নীতি আয়োগ জানিয়ে দিলো দেশের ২১টি শহরের মাটির নিচের জলস্তর আগামী কিছু বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে এবং যার প্রভাব পড়বে ১০ কোটি দেশবাসীর ওপর। নীতি আয়োগের সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ পানীয় জল পাবেন না। ২০২০ সালে ভূগর্ভস্থ জলস্তর শেষ হয়ে যাবে যে ২১টি শহরে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ প্রভৃতি। জানা গেছে ইতিমধ্যেই চেন্নাই শহরের জলের যোগান দেওয়া চারটি বড় জলাধার সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে উল্লেখযোগ্য তিনটি নদী, ছটি জঙ্গলও। সরকার এবং সাধারণ মানুষ দু তরফেরই দায়িত্ব জল সংরক্ষণ করার। জল সংরক্ষণ করে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো দ্রুত প্রয়োজন। তিনি আরও জানিয়েছেন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ খুব একটা কঠিন কাজ নয়। এটা খুব খরচসাপেক্ষও নয়। অধ্যাপক মনোহর জানান – ২০০৩ সাল থেকে তিনি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানোর কাজ করছেন। ইতিমধ্যে চেন্নাই, মহারাষ্ট, রাজস্থান, গুজরাট ও কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যে অস্বাভাবিক জলসংকটে নাজেহাল বিপুল সংখ্যক মানুষ৷
জল বাঁচানোর কিছু সহজ পন্থা:
১) শাওয়ারে স্নান করলে অহেতুক প্রচুর পরিমাণে জলের অপচয় হয়। বালতি ও মগের সাহায্যে স্নান করুন। পরিবারের সদস্য়দের মাথাপিছু এক বালতি জল বরাদ্দ রাখুন।
২) ঘরের মেঝে মোছার আগে ভাল করে ঝাঁট দিয়ে নিন। এতে মোছার সময়ে কম জল লাগবে।
৩) এসি থেকে যে বের হওয়া জলের পরিমাণ কিন্তু নেহাত কম নয়। এসির যে অংশ দিয়ে জল বের হয়, সেখানে পাইপ লাগান। পাইপের অপর মুখে একটি বালতি বা বড় বোতল রাখুন। গাছে দেওয়ার জন্য সেই জলই ব্যবহার করুন।
৪) গাছে জল দিন বালতি ও মগে করে। পাইপে করে জল দিলে অহেতুক অতিরিক্ত জল নষ্ট হয়।
৫) আনাজ ধোওয়ার সময়ে বড় গামলা বা বালতি ব্যবহার করুন। বাড়ির উঠোন ধোওয়া বা বাগানের গাছে সেই জল ব্যবহার করুন। মাছ ধোয়ার জলও গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। গাছের জন্য খুবই উপকারি এই জল। ফল পাবেন কয়েক দিনেই।
৬) বৃষ্টির সময়ে ছাদের রেন পাইপের তলায় ড্রাম বসিয়ে রাখুন। পশ্চিমী দেশে এভাবে অনেকেই জল সংরক্ষণ করেন। এই জলই পরে গাছে জল দিতে বা বারান্দা, উঠোন ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ছাদ পরিস্কার থাকা প্রয়োজন।
৭) সম্প্রতি রাজস্থানের বিধানসভায় জল বাঁচাতে এক নয়া নিয়ম চালু হয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভায় জল চাইলে আধ গ্লাস জলই প্রথমে দেওয়া হবে। সেটা শেষ করলে তবেই আরও আধ গ্লাস জল দেওয়া হবে। আপনার বাড়িতেও মেনে চলতে পারেন এই রীতি। এতে পানীয় জলের অপচয় কমবে।
৮) যতটা সম্ভব হাতে কাপড় কাচুন। মেশিনে কাচলে জল বেশি লাগে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না।
৯) দাড়ি কাটা, কাপড় কাচা বা বাসন ধোওয়ার মতো কাজের সময়ে অনেকে কল খুলে রেখে দেন। সেই বিষয়ে সচেতন হোন। প্রয়োজনের বাইরে কল খোলা রাখবেন না। প্রতিটি কলের মুখ যাতে টাইট থাকে, সে দিকেও নজর দিন।
১০) বাড়ির জলের ট্যাঙ্কের জল উপচে পাইপ দিয়ে জল পড়তে থাকে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে জল নষ্ট হয়। এর জন্য বিশেষ অ্যালার্ম পাওয়া যায়। ট্যাঙ্ক ভর্তি হয়ে গেলেই বাজবে সেই অ্যালার্ম।
১১) রাস্তা থেকে যারা পানীয় জল নেন তারা অনেক সময় বালতির পরিবর্তে পানীয় জলের সরু মুখের বোতল ভর্তি করেন তাতেও প্রচুর জল নষ্ট হয়।
১২) সকারবেলা হলেই গৃহস্থের বাড়ির লোকেদের দরজার সামনে ঝপাঝপ পানীয় জল ঢালতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে কেউবা পাইপ লাগিয়ে রাস্তা ধুতে শুরু করেন। এছাড়া ধুলোবালি থেকে বাঁচার জন্য মেইন রাস্তার পাশে দোকানদার তাদের দোকান খুলেই অযাচিত জল ব্যবহার করেন রাস্তা ধোয়ার জন্য। এক্ষেত্রে সামান্য জলের ছিটে দিয়ে ঝাড়ু দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সময় খুব অল্প, নিজেও পস্তাবেন এক বোতল জলের জন্য। হয়তো আপনি ভাবছেন আপনার এলাকায় কিছু হবে না কিন্তু আপনি জানেন না যেকোনো দিন আপনার জলের পাইপলাইন এ কালো জল আসতে শুরু করে দিলো। কখন যে একফোঁটা জলের জন্য পস্তাতে হবে কেউই জানে না। তাই অযথা জল নষ্ট করবেন না। রাস্তায় অনেক সময় ভাঙা কল থেকে প্রচুর জল নষ্ট হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে। বালতি জল এক ব্যক্তির স্নানের জন্য যথেষ্ট তাই অযথা শাওয়ারে স্নান করে জল অপচয় করবেনা। বাতরুমে অযথা জল অপচয় করবেন না। কলের জলে গাড়ি ধোবেন না যতটা পারবেন পুকুরের জল বা জলাশয়ের জল ব্যবহার করুন। কারন মাটির তলায় জল একবার উঠে এলে আর ফেরানো যায় না তাই সময় থাকতে ভাবুন জল অপচয় বাচান পরিবেশ কে রক্ষা করুন।।
—০০০::XX::০০০—
