আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দ্রুত তৈরী হয়ে নিচ্ছিল পৃথা।বেশ একটু দেরিই হয়ে গেল আজ।অথচ আজকেই আগে বেরোনোর কথা।পেরে উঠল না। মামনি বাড়িতে নেই। একটা বিশেষ দরকারে বেরিয়েছে। ফিরে যাবে হয়ত একটু পরেই কিন্তু রান্নার লোক ততক্ষণ বসে থাকবে না।রান্নাবান্না কি হবে সেসব বলে দেবার দায়িত্ব আজ ওর ওপরেই।তো কমলাদি এলোই আজ অনেকটা বেলায়।তারপর তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে,সংসারের টুকটাক কাজগুলো সামলে,অর্ণবকে অফিসে রওয়ানা করিয়ে,তবে না বেরোনো! যাক গে। ভুবনদাকে বলে এসেছে গাড়ি বার করতে। বেশিক্ষন লাগবে না ওর।দেরী হলে মেয়েটা আবার ওদিকে অস্থির হয়ে পড়বে।ছুটি হয়ে গেলে হাসপাতালে পড়ে থাকতে কারই বা ভালো লাগে?তাড়াতাড়ি যাবে বলে ছুটি নিল তবু সেই দেরীই হল। চুলটা চটপট ক্ল্যাচার দিয়ে আটকে নিল ও। আলমারি খুলে কুর্তি বাছছে।একটা অর্ডিনারি নীল সাদা চোখে পড়ে গেল। এটাই পরে নেওয়া ভালো।এসে তো সেই কাচতে দিতেই হবে।জামাটা গলাতে গলাতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল।এইরে! উন্নতিদি ঘর মুছতে এলো — বলা হয়নি তো অনিতার ঘরটা ঝেড়ে মুছে ঠিক করে রাখতে।সেই যে মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরোলো তারপর থেকে ও ঘরটায় তো আর কেউ হাতই দেয়নি বোধহয। বিছানাপত্র পরিষ্কার আছে কি?না হলে ব্যবস্থা করতে হবে তো।মেয়েটা এসে শোবে কোথায়?মামনি বাড়িতে থাকলে অবশ্য এসব ভাবতে হোত না। নেই বলেই —- সত্যি! এই এক মানুষ! ভাবলেই এক অদ্ভুত ভালো লাগা আর চাপা অহংকার বুকের ভেতর যেন ফেনিয়ে ওঠে।এমন শাশুড়ি হয় ক’জনের?মা তো উঠতে বসতে বলে “ কপাল ক’রে এমন শাশুড়ি পেয়েছিস।” মামনি যেন ওর নিজের মায়ের চেয়েও বেশি।সবদিকে নজর। চাকরিটা বজায় রাখতে পারতো নাকি পৃথা যদি মামনি পাশে না থাকতো?কোথায় ধ্যাড়ধ্যাড়ে একটা অজ পাড়া গ্রামে স্কুল!পোস্টিং দেখেই তো মাথায় হাত ওর!অর্ণব তো দেখেই ছেড়ে দিতে বলেছিল।এ কি হয় নাকি!এতদূর জার্নি করে পারবে কি করে চাকরি করতে?আর করার দরকারই বা কি?ছাড়ার ইচ্ছে না থাকলেও অর্ণবের কথার যুক্তিতে তখন প্রায় হারতে বসেছে পৃথা। নিজেরও মনে হতে শুরু হয়েছে এই তিন তিন ছ ঘণ্টা জার্নি করে ও পারবে কি চাকরি করতে?শরীরে দেবে?কিন্তু সরকারি চাকরি। রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া। ছাড়তে মন চায় না।কি করে – কি করে — মামনি সেই সময়ও ঠিক সাহস জুগিয়ে গেছে।বলেছে, “ তুই যা তো কিছুদিন। তারপর বদলির দরখাস্ত কর।সব ঠিক হয়ে যাবে।” আর সত্যিই তাই হল!ভাগ্যিস দুম করে কোন ডিসিশান নেয় নি ও। মামনি এরকমই।কোন কিছুতে হার মানে না।