তখন শিমূলের তেইশ বছর বয়স। স্টোভে ভাঙাচোরা একটা হাঁড়িতে ভাত ফুটছে। পরনে আকাশি রঙের ছাপা শাড়ি আর লম্বা বিনুনি। এম। এ। পাশ করেছে। আশানুরূপ ফল হয়নি যদিও, প্রাইভেট টিউশনির সাথে যুক্ত। চেষ্ঠা করে দু একটি কলেজে পার্ট টাইম পড়াবার সুযোগ ও পেয়েছে। কিন্ত প্রত্যেকটাই অনেক দূরে। অসুস্থ প্যারালিসিসে আক্রান্ত বাবাকে ফেলে রেখে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। উপযুক্ত মেয়ে, শ্যামলা, দেখতে ও মন্দ নয়। বিবাহের জন্য অনেক সম্বন্ধ আসছে। অনেকে প্রস্তাব ও জানাচ্ছে। কিন্ত শিমূলের সাথে এক ইঞ্জিনিয়ারের ভালোবাসার সম্পর্ক। অথচ এ সম্পর্ককে মেনে নিতে চায় না শিমূলের বাবা। কারন পুরুষটি নেশাগ্রস্ত। ইতি টানল শিমূল বাবার কান্নায়। বন্ধূত্বের সূত্রে দিল্লীতে চাকরিটা পাকাপাকি হওয়া সত্বেও যেতে পারল না। তখন নিরুপায় এক বন্ধুর কাছে দশ হাজার টাকা ধার চাইল, তাই দিয়ে শাড়ির ব্যবসা শুরু করল। এই সূত্রে তাকে মাঝে মধ্যেই এক বেলার জন্য বোলপুর যেতে হয়। সেখানে এক শিল্পীর সাথে তার পারষ্পরিক নির্ভরতা গড়ে ওঠে। দুজনে মিলে নতুন জীবন শুরু করে। অথচ শিমূলের একটি অটিস্টিক ছেলে জন্মাল। তুমুল ঝড় আর অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। অনেক লড়াই সামলে ছেলেকে ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এম। এস। সি। পাশ করাল । পিয়াস ভালো গান গায়। অথচ অরিত্র সামাজিক ভাবে লড়াই করতে পারছে না। এদিকে স্বামী বহুদিন যাবৎ অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। একতলা বাড়ির একটা ভাঙাচোরা ঘরে তার যাপন। একটা তারবিহীন টেলিফোন একমাত্র স্মৃতি সম্বল। যাহোক কিছু সামান্য টাকা পেল ঘরটির বিনিময়ে। অজস্র বই সাথে। বইগুলো নিয়ে একটি আশ্রমে ঠিকানা বদলে ফেলল। সেখান থেকে শিমূলের ছেলে সামাজিক নিরাপদে অনলাইনে বিদেশের কলেজে পড়ায় আর লেখালেখি করে। শিমূল ও লিখত কিন্ত ডায়েরিতে। শিমূলের ছেলে অরিত্র সেই লেখাগুলো সম্পূর্নতা দিল। টেলিফোনের তারে অতীতের সংঘর্ষ পূর্ন অনিশ্চিত অশ্বথ্ব গাছটি যেন আজো বেঁচে আছে।