“লক্ষ্মীমঙ্গল“
✍ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল থেকেই মঙ্গল মুন্ডা গম্ভীর হয়ে আছে। লক্ষ্মীমণি আজ আসে নি। গঙ্গার বিয়েতে রয়ে গেছে। ওখানে নাচ হবে।আদিবাসী নাচ। ধামসা মাদলের তালে তালে রক্তটাও নেচে ওঠে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই রীতি। গঙ্গাটার বিয়ে। বেশ ধূমধাম করেই হচ্ছে। তবে বর দোজবরে। তা হোক।
ওরা পান সুপারি দিয়ে নেমন্তন্ন করে গেছে। এটাই দস্তুর। এর আগে কত জায়গা থেকে দেখতে এলো। পছন্দসই হচ্ছিল না, বড়ো রোগা। দেখতে এলে ঘটির জল যতক্ষণ না ফেলছে ততক্ষণ বোঝাই যাবে পছন্দ হয় নি। লক্ষ্মীকে দেখতে গিয়ে মঙ্গল তাই করেছিল।
আজ সব মেয়ে বৌ আলতা পাড়ের শাড়ি পরেছে। লক্ষ্মীর সৌন্দর্য সবাই কে ছাপিয়ে যায়। যেন উল্টানো এক কলসী ওর কোমড় থেকে। মরদ রা চেয়ে থাকে আর মঙ্গলের কপাল কে ঈর্ষা করে।
মঙ্গল মুন্ডা। তবে লক্ষ্মীর বাপের বাড়ি সাঁওতাল। পান্ডুয়ার জাগরণ মেলায় গিয়ে লক্ষ্মীর হাত ধরে নাচছিল মঙ্গল।অচেনা দুজন লজ্জা রাঙা। আর তার পরেই মঙ্গল লক্ষ্মীর বাপকে গরু দিয়ে খুশি করে লক্ষ্মী ঘরে তুলেছিল।
আদিবাসী সমাজে কন্যাপণ প্রচলিত।বিশেষ করে কনের ভাই কে গরু দিতে হবে। ওদের মেয়েরা মাঠের সব কাজ জানে।পুরুষের সাথে পাল্লা দেয়।
সকালে গরম ভাত আর শাকভাজা রান্না করে সেটা নিয়ে যায়। বাবুদের কাজের ফাঁকে খেয়ে নেয়।
সজনের পাতা দিয়ে ভাত খেলে বল বাড়ে। কাজ থেকে বাড়ি ফিরতে দুটো বেজে যায়। নদীর মাটি গায়ে লেপে গা ঠান্ডা করে।এই সময় মাছ ধরে। সন্ধ্যে নামলে রেডিও চালিয়ে দুইপাকের উনানে আলুসিদ্ধ ভাত আর মাছের তরকারি। রাতে শোবার আগে হাঁড়িয়া।
এ কদিন বিয়ে বাড়ি। এখন শুধুই আমোদ ফূর্তি। ছেলে বুড়ো বুড়ি সবাই নাচবে। কোনো কার্পণ্য থাকবে না। শুয়োরের মাংস আর ভাত।সঙ্গে হাঁড়িয়া।এই সকাল বেলা শুয়োর মারা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে মেরে তারপর মাংস।
কী অসীম ধৈর্য মঙ্গলের। ও স্কুলে পড়েছে। ওদের সমাজে ওকে মোরল করবে সবাই। লক্ষ্মীর খুব ভালো লাগে। নিজের মরদের কত গুণ। খিলখিল করে লক্ষ্মী যখন হাসে মঙ্গল ভাবে নদী। কী উচ্ছল আর প্রাণবন্ত। আসলে ওরা প্রকৃতি ভালোবাসে। মঙ্গল লক্ষ্মীকে বলেছে জঙ্গল হল মা।বড়াম্মা আর মারাংবুরু ওদের দেবতা। ওদের জীবনে এত শান্তি।ওদের প্রকৃতি আঁকড়ে বাঁচা।মঙ্গল লক্ষ্মীকে বলেছে তুদের বীর সন্তান সিধু আর কানু।আর মুদের বীরসা মুন্ডা।ইতিহাসে নাম করেছে এরা।হাঁ করে লক্ষ্মী শোনে।তীর ছুঁড়েছে ওরা বনবন করে।সাঁওতাল করেছে হুল আর মুন্ডারা উলগুলান।
এক বীর জাতি বটে।শাকপাতা খেয়ে কী করে সব পেরেছে ওরা।
●¤●¤●¤●¤●¤●