পিছিয়ে আসে না। সেই জন্যই তো সংসারের উনকোটি কাজ সামলে আবার বাইরের এত কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারে! কি করে যে পারে সেটা ভেবেই এক এক সময় অবাক লাগে ওর! আর কি অপরিসীম এনার্জি এই বাহান্ন বছর বয়সে এসেও!দু দুটো নারী কল্যাণ সমিতি, বস্তি উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা!শুধু কি তাই!এসব ছাড়াও যার যেখানে দরকার সেখানেই মামনি হাজির। এই মাস খানেক আগে কথা।ওদের বাসন মাজতো শান্তিদি। অল্প বয়সেই শুধু মদ খেয়ে ওর বরটা মরে গেল। বেচারীর তখন কি অবস্থা! কোথাও যাবার জায়গা নেই আবার এদিকে বস্তিতে থাকারও অসুবিধে। অল্পবয়সী। তার ওপর একটু নজর ধরা চেহারা। লোভের চোখ তো চারদিকে সর্বক্ষণ জ্বলছেই।শান্তিদি চেয়েছিল এই বাড়িতেই থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিক মামনি। কিন্তু তখন সেটা সম্ভব ছিল না। এমনিতেই দুটো লোক সব সময় আছেই ওদের। তাছাড়াও রান্নার লোক। এদের কাউকে তো সরানো যায় না! কিন্তু নিজের বাড়িতে না হোক ব্যবস্থা একটা মামনি করেই ফেলল।এখন একটা সমিতিতে হাতের কাজ শিখে নিজেই রোজকার করছে শান্তিদি। লোকের বাড়ি বাসন মেজে বেড়াতে হয় না আর। চাল চলন, সাজগোজ সব পাল্টে গেছে। এসেছিল তো একদিন। দেখে তো চোখ জুড়িয়ে গেছে পৃথার। এত ভালবাসা মানুষটার বুকে!সবার জন্য মায়া। পৃথারও খুব ইচ্ছে করে এরকম কাজ করে।কিন্তু মামনি রাজি হয় না। বলে, “ এখন তুই সংসার কর।ওসবের জন্য সময় আছে। আর একটু বড় হ’ দিকি!” হাসে পৃথা।পঁচিশ বছর বয়স হল ওর।এখনও ছোট! তবে অনিতার ব্যাপারটা ও যেভাবে একা সামলেছে বা এখনও সামলাচ্ছে তাতে মামনি যে মনে মনে ভীষণ খুশি তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুখে বলেনি বটে কিন্ত এতদিনে মানুষটাকে তো চিনেছে পৃথা।মামনি তো এটাই চায়। এরকমই চায়। অসহায়, নিপীড়িত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সমাজে সঠিক জায়গা করে দেওয়া, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ দেখানো এই নিয়েই তো দিনরাত এক করে ছুটে চলেছে মানুষটা।আর অনিতা তো ওদের বাড়িরই মেয়ে প্রায়।কত ছোট থেকে আছে। সেই মেয়েটারই এমন পরিণতি!ভাবলেই বুকের ভেতরটা টনটন করে ওঠে। হাসিখুশি ছটফটে মেয়েটা ওই একটা দিনের অভিজ্ঞতায় একেবারে পাষাণ প্রতিমা হয়ে গেছে যেন।শরীর তো সেরে উঠবে একদিন। উঠছেও। কিন্তু মন?তার দায় কে নেবে? পৃথা যতটা পারে বোঝায়।যতটা পারে কাছে থাকে। আজকাল স্কুল ছুটির পর তো রোজ যায়। কিন্তু তাও সদা সর্বদা কি রকম একটা আতঙ্কে থাকে মেয়েটা! কালকে যেতেই— হঠাৎ হাত চেপে ধরেছে ওর। “ আমাকে তোমরা আবার কাজে রাখবে তো বৌদি ?” কি বলে রে মেয়েটা!কাজে কেন রাখবে না?