করোনা সংক্রমণের মধ্যেই এবার আতঙ্ক বাড়াচ্ছে জোড়া ভাইরাসের হানা। প্রথমটি হল ব্রুসেলোসিস। ইতিমধ্যেই চীনের ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে এই ব্রুসেলোসিস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা গেছে। দ্বিতীয়টি ক্যাট কিউ (Cat Que) ভাইরাস। সেদেশে ৮০০-র বেশি পরীক্ষা করে দুজনের শরীরে এই ক্যাট কিউ ভাইরাসের হদিশ পাওয়া গেছে।
ব্যাকটেরিয়া ব্রুসেলোসিসে মৃত্যুর হার ২%। গবাদি পশু থেকেই এর সংক্রমণ হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞরা করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন।
চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩,২৪৫ জন। পশুর দেহ রস থেকে সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হয়ে থাকে। দুগ্ধ পণ্য, দূষিত বায়ু, যৌন সম্পর্ক, ব্রেস্ট ফিডিংয়েও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এর উপসর্গ হল, জ্বর, গাঁটে ব্যথা, দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, মাথাব্যথা, ঘাম হওয়া প্রভৃতি।
কিউলেক্স মশা ক্যাট কিউ ভাইরাসের বাহক। চীন ও ভিয়েতনামে শুকরের মধ্যেও এই ক্যাট কিউ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। কর্নাটকে দুই রোগীর মধ্যে ক্যাট কিউর জীবাণু পাওয়া গেছে। হালকা জ্বর, মেনিনজাইটিস, শিশুদের এনসেফ্যালাইটিস ক্যাট কিউট ভাইরাসের উপসর্গ। বিপদের নাম চিন। হুমকির নামও চিন। কারণ, যে ভাইরাস নিয়ে আইসিএমআর সতর্ক করেছে সেটি চিনেরই। নাম ক্যাট কিউ ভাইরাস (Cat Que virus) , সংক্ষেপে CQV। নামে ক্যাট থাকলেও বিড়ালের সঙ্গে এই ভাইরাসের সম্পর্ক নেই। করোনাভাইরাস নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই হিমশিম খাচ্ছে ভারত। আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে বাকি দেশগুলিকে পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ সংক্রমণ তালিকায় দ্রুত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। যে হারে সংক্রমণ বেড়েছে সেই অনুপাতে মৃত্যু কম হলেও এক লক্ষের কাছাকাছি মৃত্যু খুব কম নয়। যদিও, আমেরিকা ও ব্রাজিলের পাশে এই মৃত্যু কমই। কিন্তু, ঘটনা হল, সংক্রমণ রোখার রাস্তা কিন্তু খুঁজে পায়নি ভারত। এখনও রোজ গড়ে ৭০ হাজারের উপর নয়া আক্রান্ত হচ্ছে। মাঝে সংখ্যাটা ৯০ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল। সংকটের এহেন পরিমণ্ডলে এ বার নয়া এই চিনা ভাইরাস ভারতের দরজায় টোকা মারছে।
মহারাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (NIV)-র একটি গবেষক দল কেন্দ্রকে এরই মধ্যে ক্যাট কিউ ভাইরাস (CQV) নিয়ে অ্যালার্ট করেছে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চে (ICMR) গবেষণার বিশদ প্রকাশিত হয়েছে। NIV-র বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, চিন থেকে নয়া এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আইসিএমআর সূত্রে জানা গিয়েছে, মশার কিউলেক্স (Culex) প্রজাতির মধ্যে এই ক্যাট কিউ ভাইরাস থাকে। চিন ও ভিয়েতনামে শূকরের মধ্যেও এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। ইনস্টিটিউশনাল এথিক্স কমিটির পূর্ব অনুমোদন নিয়ে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এ নিয়ে গবেষণা চালায় আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি।আইসিএমআর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চিনের মতো ভারতে কিউলেক্স মশার অনুরূপ প্রজাতি থাকায় মশার মধ্যে এই ভাইরাসের প্রতিলিপি গঠনের বিষয়টি তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন। যে কারণে এখন আরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার প্রয়োজন বলে আইসিএমআর জানিয়েছে। নয়া ক্যাট কিউ ভাইরাসটি কতটা প্রাণঘাতী, করোনার মতো বিপজ্জনক কি না, সংক্রামিত হওয়ার লক্ষণই বা কী– এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিশদ কিছু জানা যায়নি।
<÷><÷><÷><÷>