“সংসারজীবন”
–:: ইন্দ্রাণী ব্যানার্জী ::–
সকাল দেখে দিন বোঝা যায়। লোকে প্রবাদকথা বলে বটে তবে বর্ষা কালে এ নিয়ম খাটে না। শ্রাবণ মাস। রোদ ঝলমল আকাশ দেখে মদন চাষা হালের বলদদুটিকে নদীর চরে বেঁধে এসেছিল। কী করে জানবে অদৃষ্টে এই লেখা আছে। ঘরে বিচালি নেই। গোরুদুটোর পেট ঢুকে গেছে। এই রোয়াগাড়ার সময় ওই দুটোই ওর পুঁজি।
আকাশ জুড়ে কালো মেঘ। মনের ভিতরে একটা অশনিসংকেত। মাঝে মাঝেই চিকুর হানছে আকাশ। তড়িঘড়ি করে মদনা ছুটছে।
মদনার বৌ মানা করেছিল। চিরকালের জেদী লোকটাকে নিয়ে হয়েছে ওর মরণ। রন্ধ্রগত শনি যেন যাবার নয়।
খবরটা প্রথমে গোপাল নাপিত দিল। ধানের গোছ দেখতে নদীর পাড়ে জমিতে গিয়েছিল। এমন আকাশের ডাকুনি।গোপাল বলতে লাগল আমি তো জৈমিনী ঋষিকে ডেকে যাচ্ছি। শেষে বুদ্ধি করে নদীর খোদলে ঢুকে পরি। তারপর যখন বাইরে এলাম দেখি বলদ দুটো মরে পরে আছে।এইবলে গোপাল হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আর মদন হতভম্ব হয়ে সেই যে বোবা হয়েছে আর রা টি নেই।
গাঁয়ের বামুন রাসু মুখুজ্যে বললে গলায় দড়ি দিয়ে বজ্রপাতে মরেছে। তাই প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। সকলের সহযোগিতায় পারলৌকিক কাজ মিটলো। সবাই যে যার বাড়ি চলে গেল।
মদন গোয়ালঘরের কাছে এসে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলে না। শিশুর মতো ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকলো। ও অনাথ হয়ে গেল।
নিঃসন্তান মদনের ওরাই ছিল জিয়নকাঠি। স্বামীর মুখ দেখে কাতর মাধু কানের পাশা আর হাতের চারগাছি সোনার চুড়ি খুলে ওর হাতে দিল। শত কষ্টের দিনেও ওগুলো নষ্ট করেনি।
শুক্রবারে গরুর হাট বসে। মাধু জানে হালের বলদ না কিনলে মদন পাগল হয়ে যাবে। এই কদিনে হাড় কখানা সার হয়েছে।মাধুর ভিতরটা কদিন হু হু করছে।
নেপাল খুড়োকে সাথে নিয়ে মদন গেল গোহাটে। জোড়াটা বারো হাজারের কমে হল না। যাই হোক। মদনের মুখে হাসি ফুটেছে। মাধু প্রস্তুত ছিল। জল দিয়ে বলদদুটিকে পা ধুইয়ে দিল। গোয়ালটা আবার ভরা ভরা লাগছে।
—০০##XX##০০—