তোর দোষটা কি? তবু ভয় যায় না মেয়ের। খালি একই কথা বলে চলে। “ বৌদি। আমাদের গ্রামে সবাই জেনে গেছে। মা বলছে গ্রামে নাকি আর আমাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি থাকলে ছোট বোন দুটোর আর বিয়ে হবে না।” শুনে হাসবে কি কাঁদবে ভেবে পাচ্ছিল না পৃথা। ওরই তো মোটে ষোল বছর বয়স। বোন দুটো তো একেবারেই ছোট। তাদের বিয়ের চিন্তা!এখনই!আর সেজন্য এই মেয়েটা নিজের বাড়ি ফিরতে পারবে না!এ কোন যুগে পড়ে আছে এরা?এই জঘন্য নারকীয় ঘটনার জন্য কি অনিতা দায়ী? কি আশ্চর্য ! “ তুমি জানো না বৌদি পাড়া গ্রামের ধরন ধারণ সব আলাদা। ওখানে এরকমই চলে।মা চেষ্টা করেছিল লুকিয়ে রাখার কিন্তু পারুল সব বলে দিয়েছে ওদের বাড়িতে। আর তাতেই তো — –” পারুল।হ্যাঁ হ্যাঁ।এক গ্রামেরই মেয়ে ওরা। পাশের সেন কাকিমার কাছে কাজ করে।ওই পারুলই অনিতাকে ওদের বাড়ি কাজের জন্য এনেছিল।আর সেই দিনটাতেও পারুলই তো সঙ্গে ছিল অনিতার। ওই তো এসে খবরটা দিল।উফফ! প্রায় কুড়ি বাইশ দিন হয়ে গেল। আজও ঘটনাটার কথা ভাবলে গা কাঁপে ওর।যে অবস্থায় দেখেছিল মেয়েটাকে!আর একটু দেরি হলে বাঁচাতে পারা যেত না বোধহয় ! রক্তে ভেসে যাচ্ছে সারা শরীর।জ্ঞান নেই!সারা শরীরে নখ আর দাঁতের বীভৎস ক্ষতচিহ্ন!যেন কতগুলো শাপদ মিলে খাবলে খেয়েছে ওর শরীরটাকে!ঠোঁট ঝুলে এসেছে সামনের দিকে!কামড়ে তুলে নিয়েছে বুকের মাংস! উফফ ! নিজের অজান্তেই দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলে পৃথা। সেদিনও এরকমই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছিল ও। স্কুলের এক কলিগের ছেলের জন্মদিনের পার্টি। দুজনেই যাবে। অর্ণব মোবাইলে মগ্ন। পৃথার হ’লে তবে তৈরি হবে। সবে হাতে করে শাড়িটা নিয়েছে ও সেই সময়ই উন্মাদের মত ছুটে এল পারুল। প্রথমে তো কিছু বুঝতেই পারছিল না পৃথা। হাউমাউ করে কাঁদছে পারুল। বিকৃত গলায় চিৎকার করছে। বাইরের দিকে দেখিয়ে কি যে বলছে!অনিতাকে কারা নাকি ধরে নিয়ে গেছে!ওরা দুজনে ফুল কিনতে বেরিয়েছিল।গলির মধ্যে অন্ধকারে হঠাৎ — আর কিছু বলতে হয়নি। বাকিটা অর্ণব বুঝে নিয়েছে।তীর বেগে দুজনে ছুটে বেরিয়ছে।এ গলি ও গলি, এ পাড়া, ও পাড়া সব খুঁজেও শেষ পর্যন্ত থানাতেই যেতে হল। তাও কি অত সহজে কিছু হয়? থানার অফিসারের চোখ টিপে সে কি নির্লজ্জ হাসি ! “ ষোল বছরের মেয়ে?কার সাথে ভেগেছে দেখুন।ও আবার খোঁজার কি আছে?” অর্ণবের চোয়াল শক্ত হয়েছে।চোখ লাল। সেদিকে তাকিয়ে কিনা জানে না। পরে বলেছে, “ঠিক আছে ছবি রেখে যান। দেখছি।” আশ্চর্য!একটা মেয়েকে দুটো ছেলে তুলে নিয়ে গেল ভর সন্ধ্যে বেলায় আর এদের কোন হেলদোল নেই! দেখছি ! খুব অসহায় লাগছিল পৃথার নিজেকে। মামনি নেই।