সেইদিন সমুদ্রে
✍️ শিব প্রসাদ হালদার
সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল।আস্তে আস্তে পরিমাণটা আরো বেড়ে গেল।সে কি সাংঘাতিক বৃষ্টি! সন্ধ্যায় তার দাপট বেড়ে হল আরো তীব্র।প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকানো।সময় সন্ধ্যা সাতটা পঞ্চান্ন কি আটটা হবে। সেদিন ছিল উনিশে জুন ২০০৭।চীফ কুক মিঃ হালদার তখন বোম্বে হাইয়ের PQ প্লাটফর্মে RKHS এর অধীনে ব্রিটিশ সংস্থা BG কোম্পানির ক্যাটারিং ডিপার্টমেন্টে কর্মরত।সেদিন ডিউটি ছিল সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা।ডিউটি সেরে সবে কেবিনে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে কম্পিউটার নিয়ে বসেছে।তখন বন্ধু- বান্ধবদের কাছে মেইল করায় ব্যস্ত।আমার তখন কম্পিউটার ছিল না।তাই মোবাইলে SMS করে খবরা- খবর পাঠাতো।সেদিনও তাই করছিল।হঠাৎ ফায়ার এলার্ম বেজে উঠল।সে ভাবলো এত বৃষ্টির মধ্যে আবার ফায়ার ড্রিল করবে নাকি?আবার ভাবল হয়তো ভুল এলার্ম বাজিয়ে দিয়েছে। এই সব ভাবতে ভাবতে একটু সময় নিয়ে নিল।দরজা ছিল বন্ধ।হঠাৎ নক করার শব্দে- কাম ইন বলতেই মেসবয় হাঁপাতে হাঁপাতে কেবিনে ঢুকেই বলে উঠল- আরে বাঙালি বাবু! (তাকে সবাই বাঙালি বাবু বলে ডাকতো) বিল্ডিংয়ে যে আগুন লেগেছে!সে শোনামাত্র চমকে উঠল।মেসবয় তাকে জানিয়ে ছুটে গেল পাশের কেবিনে নক করতে।সে কেবিনের বাইরে আসতেই দেখল সবার গায়ে লাইফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট, পায়ে সেফটি সু পরে যে যেদিকে পারছে দৌড়াদৌড়ি করছে।এমতাবস্থায় সবাইকে দেখে সে প্রথমে ভয় পেয়ে গেল।হঠাৎ থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল।ওদিকে ননস্টপ অ্যালার্ম বেজে চলেছে।আর কালবিলম্ব না করেই তাড়াতাড়ি বয়লার স্যুট পরে নিল।সেইসঙ্গে সেফটি সু ও লাইফ জ্যাকেট। মাথায় হেলমেট দিয়ে সোজা দৌড়ে চলে গেল গ্যালিতে। যদিও তখন তার কোন ডিউটি ছিল না। এক দৌড়ে সেখানে গিয়ে হট প্লেটের মেইন সুইচ, অ্যাডজাস্ট ফ্যানের পাওয়ার সহ বাকি সব ওভেনের পাওয়ার অফ করেই ফার্স্ট এইড বক্স আর দুটো জলের বোতল নিয়ে সোজা চলে গেল মাস্টার কেবিনে।বাইরে তাকাতেই দেখল ওদের পিছনের বিল্ডিংয়ের উপরের দিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।তখন সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য!পিছনে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।নিচে জল।প্রচন্ড হাওয়ায় পনেরো কুড়ি ফুট উঁচু ভয়ঙ্কর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বিশাল পিলারের গায়ে।প্রচন্ড বৃষ্টি আর অনবরত বিদ্যুৎ চমকানো।সেফটি অফিসার ও ডিউটি অফিসার সহ সকলেই সেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন।তখন মিঃ হালদার কে জিজ্ঞাসা করলেন গ্যালীর পাওয়ার অফ করা হয়েছে কিনা।সে বলল ইয়েস ক্যাম্পবস।তারপর শুরু হল ওদের সকলের অ্যাটেনডেন্স চেকিং।তখনই দেখা গেল তাদের মধ্যে একজন রুমবয় অনুপস্থিত।সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পবসকে বলল আপনারা একটু দাঁড়ান আমি দেখছি।বলেই ছুটে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তাকে খুঁজে এনে হাজির করল মাস্টার স্টেশনে।তখন সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হলো- সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকার জন্য।এবং কোন অবস্থাতেই যেন কেউ কোথাও না যায়। হঠাৎ বুম্ করে প্রচন্ড জোরে একটা আওয়াজ হলো।সবাই ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।পেছনের দিকে আগুন তখন আরও বেড়ে গেছে।সেখানে একটা গ্যাসের পাইপ ব্লাস্ট করে আগুন আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।
