সমুদ্রের সেই দিনগুলি (বিংশতি পর্ব)
শিবপ্রসাদ হালদার
২৪শে অক্টোবর ২০১৯ নাতনি ‘শ্রীনিকা’র জন্মদিনের অনুষ্ঠান সেখানেই অনুষ্ঠিত হল।জন্মের পর থেকেই সেখানে CHILD SPECIALIST ডাক্তার দেখানো হচ্ছে সেই সূত্রেই ভ্যাকসিন সহ অন্যান্য চিকিৎসার জন্য সেখানেই থাকতে হয়েছে।মাঝে মধ্যে কিছু দিনের জন্য এসেছে এখানে।দিব্যি থেকেছে ভালই।কিন্তু তবুও তার মাঝে যদি কখনও শারীরিক অসুস্থতা অনুভব হয়েছে তখন সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে যেতে হয়েছে তার দিদার কাছে।জন্ম থেকেই সেখানে যে চাইল্ড স্পেশালিস্টের কাছে চিকিৎসা হয়ে আসছে সেই চিকিৎসকের পরিবর্তন ঘটানো আমরা কেহই চাইনি।তাই বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হয়েছে।সেই থেকেই তাকে হোতে হয়েছে ঠাম্মি ও দাদানের কাছে সর্বদা থেকে,পরম স্নেহ প্রাপ্তিতে বেশী সময়ই বঞ্চিত।ঠাম্মিও দাদানের কাছ থেকে সর্বদাই যে স্নেহ যত্ন নাতি পুতিদের প্রাপ্য সেই ন্যায্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিতাবস্থায় হয়েছি ব্যথিত।এই ছোট্ট বয়সে তার প্রতি সেবা যত্ন করতে হয়েছে তার দিদাকে।এইজন্য ঠাম্মিকে অনেক সময় বলতে শুনেছি,”কার কর্ম আজ কে করছে-!”কোলে পিঠে করে তাদের আদর যত্ন করতে পারিনি বলে বেশিরভাগ সময়েই আমরা পেয়েছি দুঃখ।কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তা মেনে নিতে হয়েছে।কারণ বাড়ি ফেলে সেখানে গিয়ে পারিনি বেশি দিন থাকতে।তবুও রক্তের টানে বারেবারে গিয়েছি ছুটে।মাঝে মাঝে তারাও এসেছে সময় করে দু’চার দিনের জন্য।এমনি করেই এই ব্যথা বুকে চেপে কেটেছে দিনগুলি।আর ছেলে? সে তো পিতা হয়ে পিতৃত্বের যন্ত্রণায় করেছে ছটফট। প্রতিদিন করেছে ভিডিও কলিং।ছবি দেখে দেখে গড়ে উঠেছে সন্তানের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক।আর এমনই পরিস্থিতির মাঝে ওদিকে বেশ কিছুদিন যাবত শীপের কয়েকজন কুচক্রী ক্রিউর ঈর্ষায় গ্রুপ বাজিতে শুরু করে,ছেলের কিছু কাজ কর্মের বিরোধিতা।দিনে দিনে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।আমায় জানালে চিন্তিত হব তাই আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি।আমিতো জানি-বড্ড চাপা ছেলে সে!তবুও অবশেষে বৌমার মাধ্যমে যখন আমি এই সংবাদ পাই তখন সঙ্গে সঙ্গেই আমিও সচেষ্ট হলাম।এমতাবস্থায় তখনই ক্যাপ্টেনের সাথে কথা বলে পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বাধ্য হব-এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম।এমনটা জানাবার পর সাময়িক দু-একদিনের জন্য সামান্য পরিবর্তন হলেও তা স্থায়ী হয়নি।অবস্থার উত্তরোত্তর অবনতি হতে থাকে।গ্রুপ বাজিতে উদ্ভূত অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হলে ছেলে তখন প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ করতে থাকে।তবে যেখানে যত যাই হোক না কেন সে কোনদিনও বিনা অপরাধে কোথাও হার মানতে শেখেনি।ঠিক এই সময়ে বৌমা কোম্পানির HEAD OFFICE DUBAI এবং SINGAPORE এ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট মেইল ক’রে পরিস্থিতির পূর্ণ বিবরণে তীব্র ক্ষোভ জানায় এবং সেই অভিযোগ,মেইলের মাধ্যমে কোম্পানির পাঁচটি অফিসে ফরওয়ার্ড করে দেওয়া হ’ল।এই মেইল পাবার পর কর্তৃপক্ষ তখন নড়ে চড়ে বসে।নির্দিষ্ট সময় ধার্য করে বৌমার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন হেড অফিস সিঙ্গাপুর থেকে ITM এর MD MR. ANIL CARIPPA.বড্ড অমায়িক ব্যবহার ও সজ্জন ব্যক্তি তিনি।