পরিধী ও ধান এর নতুন বিয়ে । একটা এক কামড়ার ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে স্বর্গ ছিল । ধান তখন ডাক্তারী পাশ করে সবে প্রাকটিস শুরুকরেছে । প্রতি দিন পরিধী বলে , বড্ড চুলে জট । আমি কেটে ফেলব। ধান চিরুনী নিয়ে আসে , আর দুজনে হেসে লুটোপুটি । সারা রাত জেগে জেগে ওরা গল্প করত । সবে কুড়ি পেরিয়েছে পরিধী । পাড়ার লোকের নিন্দা ওদের নিয়ে । শ্বশুর বাড়িতে ও বরন করা হয় না ওদের । মেয়েটা বড্ড গরীব , নিচু জাতের । এক বাদলা রাতে পরিধীর তখন জঠোর যন্ত্র না । কাতরাচ্ছে । সারা পোয়াতি সময়কালীন নিজে রান্না করেছে , জল তুলেছে । খুব খিদে পেত যখন বিস্কিটের ডাব্বা নিয়ে আসত । এত টুকু ও যত্ন পায়নি । ধানের সামান্য আয়ে , তখন দামী নার্সিং হোম নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । ওরা স্বপ্ন দেখছে , সন্তান আসলে তাকে নামী দামী স্কুলে পড়াবে । জমিয়ে রাখছে টাকা । সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেল । এদিকে ডাক্তার বলছে , সিজার করতে হবে । সারা রাত ব্যথা খেয়েছে মা । মাত্র কয়েকটা টাকা বেশি খরচ হবে । ওরা রাজী হল । কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে কাপুনি দিয়ে অদ্ভুত জ্বর ,শ্বাস কষ্ট পরিধীর । ধান এর বুক ফেটে যাচ্ছে । দৌড়ে বেড়াচ্ছে সমস্ত করিডোর । এই মাত্র মায়ের স্তন পান করে কত নিশ্চিতভাবে ঘুমিয়ে আছে । আবার কাদছে খিদে পেয়েছে সদ্যোজাত র । অনেক পরে মা মেয়েকে , নিয়ে ফিরল সেই স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে । অমন ফুটফুটে মেয়ের মুখ দেখে পরিধীর মায়ের মন আটখানা । শ্বশুর বাড়ি তে ও খুশির বন্যা । কিন্তু পরিধী মরা মানুষের মত পড়ে রয়েছে । আসলে , বড্ডো অভিমানী ছিল সে । মানষিক টানাপোড়েন চলেছে অনেক । অনেক মানুষের থেকে আঘাত , ঈর্ষা , রাজনীতি সেই পোয়াতিকালীন সময় । একেবারে চুপচাপ হয়ে যায় সে জীবনে ।এভাবে বছর দুয়েক কাটল । মন্দিরে বসে আছে , পরিধী । এক ভদ্র লোক এক ভাবে তাকিয়ে আছে । কথা বলতে চাইল । পরিধীর অল্প কথায় লোকটির মনে মায়া জন্ম নিল । তারপর ওরা প্রায় রোজ কথা বলে চলেছে । বহুদিন পরে পরিধী জানতে পারল , উনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী । উনি ওনাদের দরিদ্র ঘরে এসে একদিন পরিধীর হাতের রান্না খেয়ে , আন্ত রিকতায় আপ্লুত । পরিধীকে ভালোবাসতে শুরু করেন । ওনার একাকী জীবনে পরিধী ছিল প্রদীপের আলো । পরিধীকে সাহস দেন , শক্ত হয়ে ওঠো । পরিবারের যত্ন নাও । তুমি তো মা ! এদিকে ধান জীবনে অনেক দূর পৌছাতে ছুটেই চলেছে । সে দিন ও সানাই বেজেছিল , পরিধী হলুদ শাড়ী পড়ে প্রতি দিন নাটমন্দিরে । অনেক বারন থাকা সত্ত্বেও সেই ভদ্রলোক একটি রেডিও পাঠিয়েছিল । পরিধীর মেয়ের হাত থেকে পড়ে ভেঙে গিয়ে ও চলতে থাকে । পরিধীর ও একাকী জীবন । কেউ কাছে নেই । সব কথা সেয়ার করত । ” চিন্তা করছ কেন মেয়ের পড়াশুনোর জন্য ।” পরিধী বলল , আমার তো কিছুই পড়াশুনো হল না । ” আচ্ছা , তুমি চলে এসো আমেরিকায় মেয়েকে নিয়ে ; আমি পড়াব । যতদূর ইচ্ছে তোমার মেয়ের পড়বে । তোমার দুচোখে জল পোছো । রেডিও এয় গান বেজে ওঠে , ” সাওয়ান কি মাহিনা পবন করে শোর । “