার যে কৃষিতে উপরিউক্ত সমস্ত সংকট- গুলি থাকবে আর কৃষকেরাও স্থিতিশীল হয়ে জৈব চাষে মন দেবে – এটা একটা আকাশকুসুম ব্যাপারই হবে। এরপরে তো বহু- জাতিক সংস্থাগুলো কৃষিতে আরো ভয়ঙ্কর আগ্রাসন নামিয়ে আনতে চলেছে। পরবর্তী লেখায় এই আগ্রাসনের রূপগুলো এবং আমাদের আন্দোলনের সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা থাকবে। আমরা তো আশাবাদী তাই লড়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নয়। লড়াইটা ভাববাদী পথে নয়, বৈজ্ঞানিক পথে বাস্তবকে পরাজিত করেই এগোতে হবে।