।। ফুলটুসি ।।
✍🏻অনিমেষ
[ দ্বিতীয় পর্ব ]
তারপর ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে মা দুগ্গা কে প্রণাম সেরে ফুলি দৌড় দেয় ঝিমলির কাছে। সে ওর প্রাণের বন্ধু, সারাদিনের কাজ খেলাধুলার ফাঁকে কত গল্প করে ঝিমলির সঙ্গে। মাঝে মাঝে ঝিমলির টলটলে জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ লাগে। সময়ের সাথে তিরতির করে বয়ে চলে ঝিমলি, ওর বুকে জেগে থাকে নুড়ি পাথর। ঝিমলির দুপাশে এখন সাদা কাশের বনে ঢেউ খেলে যায়। শিউলি গাছগুলোর নীচে গালিচার মত বিছিয়ে থাকে ফুল। নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের ছায়া পড়ে ঝিমলির জলে, ছোট্ট ফুলি অবাক চোখে দেখে আর মনে মনে মিশে যায় সব কিছুর সঙ্গে। সামনেই দুগ্গা মায়ের পূজো। ওপারে কাশের বন পেরোলেই ঘন জঙ্গলের শুরু। বড় জঙ্গলটা পেরোলেই টিলার সারি আকাশের দিকে মাথা তুলে আছে। ভারি ভালো লাগে তার। নীল টিলারা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে ফুলিকে। খুব ইচ্ছে করে পাহাড়গুলোর পায়ের কাছে পৌঁছে যেতে, তবু পারে না। গাঁয়ের মানুষ বনভোজনে আসে বছরে একদিন জঙ্গলের ধারে। ফুলি ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিল, সবাই বারণ করে, বলে ফুলি নাকি ছোট্ট মেয়ে, হারিয়ে যাবে। ইশ, ফুলিটা যে কবে বড় হবে, তখন একদিন ঠিক চলে যাবে।
ঝিমলির সঙ্গে বকতে বকতে কাটুর, কুটুর আর কিট্টুকে নিয়ে খেলছিল ফুলি। ঝিমলির পাশেই গাছের কোটরে বাসা করেছে কাটুর, কুটুর। ওরা ফুলির পোষা কাঠবিড়ালি জোড়া। পাশের পাড়ার মনসুর চাচার ছেলে হাসেম মন দিয়ে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে ঝিমলির জলে। খানিক দূরে গোয়ালিনী মাসির ছেলে হারু দাদার গরুগুলো ঝিমলির পাড়ে ঘাস খাচ্ছে। আজ এদিকে কেন ? এই সময়টা এদিকটা বেশ ভালো লাগে, তাই হয়তো হারু দাদা ওদের মাঠে না নিয়ে গিয়ে এদিকে এনেছে। হঠাৎ দেখে ছুটতে ছুটতে ঝগড়ু ছুতোরের ছেলে মংলু এসে হাজির। হাতে তার কয়েকটা শাপলা ফুল। মংলু জানে ফুলি শাপলা ফুল ভালবাসে। একসময় শাপলা ফুলকে সে পদ্ম ভেবে ভুল করতো। পুরোহিত দাদু তার ভুল ভাঙিয়েছেন। মংলু বলে, ” ঝিলের জলে অনেক ফুটেচিল, তোর জন্যি নে এলুম। পদ্মগুলো পুরুত দাদুরে দে এইচি পূজোর জন্যি ” । ভারি খুশি হয় ফুলি। ফুলগুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। মংলুকে বলে হাসেমকেও ডেকে আনতে। হাসেম এলে তার ঘর থেকে আনা গুড়মুড়ি ভাগ করে নেয় তিনজনে, আঁজলা ভরে খায় ঝিমলির জল। তারপর ওদের খেলা জমে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেয় দোয়েল, বুলবুলি, ফিঙে, চড়াই, শালিক আর টিয়াদের ঝাঁক। গাছের নীচে হারু দুচোখ বুজে আপন মনে বাঁশি বাজিয়ে চলে, গরুর দিকে খেয়াল নেই। বৈরাগী দাদু একতারা নিয়ে ঝুলি কাঁধে ভিক্ষায় চলেছে গ্রামের দিকে। ভারি সুন্দর গলা বৈরাগী দাদুর, ফুলির আবদারে মাঝে মধ্যে গান শোনায়, বেশ লাগে। ….
[ এরপর… ক্রমশ… ]