সারাদিন..সর্বক্ষণ
– শক্তি চট্টোপাধ্যায়
যদি সারাদিন তাঁকে কাছে পাওয়া যেতো
কাছে পেতে গেলে কাছে যেতে হয়, এভাবে চলে না
হাতের সমস্ত সেরে, ধুয়ে-মুছে সংসার, সমাধি –
গুছিয়ে-গাছিয়ে রেখে, সাধে ঢেকে – তবে যদি যাও
দেখবে, দাঁড়িয়ে আছে গাছ একা দৃষ্টি ক’রে নিচু
যেতেও হয়নি তাঁকে, এসেছিলেন তিনি সময়ে
গেছেন সময়ে চলে, সেই পথে, যে-পথে যাবার ।
কবিতার অনুধ্যান:
কলমে – শ্যামাপ্রসাদ সরকার
এর আগে অনেকবার যে সমর্পণের কথা বলেছি সেটাই আবার বলতে আসা। বয়স বাড়ার এই এক সমস্যা…সেই চর্বিত চর্বণ..আর কী!
কিন্তু তাও বলবো, যত দেখছি বা যা দেখেছি সেখানে বুঝেছি সমর্পণই শেষকথা। আরো ভালো ভাবে বললে প্রতিদানকে তুচ্ছ করেই সেই অনাসক্তির সমর্পণ বলতে হয়। এখানে যেমন শক্তি’বাবু বলছেন,
” যদি সারাদিন তাঁকে কাছে পাওয়া যেতো/ কাছে পেতে গেলে কাছে যেতে হয়, এভাবে চলে না/হাতের সমস্ত সেরে, ধুয়ে-মুছে সংসার, সমাধি/গুছিয়ে-গাছিয়ে রেখে, সাধে ঢেকে – তবে যদি যাও…”
আসলে এই ” যাওয়া তো নয় যাওয়া ” টিতেও যেতে হয় প্রস্তুতি নিয়ে “হাতের সমস্ত সেরে..”! এই যে ঐহিকের এক বিপুল পিছুটান যেন ; যাকে অস্বীকার করেননি কোনও নরকল্প মহিমাময়ও। তাই তো শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন সারদামণির জন্য ‘ডায়মন্ড কাট’ বালা যোগাড় করেন আর শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর দারুমূর্তি আর পাদুকা দিয়ে যান ঘরণী বিষ্ণুপ্রিয়াকে, ঠিক তেমন !
তাইতো আমাদের কোথাও না কোথাও পৌঁছে শেষমেশ যবনিকা টানতেই হয়। থেমে যেতে হয়….তার আগে চিনে নিতে হয় সব সাধনার ধারাটিকেই।
নির্মোহের অরুণরাগে রাঙা হয়ে খুঁজে নিতে হয় সেই পরমজ্ঞান।
“দেখবে, দাঁড়িয়ে আছে গাছ একা দৃষ্টি ক’রে নিচু
যেতেও হয়নি তাঁকে, এসেছিলেন তিনি সময়ে
গেছেন সময়ে চলে, সেই পথে, যে-পথে যাবার”
আজ আবার স্বাধীনতা দিবসের হীরকজয়ন্তী! সেই অধীনতা যা “স্ব” অর্থে প্রকৃত ‘আমি’-টির আত্মবোধকে জাগিয়ে তুলুক ভেদাভেদ ও বৈষম্যবোধের চরম বিপরীতে নিয়ে গিয়ে।
তবেই তো হবে সেই সমর্পণ!
তাহলে আজ আসুক সেই ‘ আত্মানাং বিদ্ধি’ র প্রকৃত পাশহীন সজীবতা।
(এরপর ক্রমশঃ…)