হড়পা বান কি ?
শঙ্কর আচার্য্য
সহজ উত্তর – পূর্বে কোন আভাস না দিয়ে অতর্কিতে উপস্থিত হয়ে শৃঙ্খলিত জনজীবনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ভেঙে চুরমার করে দেয় যে বান, তাকেই হড়পা বান বলা যেতে পারে।
এই বান সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে সংঘটিত হয়। সমুদ্রতল থেকে প্রায় আড়াই মাইল উচ্চতায় শুরু হয় মেঘের রাজ্য। যে মেঘে বৃষ্টি হয়, সেই বাদল মেঘ জলকণাসমৃদ্ধ হওয়ায় ভারী হয়। তাই আর উপরে উঠতে পারে না। এরা সেই স্তরেই বাতাসের বেগে এদিক-ওদিক ভেসে বেড়াতে থাকে। এভাবে ভাসতে-ভাসতে কয়েকটি টুকরো মেঘ যখন সঙ্ঘবদ্ধ হয় এবং ওজনে ভারী হয় তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে একত্রে মাটিতে নেমে আসে। বায়ুস্তরের ঘনত্ব সর্বোচ্চ অসমান থাকায় এরা বিচ্ছিন্নভাবে ভূতলে নেমে আসে বৃষ্টির আকারে। পেঁজা তুলোর মতো সাদা অলক মেঘ অবশ্য আরো অনেক উঁচুতে অবস্থান করে। তবে এ মেঘে বৃষ্টি হয় না।
এ ক্ষেত্রে বলা বাঞ্ছনীয় যে মেঘের টুকরোগুলো নিজের স্তরে ভূমন্ডলের সঙ্গে কখনো অনুভূমিক, কখনো উল্লম্বভাবে ভাসমান অবস্থায় থাকে। অনুভূমিক মেঘের তুলনায় উলম্বভাবে থাকা মেঘ গুলো স্বভাবতই ভারী হয় এবং একসঙ্গে প্রচুর জল বর্ষণ করতে সক্ষম হয়। বলাবাহুল্য, ভূমি থেকে কোন মেঘপুঞ্জ উলম্বভাবে, কোনটা অনুভূমিকভাবে রয়েছে তা বোঝা যায় না।
পাহাড়ি নদীগুলির জলের উৎস হিমবাহ থেকে সমতলে নামার সময় তারা বারবার গতিপথ পরিবর্তন করে। আমাদের দেশে জল সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে দিকে প্রবাহিত হয় কিন্তু পথে যদি পাহাড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে সে আবার গতিপথ পরিবর্তনে বাধ্য হয়। পাহাড়ি নদীগুলি সারাবছর বরফগলা যা জল পায়, তাতে খুব প্রশস্ত হয়না, তবে খরস্রোতা হয়। দুই বা ততোধিক নদী একত্র হলে তবে সামান্য চওড়া হয় বটে কিন্তু খুব বেশি জল বহনে সক্ষম হয় না। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি হলে, বিশেষ করে উলম্ব মেঘ বৃষ্টি বর্ষণ করলে পাহাড়ের দূরবর্তী প্রান্তের মানুষের তা অজানাই থেকে যায়। সেই কারণে বানের অতিরিক্ত জল নদীর দুকুল ছাপিয়ে অতর্কিতে মানুষ, জীব-জন্ত, বাড়ি-ঘর এবং ফসল জমি সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জল অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এরই নাম হল হরপা বান। এতে কি পরিমান ক্ষতি, কত মানুষের প্রাণ যায় আমরা উত্তরাখণ্ডের মন্দাকিনী এবং উত্তরবঙ্গের মাল নদীর হড়পা বানের ভয়াবহ যে রূপ দেখেছি, তা সকলেরই জানা। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা অবাঞ্ছিত।
এই ঘটনার প্রতিরোধে প্রশাসনিক এবং সামাজিক স্তরের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
১) নদী খাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবেনা।
২) আবহাওয়া বিপদের সর্তকতা প্রশাসনিক স্তরে জনসাধারণকে অতি জরুরিভাবে পৌঁছে দিতে হবে।
৩) নদীর তলদেশে পলি সরাতে হবে।
৪) নদীর দুই পাড়ে মজবুত বাঁধ দিতে হবে। প্রয়োজনে বোল্ডার ফেলতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি…
প্রকৃতি আজও মানুষের কাছে অধরা। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে লড়াই তো চালিয়ে যেতে হবেই, হোক না সে মহাপরাক্রমশালী, হোক না সে প্রকৃতি…