লিপি
স্বাগতা ভট্টাচার্য
*****************
বিন্দু বিন্দু সুখ কুড়াইয়া লইবার অছিলায় অন্ধ তিমিরে জোনাকির ন্যায় খুঁজিয়া চলিয়াছি বিদগ্ধ কবিতার ঘ্রাণ। আপ্রাণ প্রচেষ্টায় গুছাইতে পারি নাই ভঙ্গুর অক্ষরপ্রলাপ। অপ্রতিভ শব্দাবলী দিয়া গাঁথিতে পারি নাই বিরহের মাল্য। অথচ দেখিতে পাইতেছি অশ্রুকণারা কেমন করিয়া হৃদয়ের রক্তে মিশিয়া ক্ষুরধার নদী হইয়া যাইতেছে।…..
আসন্ন নিশিভোর। শীর্ণ হইয়া আসিতেছে নক্ষত্র-নক্ষত্রীরা। সম্মুখে প্রশস্ত রাজপথ। স্নিগ্ধ মলয়ের আহ্বান। অর্বুদকোটি হৃদয় ভেদ করিয়া, অরুণ আলোকে অচেতন নিদ্রার শেষে সমাগত অথৈ পাথার ঊষাকাল। দুয়ার ভেদিয়া দারুণ দীপ্তি।
বৃক্ষে বৃক্ষে পক্ষী, পুষ্পে পুষ্পে মধুকর। সদ্যস্নাত মরাল মরালী, তমালতরুতলে মোহন বাঁশি, বক্ষস্থলে বিরল সুখের মৌন বিলাপ।…
অন্তঃকরণে অনাহুত হৃদস্পন্দন। উন্মুক্ত করিয়াছি হৃদয়ের রুদ্ধ কপাট। উদ্ভ্রান্ত চিত্ত। স্বপ্নীলবর্ণে আঁকা মোর রিক্ত বাউল। মন্দির প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান মনোহর বিগ্রহ। করপুটে অনাঘ্রাতা বকুলের ঘ্রাণ। সংগোপনে নিভৃত আলোর শূন্যতা।…
কিছুই তো করি নাই গোপন। কেমন করিয়া শুধিব আজন্মের ঋণ! ওগো দুর্বোধ! ওগো উদাসীন! শব্দহীন স্তব্ধতায় ছুঁইয়া গিয়াছি বিষণ্ন অনুতাপ। সূর্যাস্তের গভীরে ডুব দিয়া খুঁজিয়া চলিয়াছি সোনালী রৌদ্র, ময়ুরপঙ্খী ঢেউ, সহস্র মেঘরাগ, তেরোটি নদীর ইতিবৃত্ত, আর তাহাদের ভগ্ন তটভূমি। অন্তহীন মোহজালে ছিন্ন করিতে চাহিয়াছি অন্তর্দহনে নির্বাপিত প্রেমের অন্তরঙ্গ অনুতাপ।….
অলীক আচ্ছাদনে ঢাকিয়া রাখিয়াছি হৃদয়ের দৈন্য। আসঙ্গ অনুরাগে চুমিয়া গিয়াছি অস্থির আঁখি পল্লব। তব কণ্ঠে আগমনী সুর, মম বক্ষে আলোকানন্দার ঢেউ। উদাসী হাওয়া বিলি কাটিতেছে উন্মাদিনীর অবিন্যস্ত কেশাগ্রে। শৃঙ্খলিত মন উন্মাদ ওই’ জ্যোতিসমুদ্র মাঝে। বিস্মৃত বাসনায় ওষ্ঠ ভাঁজে অধর সঙ্গম আর বিবসনা অন্তরে মগ্ন নক্ষত্রস্নান। অশ্রুজলে সিক্ত বসন। অতঃপর ক্ষুদ্র হৃদয় নতজানু ওই চিরাশ্রিত বোধিবৃক্ষে।
ক্রমাগত ডুবিয়া যাইতেছি অনন্ত গভীরে। উড়ণচণ্ডী হৃদয়ে আবেগের আন্তঃসলীলা। উপোষী শরীর আগলাইয়া স্নিগ্ধ মাধবীলতা। নির্জন দ্বীপের একাকিত্বে সমর্পিত উন্মাদ উন্মত্ত জলোচ্ছ্বাস।…
অচলায়তনের মায়া কক্ষে যাপিত আমার ভ্রমণ উপন্যাস। বিষণ্ণতার সহিত অলীক সখ্য। মেঘের পরোপারে বৃষ্টি। নির্জনতার বিপ্রতিপে স্তব্ধতা। স্পর্শের ও’পারে আদর মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস।…
শত অনুরাগেও গাঁথিতে পারি নাই আজানুলম্বিত অশ্রুহার। কৃষ্ণচূড়ার ঝরাপাতায় রচিতে পারি নাই অমৃত ফুলশয্যা। মনোবীণার তারে তারে তুলিতে পারি নাই মধুর ঝংকার।…
আকাশ ভেদিয়া অমৃতজ্যোতি। তবু অবগুণ্ঠনে আবৃত প্রতিটা অক্ষরলিপি আকন্ঠ রুদ্ধ প্রহেলিকা। নীলকণ্ঠ পক্ষী হারাইয়া ফেলিয়াছে সুর। নীরব অশ্রুপাতে লেখা হয় নাই সলাজ পত্রাবলী।
কি দোষ করিয়াছি বলো? মরুবক্ষে হারাইয়া গিয়াছে মোদের গোপন অভিলাষ।…
শত শত কবিতার ন্যায়….
–~০০০XX০০০~–