করোনাভাইরাসের উপদ্রব এখন সারা বিশ্বজুড়ে চলছে তাই আরো কঠিন সতর্কতা দিলেন বিজ্ঞানীরা।
ব্যাংকনোট বা টাকা, ডলার, রুপি বা যেকোন নোটে, মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে, এমনকি স্টিলের ওপর ২৮ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে করোনা ভাইরাস। মানুষের ত্বকে এ ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে এসে থাকে ৯ ঘন্টা। ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ভাইরাসের দ্রুত বিকাশ ঘটে। এ জন্য বেশ কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লেনদেন করছে ‘ক্যাশলেস’ বা নগদ অর্থহীন ব্যবস্থায়। নতুন এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, কতটা শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত এই ভাইরাস। গবেষকরা বলেছেন, যেহেতু করোনা ভাইরাসের ঠান্ডা আবহাওয়ায় দ্রুত বিস্তার ঘটে, তাই অস্ট্রেলিয়া এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি ইতিবাচক অবস্থানে আছে। কারণ, তারা গ্রীষ্মের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে গরমে এই ভাইরাস কাবু হয়ে পড়ে। এর সুবিধা পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট কিছু সারফেসে বা তলে ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে করোনা ভাইরাস ১০ দিন বেশি স্থায়ী হয়। সিডনির উলওয়ার্থস মেট্রোতে এবং মেলবোর্নে ৯টি স্টোরে এরই মধ্যে কেনাকাটা হচ্ছে বিশেষ এক পদ্ধতিতে। সেখানে কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে বাধ্য হচ্ছেন লোকজন। এ প্রক্রিয়া সেখানে চলছে পরীক্ষামুলকভাবে। আরবিএ’র সাম্প্রতিক এক কনজুমার পেমেন্ট সার্ভেতে দেখা গেছে, সব কেনাকাটায় নগদ অর্থের ব্যবহার কমে গেছে শতকরা ২৭ ভাগ। সিএসআইআরও-এর ওই গবেষণা অস্ট্রেলিয়ায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিপেরডনেস-এর উপ পরিচালক ড. ডেবি ঈগলস। তিনি বলেছেন, আমরা দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন সারফেস বা তলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘ সময় থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং সব তল বা সারফেস পরিষ্কার রাখার মতো ভাল অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটাকে কক্ষ তাপমাত্রা ধরা হয়, তাতে আমরা দেখতে পেয়েছি এই ভাইরাস চরমভাবে সক্রিয় থাকে। তারা কাচ, মোবাইলের স্ক্রিন এবং প্লাস্টিকের ব্যাংকনোটের মতো মসৃণ তলের ওপর বেঁচে থাকতে পারে ২৮ দিন পর্যন্ত। তিনি আরো বলেছেন, এই গবেষণায় দেখা গেছে এই ভাইরাসটি কতটা ভয়াবহ। বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাসের তুলনায়। কারণ, ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাস একই অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে মাত্র ১৭ দিন পর্যন্ত। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্লাস্টিক ব্যাংকনোটের চেয়ে পেপার ব্যাংকনোটের ওপর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষামুলক তলের ওপর কৃত্রিম মিউকাস সৃষ্টি করে তার ওপর করোনা ভাইরাসকে শুকিয়ে তার ওপর গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এক মাস ধরে এই ভাইরাসের ওপর বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং তারপর তা আলাদা করে গবেষণা করা হয়েছে যে, এ অবস্থায় কতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। এই গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা যখন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পায় তখন উল্লেখযোগ্যভাবে করোনা ভাইরাসের বেঁচে থাকার হার কমে আসে। সিএসআইআরও-এর প্রধান নির্বাহী ড. ল্যারি মার্শাল বলেছেন, করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই গবেষণা করা হয়। এতে পরীক্ষা করা হয় এই ভাইরাস বিভিন্ন তলে আসলে কতদিন বেঁচে