যদি তুমি এভাবে জ্বেলে রাখো আলো
✍ অনিমা মাইতি
যদি তুমি এভাবে জ্বেলে রাখো আলো, ভেসে যেতে পারি অবিরাম ……..
হয়তো বা শেষ দেখা এই স্বপ্ন সায়র,
হয়তো বা এই শেষবার নিস্তরঙ্গ বোধিজলে
এই নির্মোহ পানকৌড়ি আদর !
তবুও কত আলো ওই শান বাঁধানো প্রিয় ঘাট,
অগভীর টলটলে জলে,
ঝরাপাতার রিনিঝিনি দুপুরে
নিস্তব্ধে ফুটে ওঠা শালফুলের হলুদ চাদরে,
সবার অলক্ষ্যে বয়ে চলা এই অনন্ত অভিসারে …!
জানি তুমি এভাবেই হেঁটে যাবে এ আলোপথ
ছড়িয়ে যাবে মুঠো মুঠো ইতিহাস প্রেমের কোমল অক্ষরে
ত্রস্ত কোনো জলফড়িং এর আশ্চর্য উড়ে যাওয়ায়
মায়াময় ঘাসফুলে ,
কিংবা লাজুক পাতাবাহারের রঙের বিহারে !
হয়তো বা সব গোপন বৃক্ষছায়ে
চিরকাল যেভাবে জেগে থাকে প্রথম যৌবনের অনাহুত চুম্বন !
যেভাবে মিশে থাকে বিলীনতার আবেশ
তুমিও মিশে যাবে বাসন্তী সৌরভে !
উপেক্ষা করে জীবনের মায়া রহস্যময় সৃষ্টির প্রাণের হিল্লোলে …..!
আমি একা থেকে যাবো আলোর ভিক্ষাপাত্র হাতে
সহস্র ক্ষুধার দ্বারে , কামনার অগ্নিবানে ,ক্ষমতার গভীরতম খাদে !
প্রত্যাশার ধূসর ছায়া মেখে ঘোলাটে নদীজলে !
তুমি কি পারবে চিনতে আমায় এই অবেলায় ?
বুকে নিয়ে ঝরা শিমুলের আলো
যে অনাঘ্রাতা ওই প্রাচীন পরিখায় অপেক্ষায় তোমার
কুড়িয়ে রাখে তোমার ফেলে যাওয়া পরশপাথর
যে বনপথে হেঁটে গেছ তুমি অসীমের ইশারায় ..!
যে এখন ও লিখে রাখে বৃক্ষপ্রেম
দুরন্ত কিশোরী বুকের দোদুল দোলায়..।
হয়তো বা চিনবে না আমায়
মাখবে না আলো আমার হাত ধরে বসন্তসঙ্গমে
হয়তো বা ধ্রুবতারাটির মতো অসীম মৌনতায়
তুমি রেখে যাবে দিক নির্দেশ
আলোময় জীবন অভিধান !
তবুও ভেসে যাবো আমি তোমার প্রতিটি উপেক্ষায়
এই মানবীর সাধের খেলাঘরে
আমার অসম্পূর্ণ নীরব প্রেমপথে,
মুহূর্তের দোলাচলে ,
তোমাকে না ছুঁতে পারার প্রতিটি ব্যর্থতায়….
তবু আমি গেয়ে যাবো আলোগান
বোধের সুপ্রাচীন কোমল আশ্রয়ে
শেষ দীপ শিখাটির মতো এই নিকষ আঁধারবেলায়।
হৃদয়ের উঠোন ভরে থাকবে অলৌকিক তোমার স্তুতিতে
হে প্রাণপ্রিয় আরাধ্য আমার ।
–~০০০XX০০০~–