প্ল্যাটফর্ম থেকে চিমনির একটা পাইপ উঁচুতে বের করা থাকে।সেই পাইপ দিয়ে যত জমে থাকা ময়লা, গ্যাস, ধোয়া সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।ওই চিমনি চব্বিশ ঘন্টা জ্বলতে থাকে।সেখানে কোন কারনে কোন নোংরা ময়লা জমে গেলে মাঝেমধ্যে কমবেশি ব্লাষ্ট হয়।সেদিনও হয়েছিল তাই।তবে পরিমানটা ছিল বেশি।ওই পাইপের নিচে চারপাশে তেল ও গ্যাসের পাইপ।আগুনের তাপে তার একটা পাইপও ফেটে যায়।পরিস্থিতি তখন আরো ভয়ানক হতে লাগল।সেফটি অফিসার নির্দেশ দিলেন- তোমরা সবাই তোমাদের পজিশনে গিয়ে দাঁড়াও—একথা শুনা মাত্রই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে গেল। প্ল্যাটফর্মের সিকিউরিটি টিম এবং সেফটি স্টাফ সবাই ছোটাছুটি করছে।তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে কি করে তাড়াতাড়ি আগুন নেভানো যায়।নইলে আরো ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটে যেতে পারে।কিন্তু ওখানে পৌঁছাবে কি করে?তখন বারবার লাউডস্পিকারে অ্যানাউন্স হয়ে চলেছে ডেঞ্জারাস সিচুয়েশন!সবাই আগুন নেভানোর ড্রেস আর ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে যেতে লাগল আগুনের দিকে।ডাইভাররা নেমে গেল জলে সমস্ত গ্যাস ও অয়েলের পাইপ লাইন লক এবং ডিসকানেক্ট করতে। সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে।ওরা তখন খোলা আকাশের নিচে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।বৃষ্টি কিছুতেই থামছে না।সবাই ঠাণ্ডায় কাঁপছে।তখন রাত এগারোটা কুড়ি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বারবার সময়টা দেখে নিচ্ছে।হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন কেঁদে উঠলো।তখন সবাই তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। তার দেখাদেখি আরো একজন কেঁদে ফেলল।ওরা পড়লো সমস্যার মধ্যে।অনেকটা আতঙ্কও বটে!কেউ বলছে স্যার!আমি একটু গিয়ে পাসপোর্ট আর ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে আসছি।কেউ বলছে- আমার প্রস্রাব পেয়েছে।এক একজন এক এক রকম বলতে লাগল।যেন এক এক করে সবার মাথা খারাপ হতে লাগল।মিঃ হালদার চিরকাল ছোটবেলা থেকেই ছিল প্রচণ্ড সাহসী।সে এই মুহূর্তে সবাইকে সান্তনা দিতে লাগলো তবুও যেন তার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো।মাথায় আসতে লাগল উল্টোপাল্টা চিন্তা ভাবনা! “আমি বাঁচবো তো- বাড়ির সবার সাথে আর কি দেখা হবে? না, আজ এখানেই সব শেষ! হে ভগবান! এ কি হলো-!!” শেষে সব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে মনে আনলো সাহস।ভগবান আর মা বাবাকে স্মরণ করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করল। সেফটি অফিসার বললেন এখন যেন কেউ কোথাও না যায়।বাথরুম পেলে এখানেই করবে।তবুও কেউ বাইরে যাবে না।ক্যাম্পবস অর্ডার করলেন অ্যাকোমোডিশন এর সমস্ত ডোর যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।সঙ্গে সঙ্গেই দুইজনে গিয়ে সমস্ত ডোর বন্ধ করে দিয়ে এলো। তখন আবার অ্যাটেনডেন্স কাউন্ট করা হলো।কিছুক্ষণ পরে লাউডস্পিকারে অ্যানাউন্স হল পজিশন ইজ ডেঞ্জারাস! সঙ্গে সঙ্গেই সেফটি অফিসার আর ডিউটি অফিসার লাইফ বোট চেক করতে শুরু করলেন।