করোনা আবহে অনেকের যেমন নিয়মিত অফিস যেতে হচ্ছে, তেমনই আবার কিছু কর্মীকে এখনও ওয়ার্ক ফর্ম হোম করতে হচ্ছে। আর যাঁরা বাড়িতে থেকে কাজ করছেন তাঁদের কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ডিউটি টাইমের থেকে বেশিক্ষণ কাজ করতে হয়। ফলে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়া হয় না। তবে সারাক্ষণ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকলেও কিন্তু নিজের বিপদ। দুপুরে ‘ভাত-ঘুম’-এর প্রতি বাঙালিদের একটা বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমানে চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততায় বছরের বেশির ভাগ দিনেই এই সুযোগ পাওয়া যায় না। তবে ছুটি-ছাটায় সুযোগ পেলেই ‘ভাত-ঘুম’-এর জন্য বান্ধবীর সঙ্গে ডেট বা স্ত্রীর সঙ্গে শপিং অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারেন বাঙালি ছেলেরা। বাঙালি মেয়েরাও এ ক্ষেত্রে কিছু কম যান না! দুপুরে ভাত ঘুমের ঠেলায় ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়া বা কোথাও নিমন্ত্রণে যাওয়া নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান অনেকেই। তবে দুপুরে খেয়ে দেয়ে কী আর অফিসের কাজ করা যায়! দুপুরে খাওয়ার পরই ঝিমুনি বা ঘুম ঘুম ভাব কাজের গতি কমিয়ে দেয় অনেকটাই। কিন্তু জানেন কি, দুপুরের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ আমাদের শরীর-মনের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী! একাধিক গবেষণায় সামনে এসেছে ভাত-ঘুমের বেশ কয়েকটি উপকারিতা। এখানে বলে নেয়া ভালো যে, ন্যাপ বলতে কিন্তু দু বা তিন ঘন্টার নাক ডাকা ঘুমকে বলে না। এমনকি এক ঘন্টাও না। একটি পাওয়ার ন্যাপের দৈর্ঘ্য হয়ে পারে ২০ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট। আসুন, সেগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক…
(১) প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধিঃ ৩০ মিনিটের একটি ছোট্ট ঘুম আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেবে। সচেতনতা বাড়াবে এবং যে কোনো কাজে তড়িৎ শুরুর প্রবনতা বৃদ্ধি করা দেবে। ন্যাপ মস্তিষ্কের জন্যও অনেক ভালো। নাসার পাইলটদের ২৫ মিনিটের ন্যাপের সুযোগ দেয়া হয় তাঁরা যাতে ভালো পারফর্ম করতে পারে। অফিস আদালতেও পরিকল্পিত ৩০ মিনিটের ন্যাপ খুব ভালো ফলদায়ক।
(২) শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, পাওয়ার ন্যাপ মানুষের শেখার ক্যাপাসিটি ও স্মৃতিশক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। যেকোনো সৃজনশীল কাজের আগে পাওয়ার ন্যাপ দারুণ কাজ দেয়।
(৩) হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ দিনের বেলার স্বল্প এ ঘুম বা ন্যাপ মানুষের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ইম্প্রোভ করে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন ন্যাপের মাধ্যমে। অনুরূপ আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, বিকেল বেলার একটি ন্যাপ রক্তচাপ কমায়। (৪) সেল ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করেঃ গবেষণায় প্রমাণিত, ঘুম বা ন্যাপ লিভার এবং লাংস-এর সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।
(৫) টেস্টোস্টেরন বাড়ায়ঃ নিদ্রাহীনতা টেস্টোস্টেরন ও হরমোনের বৃদ্ধি দমিয়ে রাখে। তাই, ন্যাপের মাধ্যমে এর মাত্রা বাড়ানো যায়।
(৬) স্ট্রেস লেভেল কমায় ও ইমিউন সিস্টেম সচল রাখেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ন্যাপিং শরীরে স্ট্রেস উৎপাদকও কমিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়- ন্যাপ ইমিউন সিস্টেমকে বোস্ট আপ করে। রাতের নিদ্রাহীনতার বিপরীতে দিনের অল্প নিদ্রা বা ন্যাপ ইতিবাচক ফল দেয়।
(৭) মুড ভালো করেঃ যারা ন্যাপ নেয়, তাঁরা সকলে ন্যাপিং পছন্দ করে এবং ফ্রেশ ফিল করে। এই ‘ফিল গুড বা ভালো অনুভব’ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মানুষকে কাজে মোটিভেটেড রাখে।
পাওয়ার ন্যাপ নেয়ার পরেও যদি আপনার টায়ার্ডনেস না কমে তাহলে বুঝে নিন আপনি রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাচ্ছেন না। রাতে কমপক্ষে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিন। তাহলে দিনের বেলার পাওয়ার ন্যাপ আপনাকে পুরোপুরি চাঙ্গা করে তুলবে। তাহলে আজ থেকে আর না ঝিমিয়ে একটু করে ঘুমিয়ে নিন আর সারাদিন কর্মক্ষম থাকুন।
——০ XX০—–