বুনো সে হাঁসের পিছে ছোটা!
শ্রী নীলকান্ত মণি
বাকি টুকু বলা যে হয়েছে ক্ষীণ স্বরে
অকুণ্ঠ প্রকাশে
মন্তব্য কলমে রয়েছে তা ধরা৷
শোনা যদি যেতো স্পষ্ট করে
ভুল বোঝার পাল্লা খানা
দিতো ভারী করে
নিঃসন্দেহে৷
মা সেদিন ভালোই করেছে৷
বালক কালের মতি তরল ভীষণ
সব কিছুতেই
মজার রসদ খুঁজে নিতে পারে৷
সেদিনের ঘটনাটা নাই বা বললাম
উহ্য ই থাক৷
বেছে নাও, যা ইচ্ছে হয়!
না হয়
একটু খানি খেই ধরিয়ে দেই!
দুই বন্ধু, যদিও আলাদা স্কুলে পড়ি
রপ্ত করছিলাম
সংস্কৃত৷
কন্ঠ স্বর ছিল উচ্চ গ্রামে৷
মা জানতো তো
এইবার কি বা পড়া হবে
তাই পড়ার প্রাক্ কালেই
মা তাড়াতাড়ি কাছে এসে চুপি স্বরে
পাঠ রত আমাদের থামিয়ে ই দেন৷ কারণ—
দেশ থেকে আসা ঠাকুর মশাই কেও
গ্লাস ভর্তি দুধ দেওয়া হয়েছিল, খাচ্ছিলেন
যা তাঁর হাতেই ধরা ছিল
একই কালে!
শব্দ-বদ্ধ গুলি বলছি কানে কানে
দুগ্ধম্ পিবতি মার্জারঃ৷
কাউকে বলো না৷
এ কথা
পাঁচ কান করার কিই বা দরকার!
অবশ্য, এখন সবাই
চা কিম্বা কফি ই অফার করে
তাই খায়
দুধ বাড়ন্ত হয়েছে বলে!
খায় নাকি পান করে
কথার মারপ্যাঁচ না হয় সেসব
শিকাতে ই তোলা থাক!
এসব, যে কালের কথা
উজ্জ্বল সেসব দিনের কথা কলি
যবে ওঠে ভেসে, প্রাণের সজনি তারা
ঠাকুরদা-ঠাকুমার দাদু-দিদিমার
গল্প বলার হাসি মুখ
মনে পড়ে খুব!
এখনো মন, ন্যূজ্য দেহ ফেলে
রঙিন পাখনা ভরে উড়ে যেতে পারে
সে অতীত দিনে!
সরস এমন ঘটনা গুলো
গুণে গুণে উঠে আসে অর্গল ঠেলে৷
অবচেতনে মনের কোন এক কোনে
যারা ঘুমিয়ে ই ছিলো
কেন যে এমন
চেতনের দরবারে হানা দিয়ে যায়
নির্ভয়, সেই তা জানে৷
হাসতে গিয়েও যেন কোথা
ঠেকে যায়
সংগোপন মনের কোনায়
বিষাদ জমে ওঠে
বুক খানা যেন
অযথা ই ভারী হয়ে যায়!
আলো মাখা প্রশস্ত ডানা ও তার ছিল
কোন এক কালে, আজ নেই
আজ সব স্মৃতি
বিস্মৃতির অতল তলে তলিয়ে যেতে যেতে
সব বাধা ঠেলে আসে কাছে
চুপি চুপি বলে
আমাকে কি তুমি ভুলে গেছো৷
মাথা অজান্তে কখনো নড়ে ওঠে
অস্ফুট স্বরে
কণ্ঠ বলে ওঠে, না না, তোমাকে ভুলি নি তো!
এ কালে
প্রকৃত খাঁটি দুধ সদ্য দোওয়া
আপনার উষ্ণতা যার যায়নি তখনো হারিয়ে
তা পাওয়া, আর অমাবস্যা তে চাঁদ দেখা
প্রায় একই কথা;
কিম্বা ধরো অল্প আঁচে বসানো সে
কড়া ভর্তি দুধ
কিম্বা বিকেল বেলাতে
আগুনের তাপে অর্ধেক হয়ে যাওয়া
সেই দুধের উপর
ঘন সর পড়ে
পরিপাটি সুঘ্রান ছড়িয়ে পড়া
এ কালের কেউ দেখেনি সে সব!
কখনো কখনো
উনুনে বসানো কড়া ভরা
মারা সে দুধের সুঘ্রান
আজো মন কে ভরিয়ে দিয়ে যায়
স্বপ্ন আস্বাদনে
পড়ে যাই সে ঘোরের প্রেমে৷
ভালো-মন্দ মেশানো সে যৌথ-পরিবার
ছবি হয়ে ভেসে ওঠে
মনের দরজায় কড়া নেড়ে যায়!
হায়! তারা সব গেলো যে কোথায়!?
আজকাল
অল্প খানিক খাঁটি দুধে
নাকি পুরোটাই জলে গোলা পাউডার দুধ
অনায়াসে বিক্রি হয়৷ তাই খায় লোকে
দুধ বলে,
আসলে, জানেই না অনেকেই
প্রকৃতই খাঁটি সে দুধের স্বাদ
কেমন তা হয়৷
যদি প্রশ্ন করো
সে দুধের স্বাদ, কেমন তা ছিলো
বলতে পারবো না৷
তা কেবল যে খায় সেই শুধু বোঝে
বলতে পারে না
দুধের স্বাদ কেমন, তা কি বলা যায়
স্পষ্ট করে!?
সেথায় মুখের ভাষা বড্ডো অসহায়!
ফেরার সে দিন
যতোই ঘনিয়ে আসে
ফেলা আসা দিনগুলো দেখি
কাছে এসে কণ্ঠ জড়িয়ে আবদার ধরে,
আদুরে স্বরে বলে—
জানো,
বড়ো ভালো হোত
যদি আরো কিছু দিন থেকে যাওয়া যেতো!
যদি আরবার সেইসব দিন কখনো ফিরে আসে!
আশা মরে না কখনো৷
অকারণ কেন যে খোঁটা দেওয়া!
চোখের কোনায় জল জেগে ওঠে!
বুকের ভিতরে ওঠা গভীর দীর্ঘশ্বাস
সযত্ন গোপন রূঢ় স্বর
বলে ওঠে
রাখো তো তোমার আদিখ্যাতা,
এ বয়সে এসে
ভালো কি দেখায়
বুনো সে হাঁসের পিছে ছোটা!?
—oooXXooo—