“ক্লিওপেট্রা (প্রথম পর্ব)”
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
নদী। মাত্র দুটো অক্ষর। অথচ কত ব্যাপকতা এই শব্দের।প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তিভূমি তৈরি করেছিল। সে জলধারা আজ ও প্রবহমান। আদিম মানুষ নদীতীরে বাস করতো কৌম গঠন করে। যাকে গোষ্ঠীও বলা যায়। এদের মধ্যে শক্তিশালী যে সে হল গোষ্ঠীপতি। পরবর্তী কালের রাজার ক্ষুদ্র সংস্করণ। জলপথে যাতায়াত তখন কার দিনের ভরসা। নদীর জল কত কাজে লাগে উর্বর হয় মাটি। নদীর মাছ সুস্বাদু। টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, নীলনদ, ইয়াংসিকিয়াং, সিন্ধু, গঙ্গা কত নামে নদী মানুষের জীবনের সাথে মিলেমিশে একাকার। ইতিহাস কত কী বলে। নদীর কথা,নারীর কথা।নারী তো নদীর মতোই। কতরূপ তার। কখন ও মা, কখনও বোন আবার কখনও মিতা বা প্রিয়া।
আজ যে গল্পের অবতারণা করবো তা প্রাচীন মিশর দেশের। যার অন্যনাম ঈজিপ্ট। প্রায় দশকোটি মানুষের দেশ । পাশেই সুদান । যিশুর জন্মের দু হাজার বছর আগে এখানে ছিল ফ্যারাও দের রাজত্ব । মিশরের পিরামিড সপ্ত আশ্চর্যের একটি । প্রাচীন মিশরে এই ধারণা বলবৎ ছিল যে মৃত্যুর পর দেহকে সংরক্ষণ করলে আত্মা আবার ফিরে আসে ।দেহে আশ্রয় নেয় ।কতদিনের সম্পর্ক এই দেহের সাথে আত্মার ।কাজেই কদিন আর ছেড়ে থাকবে গো ।তাই তো মৃতদেহ কে ওষুধ মাখিয়ে মমি করে রাখা হয় ।রাজা রাজড়া মারা গেলে পিরামিড করা হয় । খুফুর পিরামিড সব থেকে উঁচু ছিল ।তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন আইফেল টাওয়ার তৈরি হল তখন ই এর গরিমা হ্রাস পেল ।সুদানেও প্রচুর পিরামিড আছে ।
সমাজের উচ্চবিত্ত বা রাজা স্থানীয় ব্যক্তিদের ই মমি বানানো হতো ।কারণ এটা খুবই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার ।হৃদপিণ্ড টা রেখে বাকী পেটের যাবতীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নাক আর যোনিদ্বার বা মলদ্বার দিয়ে বার করে নেওয়া হতো ।
মরুভূমির দেশ মিশর ।ওখানে মরুভূমির জাহাজ উট নয় ।গাধাই ভরসা ।প্রাচীন কাল থেকে মিশরীয়দের জীবনধারা স্বতন্ত্র ।জগত কে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে এই মিশরের মানুষ ।জনসংখ্যার সিংহভাগ সুন্নী মুসলমান ।
তবে খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ ও আছেন ।কথিত আছে প্রথম টুথপেস্টের আবিষ্কার মিশরের মানুষ করেছিল ।মিশরীয়রা মনে করতেন তারা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর সেজে গুজে থাকেন তবে কোন অশুভ শক্তি তাদের কিছুই করতে পারবে না ।দেবতা থোরাস আর দেবী রা তাদের রক্ষা করবেন ।গায়ে লোম থাকলে তা তুলে দেওয়া হতো ।ওরা মনে করতো ওগুলো অশুভ ।
মিশরের ফ্যারাও রা বেশ মোটা ছিলেন ।মধু ছিল নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী ।মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হতেন ।চিকিৎসা বিজ্ঞানে অদ্ভুত উন্নতি ছিল ।এখনকার মতোই স্পেশালিস্ট বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রা ছিলেন ।
রহস্যে ভরা মিশর দেশ ।আজ থেকে চার হাজার বছর আগে যখন মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবীটা সমতল ,তখন কীভাবে ওরা পিরামিড বানিয়েছে ।এখনকার বিজ্ঞানীরা যার তল পায় না ।কত সুড়ঙ্গ,কত সারবদ্ধ ।আরো অবাক করার মতো ছিল ওদের প্রাত্যহিক জীবন ।
নারী পুরুষ নির্বিশেষে রূপচর্চা মিশরীয় দের বৈশিষ্ট্য ।বিশেষ করে কাজল বা সুরমা পরতো ।
কাজল পরলে চোখ সুন্দর লাগবে শুধু তাই নয় কাজলে এমন সব উপাদান ব্যবহার করতো যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ।মধুর সাহায্যে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এমন বাড়াতো যে চল্লিশ বছরের মহিলা কে কুড়ি বছর মনে হতো ।স্নানের সময় গাধার দুধ ব্যবহার করতো ।
মিশর মানেই কিংবদন্তী ।যেন স্বপ্নের রূপকথা ।বিড়াল কে ওরা খুব পছন্দ করতো ।কেউ বিড়াল মারলে সাতবছরের জেল পর্যন্ত হতো ।যিনি বিড়াল পুষতেন তিনি বিড়ালের মৃত্যুতে ভ্রু উপরে দিতেন ।কত প্রাচীন প্রথা মিশরে ছিল যা অভিনব ।রাজা ফ্যারাও রা নিজেদের বংশ কে দেবতার বংশ ভাবতেন ।তাই ভাই বোন দের মধ্যেই বিবাহের চল ছিল ।কিংবা এমন ও হতে পারে সম্পদ রাজ পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার একটা প্রয়াস ।
এক একরাজার অনেক স্ত্রী থাকতো ।এছাড়াও থাকতো যৌনদাসী ।জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ওরা কুমীরের বর্জ্য খেত ।প্রথম জন্মনিরোধক মিশরীয়রা আবিষ্কার করেছিল ।
আর একটি ভয়ঙ্কর প্রথা ছিল মিশরে ।সেটি হল নারীদের যৌনাঙ্গ ছেদ ।যদিও এখন তা অবৈধ ।বৃষ্টিহীন মিশরে জলের উৎস নীলনদ ।আর যে নারী মিশরের রুক্ষ বুকে সৌন্দর্যের সুষমায় ভরপুর ছিলেন তিনি ক্লিওপেট্রা ।ভাবলে অবাক হতে হয় এই নারী কী করে সমগ্ৰ মিশরে তার পরাক্রম দেখালেন ।কী করে তামাম মিশরে বীর পুরুষ তার কথায় উঠতেন বসতেন ।শুধুমাত্র রূপ ? হতেই পারে না ।সৌন্দর্যের সাথে ব্যক্তিত্বের সমন্বয় রাণী ক্লিওপেট্রা।
(এরপর… ক্রমশ…)