এক ঘন্টাকালীন উভয়ের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচিত আশ্বাসে বৌমা অত্যন্ত খুশি হল।ওদিকে শীপের আভ্যন্তরীণ এহেন অশান্ত পরিবেশের কথা হেড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পেরে হয়ে উঠলেন প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।তারপরেই ক্যাপ্টেনের উপর হেড অফিস থেকে আসে কড়া বার্তা।শেষ পর্যন্ত ভেকধারী কিছু কুটীল ক্রিউ যারা এই কুলেও আছে আবার ওই কুলেও আছে তারা সবাই হয় ধরাশায়ী। হেড অফিসের চরম বার্তায় অনেকেই চাকরি হারাবার ভয়ে যায় চুপসে।মুষ্টিমেয় নিন্দিত সেই দুর্জন ক্রিউদের আস্ফালিত আস্ফলনে মুহূর্তেই এসে পড়লো শৈথিল্য।আর তখনই শীপের পরিস্থিতি একদিনের মধ্যেই বদলে গিয়ে হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।তখন ওরা ছেলের সাথে কম্প্রো মাইজ করে চলতে থাকে।তারা এবার সহজেই বুঝে গেল চিপ কুকের সঙ্গে অনৈতিক ভাবে বিরোধিতা করে জয়ী হওয়া একদম অসম্ভব।
এই সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণে সবার মনে বিরাজ করছে এক চরম আতঙ্ক তবুও তার মাঝে চলেছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত। এই সময়ে যখন পোর্টে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকিং পেটি এসেছে তখন তা ক্রেনের সাহায্যে শীপে নামিয়ে প্রকাশ্যে স্যানিটাইজার করে কয়েক ঘণ্টা রৌদ্রে রেখে তারপর আনা হয়েছে স্টোরে।বাইরে থেকে কোন ব্যক্তিকে সংক্রমণের ভয়ে শীপে উঠতে দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন প্রত্যেক ক্রিউর টেম্পারেচার সহ অন্যান্য পরীক্ষার রিপোর্ট পাঠাতে হয়েছে হেড অফিসে। ক্রিউরা যাতে কোনভাবেই করোনায় আক্রান্ত না হয় সেদিকে হেড অফিস কড়া নজরদারি চালিয়েছে।২৩শে জুন ২০২০ ছেলের মেইলে জানতে পারলাম এই সময় সকল ক্রিউদের প্রবল চাপে কোম্পানি সকলের সাইন আপের তোড়জোড় শুরু করেছে।ইতিমধ্যেই কোন কোন ক্রিউর নয় মাসের চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে এক বছরেরও বেশি হয়ে যায়।দীর্ঘদিন শীপের মাঝে এইভাবে থাকতে থাকতে সকলে ধৈর্য হারিয়ে ফ্যালে।প্রত্যেকে বাড়ির সাথে যোগাযোগ ক’রে,কে কেমন আছে,অনবরত খোঁজখবর নিতে থাকে।তার মাঝে এই বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের ছোবলে অনেক আপন জনের বিয়োগান্তের সংবাদে তারা হয়ে উঠেছে শোকাস্তব্ধ।বিশ্বব্যাপী করোনার বাড় বাড়ন্তের মাঝে নানান দুশ্চিন্তায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে ল্যাপটপ খুলে দেখেছে সংরক্ষিত ছবিগুলি।পিতৃত্বের যন্ত্রণায় যেমন আমরা করেছি দুশ্চিন্তায় ছটফট ঠিক তেমনি ভাবে ছেলেও বাবা হয়ে,সদ্যজাত সন্তানের জন্য হয়েছে বড্ড ব্যাকুল!রক্তের টানে এমনটাই তো হওয়া স্বাভাবিক!মন মানেনি তাই অবসর সময়ে ল্যাপটপ খুলে করেছে স্মৃতি রোমন্থন!প্রত্যেক ক্রিউদের বেলায় এমন পরিস্থিতিতে সবারই এই একই অবস্থা।কারোও মন কিছুতেই মানতে চাইছে না।যদিও সকল ক্রিউদের সুরক্ষার তাগিদে কোম্পানির সজাগ দৃষ্টিতে চলেছে প্রতিনিয়ত নানান রকম তদবির।সাইন আপের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করলেও করোনার আবহে কোম্পানি তাতে অপারগ হয় তবুও চলতে থাকে নানা রকম প্রস্তুতি।এই সময়ে অন্য কয়েকটি কোম্পানিও এই একই পরিস্থিতিতে ঠিক এমনই চাপের মুখে পড়ে।এমতাবস্থায় V SHIP’S অন্যান্য ঐ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ ক’রে চ্যাটার্ড বিমানের ব্যবস্থা করে।কিন্তু তখনকার ওই সময়ে অনেক দেশের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল করোনার দ্রুত সংক্রমনের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।