রোহিণী নক্ষত্রের সঙ্গে রণমূর্তির কোন সম্পর্ক আছে কিনা ঠিক জানিনা । সত্যি কথা বলতে কি বই এ পড়া ছাড়া এই নক্ষত্রের অস্তিত্ব বোধের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অস্পষ্ট । কিন্তু আজকে আর একথা বলা যাবেনা। ভাদ্র রাতে আকাশ থেকে নেমে আসে একেবারে আমার ঘরে । তখন গভীর রাত । একরাশ ক্লান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘরের সর্বত্র । বিছানার মশারিতে আকাশের কালো মেঘের মতো জমে থাকা অন্ধকার । সারা দিনে কবার পড়পড় করে নেমেছিল বৃষ্টি । তবে যতনা পড়েছিল ,তারচেয়ে পড়ার ভাবটা ছিল অনেক অনেক বেশী । কিন্তু গভীর রাত্রে চোখ ঝলসে দিয়ে ঢুকে পড়ে আমার ঘরে । মশারির সেই অন্ধকার ভেদ করে লেজার রশ্মির মতো আমার পাশে বিছানায় নেমে আসে। বিদ্যুতের সঙ্গে পাশাপাশি শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাই । তখনও মনে ছিলনা রোহিণী নক্ষত্রের কথা। চোখে তখনো ঘুমের একটা জ্যোৎস্না । রাত্রিকে বিদীর্ণ করে দিয়ে সে এক হ্যাঁচকায় আমাকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ,হুঙ্কার করে ওঠে । আমার ভিতর বাহিরের যত ইন্দ্রিয় জেগে কিংবা ঘুমিয়ে ছিল .এখন সকলেই ভীষণ ভীষণ সজাগ ।কাকে যেন পেতে চাইছে না ,আবার ভীষণ ভীষণ ভাবে পেতে চাইছেও ।সেই হাতের প্রশান্তির প্রলেপ অন্য কারোর সঙ্গে তুলনা করা যায়না। তারপর হঠাৎই দেখলাম আমার মাথাটা তার বুকের মধ্যে। আলো আর শব্দের দমকা ঝড় মাঝে মাঝে আছড়ে পড়ছে ঘরে। ইচ্ছে হলোনা জানালাগুলো বন্ধ করে দিতে ,কিংবা পর্দা টেনে দিই। একটা ভালোলাগার মদিরতায় মহুয়া আচ্ছন্নতা । বাইরে ঘন অন্ধকার । তারপর বৃষ্টি নামলো পরম মহিমায়। চরম আর পরম ‘যুগলবন্দী। দর্শককূল সম্মোহিত । সে যেন অপ্সরা আর রম্ভার ভারতনাট্যম। রাতের গাঢ় অন্ধকারে বৃষ্টি লাস্যময়। নৃত্যে ঝর্ণার শীতল এক সর পড়ে প্রকৃতিতে । ঠিক সর পুরিয়ার মতোই মনোরম । রাত্রির শরীরের গন্ধ নাসারন্ধ্রের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে শরীরের শাখা প্রশাখায় । রক্তের সঙ্গে মিশে যায় । তাতেই একটা অন্যরকম উত্তেজনা ভীষণ ভাবে অনুভব করি । আর বৃষ্টির গন্ধের মধ্য দিয়ে কেন যেন বারবার পৃথিবী মায়ের গন্ধের কথা মনে পড়ে যায় । এবং সেই গন্ধটা নিশ্চিতভাবে মা ছেলের সংযোগকারী অবিচ্ছেদ্য নাড়ি ।