বিযুক্ত হয়েছে মুঠি , মানবশৃঙ্খল
অসীম দাস
তোমাকে ফিরে আসতেই হবে
চার চার যুগ আর বর্ণাশ্রম ভেঙ্গে ।
দিগন্ত -গন্ডীর আয়ুরেখা মুছে যাবে
সমীচীন সময়ের স্রোতে ।
তুমি তো শুধু ধ্বংসের দাবানলে
মারাং বুরু আর টাঁঢ়বারোর
ভয়ার্ত আর্তনাদ শুনে গেছো ।
দেখে গেছো , জ্যোৎস্নার শুভ্র পরীরা
চলে গেছে অভিমানে আরণ্যক মৃত্তিকা ছেড়ে !
নির্মিত দূষণের ক্রোধানলে পুড়ে গেছে প্রভূত সবুজ ।
জলতল কমে কমে ছুঁয়েছে
শেষ দ্রাঘিমার আর্সেনিক শব !
বহুমুখী নিজস্বীর কেঁদো মুঠোফোনে
বিযুক্ত হয়েছে মুঠি , মানবশৃঙ্খল ।
আর নয়, আর নয়।
এ কবিতার ভঙ্গুর কাঠামো
কিভাবে সহ্য করবে আরও উপমার
শব্দ- যন্ত্রণা !
অনন্তর , নিরস্ত সভ্যতার অর্বাচীন গতিমুখ
বদলে যাক আশাবাদী সবুজ প্রত্যয়ে ।
সশব্দে উড়ে যাক সাময়িকী হতাশার পরাজিত ছাই ।
কেননা , সুমহান প্রশ্বাসের হার জিত হার
শেষ কথা নয় ।
অপরাজিতর পথে হেঁটে হেঁটে সরস্বতী কুন্ডীর পাড়ে
বোগেনভেলিয়া আর বিভোল বুলবলির নাচ
চলমান কবিতার অনতি শেষ দৃশ্য হোক ।
কবিতার অনুধ্যান :
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যদি কখনো শুধু কবিতা লিখে আমাদের আরণ্যক মায়াযাপনটি উপহার দিতেন তবে যেন তা পড়ে আমরা বলতেই পারতাম,
“অনন্তর , নিরস্ত সভ্যতার অর্বাচীন গতিমুখ
বদলে যাক আশাবাদী সবুজ প্রত্যয়ে..” !
ঠিক এটাই বলেছেন কবি অসীম দাস।
ভাবনার বিনির্মাণে অতি সবুজ ও সাবলীল তিনি।
তাই তো জড়তাহীন ভাষায় বর্তমান সভ্যতাদর্পী অহঙ্কারের অসারতাকে যেন বিদ্রুপে বলেন,
” জ্যোৎস্নার শুভ্র পরীরা চলে গেছে অভিমানে আরণ্যক মৃত্তিকা ছেড়ে !
নির্মিত দূষণের ক্রোধানলে পুড়ে গেছে প্রভূত সবুজ /জলতল কমে কমে ছুঁয়েছে
শেষ দ্রাঘিমার আর্সেনিক শব !..” এর মত অমোঘ উচ্চারণ।
আমরাও এর পরম্পরাসাধনে ধীরে ধীরে কবির সাথে এই জ্বলন্ত ও ক্ষয়িষ্ণুতার নির্বাক দর্শক হয়ে যাই। তবে তিনি কবি হবার দায়িত্ব ভোলেন না। আশাবাদকে হতাশার সমস্ত বিপরীতে জাগিয়ে দিয়ে তিনি যেন আমাদের হয়েই তাই শব্দবুনটে পশমী চাদর মেলে প্রার্থনা করে বলে ওঠেন,
“সশব্দে উড়ে যাক সাময়িকী হতাশার পরাজিত ছাই ।”
এই রকম স্বপ্নসন্ধানেই তো বাঁচা!
নীললোহিত যেমন – ” বেঁচে থাকতে সাধ হয়” বলে আমাদের আশ্বস্ত করেন, ঠিক তেমনই অসীম বাবু’ও বলেন, ” বোগেনভেলিয়া আর বিভোল বুলবলির নাচ /চলমান কবিতার অনতি শেষ দৃশ্য হোক “!
কবির সাথে আমরাও চাইব আগামীদিনের পৃথিবীর আয়ুষ্কাল আরো মনোময় হয়ে উঠুক !
এটাই এখন সমবেত প্রার্থনা হোক!
—oooXXooo—