মোমপাতা
মৌসুমী ঘোষাল চৌধুরী
মনীন্দ্রনাথ কমার্স ডিপার্টমেন্ট নাইট কলেজ। কলেজে ” মোমপাতা ” তখন ফার্স্ট ইয়ার। অরি তার বেস্টফ্রেন্ড। ” মোমপাতা ” ছবি আঁকে সখে।
অরির অনেক ছবি ড্রয়িং খাতায় এঁকে দিয়েছে।
ছবিগুলো খুব একটা সুন্দর নয়। তবু অরির পছন্দ। ” আজ টিফিনে কি আনলি? ” ” মোমপাতা টিফিন খুলে লুচি তরকারি, কাঁচাগোল্লা দিল। অরি খুব খুশি। ” জানিস তো, ছোটোবেলায় একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম। সে আঘাত দিয়ে চলে যায়। তারপর থেকে ভালোবাসা কাকে বলে জানি না। এই সকালের দিকে একটা ছোটোখাটো চাকরি করি আর সন্ধ্যায় পড়াশুনো। ” মোমপাতা ” বলল, আমার বাবা হার্টের পেশেন্ট । মায়ের চোখে গ্লুকোমা। আমি ও সকাল বেলায় চায়ের দোকান করি। সন্ধ্যায় কলেজ। কলেজের ফ্রেশার্সের দিন এগিয়ে এল। ” মোমপাতা ” একটা কালো শাড়ি পড়ে নেয়। সেই ফ্রেশার্সে ধনী পরিবারের ছেলে ” রুকু ” খুব সেজেগুজে পৌঁছায়। ” রুকু ” বেশ সুন্দর, ” অরি ” ও। ” মোমপাতা ” মোটামুটি দেখতে। একটু গায়ের রঙটা পরিষ্কার। বড়লোক পরিবারের ছেলে ” রুকু “, প্রথম দিন দেখেই ঠিক করে নিল সে ” মোমপাতা ” কে বিয়ে করবে। চটজলদি বিয়ে ও করে। তারপর শুরু হয় চরম কষ্টের দিন। ” রুকু ” জয়পুরিয়া কলেজের একটি অপরূপ সুন্দরী, গুনী, ধনী ” বাসবদত্তার প্রেমে হাবুডুবু খেল। ” মোমপাতাকে ” কটূ কথা বলে, বদনাম দিয়ে সরে যেতে বলল ওর জীবন থেকে।
” মোমপাতা ” এত অপমান সহ্য করতে পারল না। সে এককথায় সরে গেল তার কোলের তিনমাসের ছেলেকে নিয়ে। ” বাসবদত্তার পথের কাঁটা সরে গেল। বাসবদত্তা ” মোমপাতা ” কে সহ্যই করতে পারে না। যেহেতু বিগত দিনে ” রুকু ” ” মোমপাতা” কে নিয়ে কয়েকটি কবিতা লিখেছিল মদের ঘোরে অথচ আদৌ ভালোবাসা নয়। সেই টুকু ও সহ্য করতে না পেরে ঈর্ষায় বাসবদত্তা কখনো ” মোমপাতা ” কখনো মাতাল আবার কখনো গনিকা বলে ওঠে। এগুলোর কোনোটাই ” মোমপাতা ” নয়। “ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে ” মোমপাতা “। অথচ ” মোমপাতা “; ” রুকু ” কিংবা ” বাসবদত্তা কারো সাথেই খারাপ ব্যবহার করে নি। ফ্যালফ্যালে চোখে, ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে অনেক বুক চাপা কান্না চেপে বলে ওঠে, ” ভালো হোক তোমাদের, লাভ টু জেসাস। ” বাসবদত্তা ” এবং ” রুকু ” বিশৃঙ্খল জীবন যাপন ও লিভ টুগেদারে জীবন কাটাল। ” মোমপাতা ” যেখানে থাকত সেখানকার কাউন্সিলারের দয়ায় একটু ভালো চাকরি পেল। বাড়িয়ে দিল টিউশন। সাথে সেলাই, বুনন। ছেলেটি একটু বড় হতে একটা সরকারি স্কুলে ভর্তি করে দিল। একদিন হাতিবাগানের একটি রেস্টুরেন্টে ” বাসবদত্তা “, ” রুকু ” আনন্দে রোমান্টিক মুহুর্ত কাটাচ্ছে। ” মোমপাতা ” এর ছোট্টো ছেলে ” পুচু ” কোল্ডড্রিঙ্ক্স খেতে চাইল। জীর্ন সালোয়ার পরে ” মোমপাতা ” ছোট্টো ছেলেকে নিয়ে ঐ অত বড় রেস্টুরেন্টে পৌঁছালো। ওদের মুখোমুখি হয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। ” রুকু ” তখন ” বাসবদত্তার ” সাথে মদের উৎসবে। ” মোমপাতাকে ” দেখে হাসাহাসি, কটূকথা বলেই চলল। ” মোমপাতা ” গুমরে কেঁদে উঠল। ছেলে অর্ধেক কোল্ডড্রিঙ্কস খেয়েছে সেই অবস্থায় উঠে পড়ল। পথে হাঁটছে, হঠাৎ অরির সাথে ও দেখা। বলল, ” তোকে কত বারন করেছিলাম। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখন বোঝ। ” অরি ছোট্টো ” পুচু ” কে আদর করল। বলল, ” আয়, গরম ভাত, আর মাছের ঝোল খেয়ে যা তুই আর ছেলে। হাত পুড়িয়ে খাস রোজ।
( ক্রমশ : )