তবুও স্বল্প সংখ্যক ফ্লাইট মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের মধ্যে চালু ছিল।V SHIP’S কোম্পানিও তখন তড়িঘড়ি ক্রিউদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন করাবার জন্য ব্যবস্থা নেয়।সেইমত মতো ৬ই জুলাই ২০২০ রাত আড়াইটায় ইয়েমেনের পোর্ট থেকে শীপে করেই আফ্রিকার দিজুবুটি পোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।ওখান থেকে আসবে দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।সেখান থেকে রাত ১২:০৫ মিনিটে ফ্লাইট। ঐ সময়ে দিজুবুটি এয়ারপোর্ট পৌঁছে ভিডিও কল করে সেখানকার সকল দৃশ্য আমাদের দেখালে,না দেখা এইসব দৃশ্যে আমরা অত্যন্ত খুশি হলাম। দীর্ঘদিন পর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে সেই আনন্দে আমরা হয়ে উঠলাম উল্লাসিত।১০ই জুলাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি রাত ১২ টার পর,ছেলে পর পর তিনটি মিসডকল দিয়েছে কিন্তু মোবাইলের সুইচ অফ থাকায় তখন আর যোগাযোগ করতে পারিনি।পরে ফোন করে জানতে পারি ভোর পাঁচটায় ওরা দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে এবং দোহা থেকে মুম্বাইয়ের ফ্লাইট ঐ দিনই সন্ধ্যা ৭ টা ৫ মিনিটে।এই দীর্ঘক্ষণ এয়ারপোর্টেই তাদের অপেক্ষা করতে হবে।তারপরেও নির্ধারিত ফ্লাইট ছাড়তে অনেক বিলম্ব হাওয়ায় সেদিনই রাত দেড়টায় এসে মুম্বাই এয়ার পোর্টে পৌঁছায়।এই সময়ে করোনার বাড় বাড়ন্তে ১১ই জুলাই ২০২০ ফ্লাইট মুম্বাই বিমান বন্দরে অবতরণের সাথে সাথেই কোম্পানির এজেন্ট সকল ক্রিউদের সাথে যোগাযোগ করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সোজা বিলাসবহুল ITC MARATHA HOTELএ নিয়ে যায়।এবং সেখানে তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা রুমের বরাদ্দ করা হয়।এই সময়ে বদ্ধ ঘরে একাকী যেন কিছুতেই সময় কাটতে চায় না। রুমে বসেই জানলা দিয়ে প্রাণ ভরে উপভোগ করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।প্রস্তাবিত করোনার বিধি নিষেধে কেউ যেতে পারেনি সহকর্মীদের রুমে গিয়ে দেখা করে সামান্য টুকু কথাও বলতে। তবে বিভিন্ন বিধি নিষেধের মাঝেও পেয়েছে প্রতিদিন উন্নত পরিষেবা।কোম্পানির নির্দেশ মতো সেখানে সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর করোনা টেস্ট করা হবে। নির্ধারিত সময়ের পর মেডিকেল টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট পেলেই তবে কলকাতায় আসার ব্যবস্থা কোম্পানিই করে দেবে। দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিনে দিনে মন হয়ে ওঠে প্রচন্ড উদগ্রীব।তখন কোন ক্রিউর বাড়ি ফিরতে যেন তর সইছে না।হোটেলে সাত দিন অবস্থানের পর করানোর জন্য নির্ধারিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলো।তখন সবাই শুধু রিপোর্টের অপেক্ষায়।অবশেষে রিপোর্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসায় সবাই তখন খুশি। কোম্পানির তরফ থেকে ছেলের টিকিটের ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঠিক তখনই জানা গেল,করোনার সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তখন মুম্বাই থেকে কোন বিমানকে কলকাতায় অবতরণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।এই সময়ে ইতিমধ্যে বৈদেশিক বিমান কলকাতায় অবতরণের ফলে কলকাতায় করোনার সংক্রমণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।তাই অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় মুম্বাই থেকে কলকাতার ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।