কদিনের জন্য সমিতির কাজে বহরমপুর গেছে। থাকলে হয়ত অন্যরকম হোত ব্যাপারটা। থানা থেকে বেরিয়ে এসে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিল না ও। পাগল পাগল লাগছিল নিজেকে। কোথায় কারা তুলে নিয়ে গেল মেয়েটাকে? শান্ত, নির্বিরোধী— যাকে বলে এক্কেবারে ভালো মেয়ে অনিতা।লাজুক প্রকৃতির। কক্ষনো কারুর সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে না।আর থাকলেই বা কি ? এভাবে যাবে কেন? পারুল তো বলছে ওরা ফিরে আসছিল ফুল কিনে।হঠাৎই পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেছে অনিতার।হয়ত পারুলকেও ধরত।ও ভয়ে ছুট লাগিয়েছে।দুজন ছিল।মুখ চেনা।মোড়ের মাথার ওই চায়ের দোকানে ঠেক ওদের। অনেকদিন থেকেই নাকি অনিতাকে বিরক্ত করে।পাত্তা না পেয়ে আজ — অফিসার ভদ্রলোক মুখে যাই বলুন ওদের উদ্বেগ দেখে একটু হলেও নড়ে চড়ে বসেছেন যে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। রাত বারোটা নাগাদ ফোন করে ডেকে পাঠালেন। এখান থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে একটা স্কুল বাড়ির ঘরের মধ্যে পাওয়া গেল অনিতাকে। আধমরা রক্তাক্ত উলঙ্গ। রাগে দাঁতে দাঁত ঘসে পৃথা। সুস্থ হয়ে উঠছে অনিতা। চিনতে পেরেছে শয়তান গুলোকে। নামও বলেছে। আজ নয় কাল পুলিশ খুঁজে বার করবেই ওদের। যতদিন না সেটা হচ্ছে ছাড়বে না পৃথা। কিছুতেই ছাড়বে না। মামনি আছে ওর পাশে। অনেক কানেকশান আছে মামনির। যতই রাজনীতির ছাপ্পা লাগাক। রেহাই পাবে না কিছুতেই।শাস্তি পেতেই হবে ওদের। ফুলের মত একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দেবার চরম মূল্য দিতে হবে। “ কোথাও বেরোচ্ছিস?” চমকে তাকায় পৃথা। নিজের ভাবনায় বুঁদ হয়ে গেছিল ও। কখন মামনি ঘরে ঢুকেছে টেরই পায়নি। “ ওহ ! এসে গেছ তুমি? ভালই হল। হসপিটালে যাচ্ছি মামনি। আজ ছুটি হচ্ছে অনিতার।” “ তুই কেন? ওর বাবা মা –” “ আসবে হয়ত। জানি না। মেয়েটার এখনও অনেক যত্ন প্রয়োজন। পুরো সুস্থ হতে সময় লাগবে।” “ হ্যাঁ।জানি তো। সেইজন্যেই ওর বাবা মার কাছে যাওয়াই তো ভালো এখন। সেখানেই যাক।” মামনি যেন লুফে নিল কথাটা। একটু কি বেসুরো ঠেকছে! পরিচিত শব্দের বাইরে কোন নতুন সংলাপ?দূর!কি সব ভাবছে ও।জোর করে ভাবনাটাকে তাড়ায় পৃথা। “ ওহো!তুমি তো ছিলেনা।জানোই না।ওর বাবা মা ওকে গ্রামের বাড়িতে আর নিয়ে যেতেই চাইছে না।সেখানে সব কথা জানাজানি হয়ে গেছে।ও গেলে ওর বোনদের নাকি আর বিয়ে হবে না।” “ তো তুই কি ঠিক করেছিস?” “ এ আর ঠিক করার কি আছে? এখানে নিয়ে আসবো।আমাদের কাছে।”নিশ্চিন্ত সুরে জবাব দেয় পৃথা। “ আর তারপর?” “ তারপর সুস্থ হলে যেমন কাজ করছিল করবে।” “ তোর ধারণা আছে ওকে এখানে আনার ফল কি হবে?