হঠাৎ দেখা গেল দূর থেকে সাপ্লাই ভেসেল এবং ছোট ছোট শীপ তাদের প্লাটফর্মের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে এবং তা মুহূর্তের মধ্যে প্ল্যাটফর্মের চারিদিকে ঘিরে ফেলল। আসলে ওরা আগুন দেখে তাদের সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছিল। ওদের দেখে অনেকের মনে একটু সাহস জেগে উঠলো।ঠিক এমন সময় আবার বুম্ করে একটা বিশাল আওয়াজ হলো।আবার একটা পাইপ ব্লাস্ট করল।পজিশন আরও মারাত্মক রূপ নিল।সঙ্গে সঙ্গেই প্ল্যাটফর্ম এর সমস্ত পাওয়ার লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে গেল।তখন তারা সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। সবাই বাঁচাও! বাঁচাও!! বলে চিৎকার করতে লাগল। চারদিকে একদম অন্ধকার।খোলা আকাশের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে লেলিহান আগুনের শিখা।সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য!সঙ্গে সঙ্গে নিচ থেকে সমস্ত সাপ্লাই ভেসেল ও সমস্ত ছোট-বড় শীপ তাদের লাইটের ফোকাস প্ল্যাটফর্মের দিকে ফেলল যাতে সেখানটা কিছুটা আলোকিত হয়।তখন তারা প্ল্যাটফর্ম থেকে বারবার নিচে জলের দিকে লাইট ফেলে চেক করে নিচ্ছে যে কেউ আবার ঝাঁপ দিল কি না কিংবা কেউ জলে পড়ে গেল কিনা! তখন সমস্ত ভেসেল ও শীপগুলি ওদের সাথে খুব কোয়াপরেট করছিল। সময়ের বিবর্তনে তারা সবাই কে কোথায় নিজ বাসভূমিতে চলে গেছে কেউবা এদেশ থেকে গিয়েছে বিদেশে। কিন্তু স্মৃতি মন্থনে সেই দিনের স্মরণীয় সহযোগিতা জীবনে কেউ কোনদিন ভুলতে পারবে না! তাদের সেই দিনের ক্ষণিকের সহযোগিতা যুগিয়েছিল প্ল্যাটফর্মের সেফটি অপারেশন টিমের মনের বল।তারা তখন আগুন নেভাবার জন্য লকার শুট পরে আগুনের দিকে এগিয়ে গেল।তখন আগুন যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা কন্ট্রোলের বাইরে চলে যেতে লাগল।যে কোন সময় আরো বড় ধরনের ব্লাস্ট করে প্ল্যাটফর্মের সমস্ত ক্রিউর প্রাণহানি হতে পারত।এমতাবস্থায় ক্রিউদের বের করে আনতে হলে তা করতে হবে একমাত্র ক্রেনের সাহায্যে।কিন্তু সেখানে বসে ক্রেন অপারেট প্রচন্ড রিক্স হয়ে গেল।কারণ ক্রেন অপারেটটা ছিল পেছনের দিকে ঠিক যে দিকটায় আগুন লেগেছে।জায়গাটা প্রচন্ড রিস্কের পজিশনে পৌঁছে গেল।তাই প্রাণের ভয়ে কেউ অপারেট করতে সাহস পাচ্ছিল না।আগুন বেড়েই চলেছে।হঠাৎ এক অপারেটর সাহস করে ক্রেনের দিকে এগিয়ে গেল কিন্তু তখন তো প্ল্যাটফর্মের পাওয়ার ডিসকানেক্ট করা রয়েছে তাই ক্রেন চলবে কি করে? হঠাৎ তখন কিছুক্ষণের জন্য ইমার্জেন্সি ইলেকট্রিক লাইন সংযোগ করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ক্রেন চালু করে সবাইকে তুলে বোটে নামানো হলো এবং সাথেসাথেই আবার পাওয়ার ডিসকানেক্ট করা হল।
তখন রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ। বৃষ্টি তখনো অবিরাম ঝরে চলেছে। প্ল্যাটফর্মের সকল অফিসারের হাতে তখন একটা করে টর্চ আর হুইসেল বাঁশী।এতক্ষণে সকলের আপ্রাণ চেষ্টায় আগুন কিছুটা আয়ত্বের দিকে আসতে লাগলো।তবুও তখনও ডেঞ্জার পিরিয়ড কাটেনি।সময় বাড়তে লাগল।প্রচণ্ড ঠান্ডায় তখন সবাই কাঁপছে। সময় শুধু গড়িয়ে যেতে লাগল—। কিছুক্ষণ পরে আগুন কিছুটা নিভতে শুরু করলো। তবুও তখন জ্বলছে তবে অনেকটা কম।কিছুক্ষণ পর আগুন আয়ত্তে আসলো।লাউডস্পিকারে অ্যানাউন্স হলো পরিস্থিতি আয়ত্বের দিকে।প্লাটফর্মে আলো জ্বলে উঠলো।সবার বুকে এল জল।তীব্র আতঙ্কের অবসানে পেল স্বস্তি!রাত একটা পঁয়তাল্লিশ।সেফটি অফিসার সবাইকে সিনেমা হলে যেতে বললেন।হলটি ছিল অনেক বড়।সেখানে একত্রে অনেক লোক বসতে পারে।ক্যাম্পবস ড্রাই টাওয়েল আনার অর্ডার দিলেন। ক্যাটারিং স্টাফ ছুটে গেল গ্যালিতে।তাড়াতাড়ি কেউ পাওয়ার লাইন কানেক্ট করছে কেউবা হট প্লেট অন করছে। কেউবা চালু করছে ওভেন।কেউ চায়ের জন্য দুধ আনতে ছুটল। কাউকে কিছু বলতে হচ্ছে না সবাই পরিস্থিতি বুঝে নিজে নিজে কাজে লেগে গেল।