তবুও ওই সময়ে তখনকার মত ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু ছিল।কিন্তু করোনার দ্রুত সংক্রমনের ফলে যেকোনও মুহূর্তেই এই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাই সঙ্গে সঙ্গেই কোম্পানি,ছেলের জন্য মুম্বাই থেকে ব্যাঙ্গালোরের টিকিট এবং ব্যাঙ্গালোর থেকে সোজা কলকাতার টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয়।তখন এ কথা শুনে ছেলের মনেও এক আশঙ্কা জমে উঠেছে কখন বুঝি এই ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যায়!ঐ দিন তখনও এই ফ্লাইট চালু ছিল।সেই মত আমাদের জানালে ১৬ই জুলাই ২০২০ তারিখে বৌমা বাটা থেকে তাদের মারুতি নিয়ে সোজা এয়ার পোর্টে চলে আসে এবং কলকাতায় অবতরণের পরেই যথাসাধ্য করোনার বিধি-নিষেধের মান্যতা দিয়ে সোজা বাড়িতে এসে হাজির হয়।ওই দিন রাতেই জানতে পারি ব্যাঙ্গালোর থেকে এই ফ্লাইট আসার পর পরই আর কোনও বাঙ্গালোর থেকে আগত বিমানকে কলকাতায় অবতরণের অনুমতি দেয়নি।শীপে থাকাকালীন ছেলে প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের বাড়িতেই একটা ঘরে কোয়ারেন্টিনেই থাকবে।কিন্তু পরবর্তীতে বৌমার সাথে বারবার আলোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত বদল করে সিদ্ধান্ত নেয়-ছেলের শ্বশুর বাড়িতে তিনতলায় একটি ঘরে এই সময়ে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে সুরক্ষিত থাকা সহজ এবং নিরাপদ হবে।এই ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবে।এই ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চাইলে নিরাপত্তার খাতিরে তাতে আমি আর অমত করলাম না।অবশ্য যখনই কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখন আমাকে ও তার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করেই সেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে।বিশেষ করে মাতৃভক্ত সেই ছেলেবেলার খোকা আজও মায়ের প্রতি উপযুক্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করে না।এই সময়ে আমরা এ বিষয়ে বাড়িতে দুজনে অনেকটা আলোচনা করলাম।সব থেকে ছোট নাতনির সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই এমতাবস্থায় এমনটা করতে হয়।সেইমত সেই সন্ধ্যায় বাড়ি এসেই ঘরে না ঢুকেই বারান্দার সিঁড়িতে ভর করে প্রণাম করে হয়তো তার মনের কথা ব্যক্ত করে পেল পরম তৃপ্তি!মায়ের হাতের এক কাপ চা খেয়েই বেরিয়ে গেল শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।
ছোট্ট নাতনি তো জন্মেই বাবাকে চাক্ষুষ দেখবার সুযোগ পায়নি!তবে বাবার পরম তৃপ্তি লাভের আশায় হয়েছে বিভিন্ন সময়ে ভিডিও চ্যাটিং।ক্রমাগত চ্যাটিং- য়ের মাধ্যমে নাতনির মুখে আস্তে আস্তে উঠেছে বুলি-বা-বা , কখনো পা-পা,মা-মা- দা -দা-।অধীর আগ্রহে বাড়িতে ঢুকেই প্রথম দর্শনেই মন চাইলো যেন কোলে তুলে নিতে কিন্তু করোনার ভয়ে কড়া অনুশাসনকে মান্যতা দিয়ে রইল তার থেকে অনেকটাই সরে।সকলের সাথে দূরত্ব বজায় রেখেই সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাঝে কথাবার্তা শেষ করে উঠে গেল তিন তলায় নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন রুমে।অবশ্য যদিও মুম্বাইতে করোনা টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় সংক্রমনের তেমন কোনো ভয় ছিল না।তবুও সাবধানতার খাতিরে এই ব্যবস্থাই তাদের নিতে হল।এই সময়ে তিন তলায় নিরিবিলি নির্জন রুমে বসে বসে শুধু মনে পড়তে লাগলো ফেলে আসা বিগত দিনের সমুদ্রের সেই দিনগুলির কথা—–