প্রেসের লোক, পুলিশের লোক, কোর্ট কাছারি, — কি ভাবে হয়রান করবে জানিস তুই?” “ কিন্তু মামনি –” হতভম্ব হয়ে কথা হারিয়ে ফেলে পৃথা। “ সব কিছুর বাস্তব দিকটাও ভাবতে হয়।একটা রেপড মেয়েকে বাড়িতে আবার কাজে রাখলে ভদ্র সমাজে মুখ দেখানো যাবে?আমার একটা সামাজিক সম্মান আছে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে হয়।তার কি হবে? “ মামনি !! ” বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলে পৃথা। “শুধু তাই নয়।যারা আসবে তারাই ওকে দেখে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাবে। বারবার জানতে চাইবে – সেই লোকগুলো ধরা পড়ছে কিনা – কোর্টে কেস কতদূর এগোলো – ঠিক কি হয়েছিল – কতটা হয়েছিল — কে উত্তর দেবে এসবের?আর তার পরিবার যখন তাকে নিতে অস্বীকার করছে সেখানে আমাদের কিসের দায়?কাজ করেছে মাইনে দিয়েছি।এটুকুই তো সম্পর্ক ” এটুকুই সম্পর্ক!এই এতগুলো বছর মেয়েটা এ বাড়িতে রইল। সব কিছুর সাথে জড়িয়ে থাকল আর এখন তার এত বড় দুর্দিনে ‘এটুকুই সম্পর্ক’! বিস্মিত চোখে চেয়ে থাকে পৃথা। একথা মামনি বলছে!মামনি!ওর জীবনের আদর্শ! সেই মামনি! তাহলে এই এত নারী কল্যাণ সমিতি, এত বস্তি উন্নয়ন এসব কি ?শুধু মুখের কথা!স্ট্যাটাস সিম্বল! বড়লোকের বাড়ির বউয়ের শুধু লোক দেখানো সমাজ সেবা!মাথার ভেতর সব কেমন গোলমাল হয়ে যায় পৃথার। “ মামনি কি বলছ তুমি!মেয়েটা কোথায় যাবে?ওর আর কে আছে এখন আমরা ছাড়া?” “ ওসব ভাবার কথা আমাদের নয়। তুই যথেষ্ট করেছিস। ওষুধ ডাক্তার কিছুরই অভাব রাখিস নি। এবার ওর নিজের পথ ওকে দেখে নিতে বল। আর পাথেয় যা লাগে বলিস। দিয়ে দেব। মোট কথা ও মেয়েকে এ বাড়িতে আনা চলবে না। এই আমার শেষ কথা। ” স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পৃথা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে এতদিন ধরে এত যত্নে প্রতিষ্ঠিত এক দেবী মূর্তির কি নিদারুণ বিসর্জন।একটা আলগা ঝড়েই খসে গেছে উপরের রঙিন মনোহর আবরণ। বেরিয়ে এসেছে ভেতরের খড়, দড়ি বাঁশের কঠিন কুৎসিত কাঠামো। দাঁত বার করে হাসছে ওগুলো ওর দিকে চেয়ে। নিজেদের কদর্যতা দিয়ে ব্যঙ্গ করছে কঠিনভাবে। শিউরে উঠে দু হাতে মুখ ঢাকে পৃথা।এবার? কি করবে ও? স্বপ্ন ভেঙে গেলে মানুষ কি করে ? হেরে যায়? পালিয়ে যায়? পৃথাও কি তবে তাই করবে?কিন্তু ওই মেয়েটা ?হাসপাতালের বেডে বসে আকুল ভাবে যে ওর পথের দিকে তাকিয়ে আছে তার কি হবে? কোথায় যাবে ও? এই বিশাল পৃথিবীতে ভদ্র ভাবে বেঁচে থাকার কোথাও কি একটু জায়গা পাবে?এই বাড়িয়ে দেওয়া আশ্বাসের হাত কি ফিরিয়ে নেবে পৃথা ? মুখ ঘুরিয়ে নেবে ওর দিক থেকে? নাকি একবার চেষ্টা করেই দেখবে পারে কিনা ও? পারে কিনা সমাজ, সংসার সবার বিরুদ্ধে লড়তে? একা ? ভাবছে পৃথা। ভাবছে।