স্টুয়ার্ড আর মেসবয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ড্রাই টাওয়েল সবাইকে দিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর যারা গরম দুধ খাবে তাদের জন্য দুধ,যারা চা খাবে তাদের জন্য চা এনে মেসবয় দিয়ে গেল।সবাইকে বলা হলো এখন কেউ কোথাও যাবে না।গেলে অবশ্যই জানিয়ে যাবে।কারণ তখনো তারা সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নয়।সবাইকে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখতে বলা হলো।তখন রাত দুটো পঞ্চাশ।অ্যানাউন্স হল এখন আমরা কিছুটা বিপদ মুক্ত।ক্রিউরা যে যার মত রেস্টে যেতে পারো তবে সবাই কেবিনের ডোর খোলা রাখবে যাতে ইমার্জেন্সি হলে চট করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।আর বেডের পাশে যেন অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট থাকে। সবাই তখন যে যার মত রেস্টে গেল।মিঃহালদার তখন একটু গরম জলে স্নান করে ফ্রেস হয়ে নিল।তখন সে একদম ক্লান্ত- অবসন্ন!চোখ যেন বুঝে আসছে। শুয়ে পড়ার জন্য চলে গেল কেবিনে কিন্তু ঘুম কি সহসায় আসে?চোখের সামনে শুধু ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলো বারবার ভেসে উঠছে!মাথায় হচ্ছে প্রচন্ড যন্ত্রনা। নিরাময়ের প্রচেষ্টায় চলে গেল গ্যালিতে।কড়া করে এক কাপ চা খেয়ে নিল কিন্তু কোথায় পরিবর্তন? কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যাম্পবস খবর দিলেন BG কোম্পানির উচ্চপদস্থ অফিসারেরা আসছেন সার্ভের জন্য।কিছু স্পেশাল ফুড তৈরীর জন্য অনুরোধ এলো। তখনও মাথা যন্ত্রণা কমেনি।কিছুই ভালো লাগছে না। তবুও আপ্যায়নের প্রয়োজনীয়তায় করতে হবে তাই তাড়াতাড়ি চলে গেল গ্যালিতে।কিছুক্ষনের মধ্যেই দুটি হেলিকপ্টার প্ল্যাটফর্মের হেলিপ্যাডে এসে নামল। তাতে চড়ে আসলেন পনেরো জন অফিসার। তার মধ্যে দুইজন ম্যাডাম।তাঁরা চলে গেলেন প্ল্যাটফর্মের সুপারিনটেনডেন্ট এর কাছে।সব কিছু জেনে নিয়ে ডাইরিতে সব নোট করতে লাগলেন। বিস্তারিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।বার্নিং স্পটের সব ফটো তুলে নিলেন। চলতে থাকল তাদের জরুরী মিটিং।চীফ কুক গ্যালি থেকে স্পেশাল চা কফি আর কিছু স্নাক্স মেসবয়কে দিয়ে পাঠিয়ে দিল।
মিটিং শেষ হতেই তাদের আনা হলো মেসরুমে।এবার স্পেশাল খাবার তৈরি করে সুন্দর ডেকোরেশন সহ পাঠানো হলো তাদেরকে সার্ভ করবার জন্য। তাঁরা সবাই খুব সুন্দর সার্ভিস ও খাবারের জন্য তারিফ করলেন।যাবার সময় সুপারেন্টেনকে সবার সামনে একটা কথাই বললেন- প্ল্যাটফর্ম সহ অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি যা হয় হোক কিন্তু কোন ক্রিউর যেন কোনরকম ক্ষতি যেন না হয়।তারা যেন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে। এই কমেন্টেমেন্টকে সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল। তখন প্রত্যেকের মুখে একটা কথাই ধ্বনিত হলো- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!তখন ওই অফিসারের তাৎক্ষণিক বক্তব্যে সকলেই মুগ্ধ।তাঁরা সকলের শুভেচ্ছা কামনা করে হেলিপ্যাডে পৌঁছালেন। হেলিকপ্টার উড়ে গেল আকাশে।সকলের নজর তখন সে দিকে।দিন চলে যায় আবার ফিরে আসে দিন। ঘটনা হয়ে যায় অতীত।কিন্তু স্মৃতিপটে তা হয়ে থাকে স্মরনীয়!আজও স্মৃতি মন্থনে সেই দিনের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠে অনেকেই—!
–~০০০XX০০০~–