“কেপ মারি”
— :: সলিল চক্রবর্ত্তী :: —
“সাবধানে যাস, —-
বাসে ডিস্ট্যান্স রেখে বসিস, ব্যাগ কোলে নিয়ে বসিস, বালার কৌটোটা ব্যাগের নিচে দিলাম, গিয়েই আগে দিদির হাতে দিয়ে দিবি”। —– কথাগুলি একদমে মা রিয়াকে বলে যান। রিয়া প্রস্তুত হতে হতে বলে “আরে তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছ মা, তুমিতো রাস্তায় বের হও না, আমরা বের হই অত চিন্তার কিছু নেই”। মা আবার বলে চলেন জলের বোতল ব্যাগের উপরের দিকে রাখলাম, সরকারি বাসে উঠবি, ভিড় এড়িয়ে চলবি”। “ঠিক আছে মা, সেই জন্যই তো দুপুরে যাচ্ছি, — চললাম”। —বলে তরতর করে রিয়া বেরিয়ে গেল।
ফাঁকা বাস স্ট্যান্ড, রিয়া দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায়, ঠিক সেই সময় একজন বছর তিরিশের হ্যান্ডসাম যুবক রিয়ার কাছাকাছি এসে বলল “ম্যডাম এখানে কি ধুলাগড় যাবার বাস দাড়াবে? “রিয়া অনিচ্ছাকৃত ভাবে বলল “হ্যা”। যুবকটি এক একটা বাস আসে আর, বাসের নেমপ্লেটের দিকে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি মারে। এইভাবে হঠাৎ যুবকটি রিয়ার খুব কাছে এসে য়ায়। রিয়া বিরক্ত হয়ে একটু সরে যেতেই যুবকটি বলে ওঠে “সরি”। একটু সরে দাড়িয়ে বলে “আসলে নতুন অভ্যাস তো! ভুলে যাই, কি এক করোনা রোগ হল বলুন তো! এত নিয়ম মেনে কি চলা যায়?” রিয়া কোনো প্রত্যুত্তর দেয়না, যুবকটি চুপচাপ আবার বাসের দিকে নজর দেয়।
তখনও বাস স্ট্যান্ডে দুটি প্রানী। যুবকটি একটি দ্রতগামী বাসের সামনে গিয়ে উকি মারল। বাসটি না দাঁড়িয়ে দ্রত গতিতে ধুলো উড়িয়ে বেরিয়ে গেল।
বাসটি বেরিয়ে যেতেই সেকেন্ডের মধ্যে যুবকটি একটি চোখ চেপে “উফ্”! বলে বসে পড়ল। তারপর একটু অসহায় মত হয়ে আস্তে আস্তে উঠে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল- “ম্যডাম, দেখুন না আমার চোখে কি যেন একটা পড়ল, অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে”। ঘটনাটি রিয়ার একদম পছন্দ হচ্ছিল না কিন্তু যা ঘটল সেটাওতো সত্যি। ওর মনে একটু দয়ার উদয় হল, আস্তে আস্তে যুবকটির দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই ওর চোখে কালো মত, ঠিক পোকা নয় কিন্তু কিছু একটা পড়েছে। যুবকটি পকেট থেকে রুমালটা বের করে বলল “বিশ্বাস করুন, কাঁচা রুমাল। একটু চোখ থেকে পোকাটা বের করে দিন না। আমার কাছে স্যানিটাইজার আছে পরে হাত স্যানিটাইজ করে নেবেন। “রিয়া কোন উত্তর না দিয়ে যুবকটির চোখ থেকে কালো বস্তুটা বের করার চেষ্টা করতে লাগল। যুবকটি অসহায়ের মত হাত টা ঝুলিয়ে মিনিট দুয়েক দাড়িয়ে থাকল।
কালো বস্তুটি বের করে যুবকটির হাতে তার রুমাল দিতেই যুবকটি পকেট থেকে স্যানিটাইজার বের করল। রিয়া বলল “নো, থ্যাংকস, আমার কাছে আছে, আমার কাছে জল আছে একটু দিই চোখ টা ধুয়ে নিন।” যুবকটি মৃদু বাধা দিয়ে বলল “না, থাক, আপনি যা করলেন আমি কখনও তা ভুলবনা।” রিয়া কোন কথার উত্তর না দিয়ে বোতলটা বের করে এক আচলা জল দিল, যুবকটি চোখে জলের ঝপটা দেওয়া শেষ হওয়ার আগেই রিয়ার বাস এসে যায়। রিয়া কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি বাসে উঠে পড়ে।
ফাকা বাস। তিন সিটের জানালার ধারে বসে মায়ের কথা মতো ব্যাগটা কোলে নিয়ে রিয়া ভাবতে থাকল – “আমরা একটা মানুষ সম্বন্ধে কত নেগেটিভ কথা ভাবি, কিন্তু যুবকটিকে তো খারাপ কিছু মনে হলনা। হয়তো এই রুঠে নতুন। যাক বাবা! এখন ভালোয় ভালোয় পৌছাতে পারলে বাচি। গিয়েই দিদির বালাটা হ্যান্ডওভার করে মাকে নিশ্চিন্ত করে,তবে আমার ছুটি।”
বাস থেকে নেমে ওয়াকিং ডিসট্যান্সে দিদির বাড়ি। রিয়া বাড়িতে ঢুকতেই দিদি বলল, “কিরে, অসুবিধা হয়নিতো? একটা ফোন তো করতে পারতিস”, রিয়া বলল – “দারা, দারা, রাস্তায় কত কি যে ঘটে।” কথাগুলো বলতে বলতে রিয়া ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ঘাটতে থাকে কিন্তু বালার কৌটোটা পায় না। রিয়া তখন চিৎকার করে ওঠে ” বালা?”
দিদি ছুটে এসে ব্যাগ উপুর করে দেখে ব্যাগের ঠিক নিচের দিকে বালার কৌটো বার করার মত সুদক্ষ হাতে ব্লেড মারা। রিয়া ততক্ষণে স্তম্ভিত, বিড় বিড় করে মুখ থেকে “তাহলে, আমি যখন চোখের কালো মতো বস্তুটি বের করছিলাম তখনই ——-!”
—— XX ——
Choto golpo hisebe khub valo content.Golpo ta theke akta Niti kotha paoa gelo j Borora ja bole valor jonyoi bole.Valo uposthapona poro borti golper apekhai thaklam.Suvecha roilo…