থাকতে পারে এবং তা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের জনগণকে সুরক্ষিত রাখার একটি ভাল পথ বেরিয়ে এসেছে। আমি আশা করি আমাদের এই সমাধানের ফলে আমাদের মধ্যে যেসব বাধা বিপত্তি ছিল তা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারবো। এর মাধ্যমে ভাইরাসের হটস্পটও নির্ধারণ করা সহজ হবে। অর্থনীতিকেও সচল রাখা সহজ হবে। আমরা অস্ট্রেলিয়ান সায়েন্সকে ব্যবহার করে টিম অস্ট্রেলিয়া হিসেবে এই ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারি। কাজ করতে পারি শিল্প, সরকার, গবেষণা ও অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রিতভাবে।এদিকে মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা টিকে থাকার সময় ঠিক কতক্ষণ, তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিল জাপানের কোয়োতো প্রিফেকচুরাল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের গবেষকরা। ফ্লু ভাইরাস বড়জোড় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে মানুষের ত্বকে। অন্যান্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াদেরও বেঁচেবর্তে থাকার সময়কাল কম। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। মানুষের ত্বকে কম করেও ৯ ঘণ্টা ঘাপটি মেরে থাকতে পারে এই ভাইরাস। প্রয়োজনে তার টিকে থাকার সময়কাল বাড়িয়ে নিতেও পারে। নতুন গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন নাক ও মুখের জলকণায় ভর করে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। একে বলে ভাইরাস ড্রপলেট। এই ড্রপলেট যদি মানুষের ত্বকের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেখানেই জমে বসে যায়। সাধারণত দেখা যায়, স্কিন বা ত্বকে যে কোনও ভাইরাস বা প্যাথোজেন ঘণ্টা দুয়েকের বেশি থাকতে পারে না। ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাসও দু’ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারে না মানুষের ত্বকে। কিন্তু করোনা সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। জলকণায় থাকা ভাইরাল স্ট্রেন কম করেও ৯ ঘণ্টা বেঁচে থাকে ত্বকে। শুধু বেঁচে থাকে না, রীতিমতো সক্রিয় থাকে। এই সময়ের মধ্যে নাক, মুখ দিয়ে ভাইরাল স্ট্রেনের শরীরে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গবেষকরা বলছেন, তাই করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন হাত ধোওয়ার কথা বলা হচ্ছে। স্যানিটাইজার খুবই জরুরি। কারণ স্যানিটাইজারের রাসায়নিক উপাদান ভাইরাল স্ট্রেন নষ্ট করে দিতে পারে। জাপানি বিজ্ঞানীরা বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন মানুষের ত্বকে কতক্ষণ বেঁচে থাকে এবং এই পিরিয়ডের মধ্যে কীভাবে ছড়াতে পারে সে নিয়ে নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ ইথানলের সংস্পর্শে এলে ভাইরাল স্ট্রেন নষ্ট হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাস এত দ্রুত গতিতে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়তে পারে যে খুব কম সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ধরা যাক, কোনও কোভিড পজিটিভ রোগী থুতু, লালা বা ব্যবহারের জিনিসপত্র থেকে ভাইরাস ড্রপলেট বেডে বা মাটিতে ছড়াল, সেই ড্রপলেট পাঁচদিন বা তারও বেশি সময় টিকে থাকতে পারবে। এই সময়ের মধ্যেই বহুবার বিভাজিত হয়ে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারবে সর্বত্র। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের এই বিভাজনের হার অন্যান্য সাধারণ ভাইরাসের থেকে বহুগুণে বেশি। মসৃণ পদার্থ বা সারফেস যেমন টেবিল, বেডের হাতল বা বেড রেল, দরজার হ্যান্ডেল ইত্যাদিতে ভাইরাল স্ট্রেনের জমে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ মসৃণ পদার্থ হলে ভাইরাসের বেঁচে থাকার সময় বা ইনকিউবেশন পিরিয়ড অনেক বেড়ে যায়।
—–০ XX০—–