হায় সংসার। এরা তবে ননীগোপাল কে মারবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই ছেলেটার জন্য ননীগোপাল সব করতে রাজী ছিল। তার পুত্র। সে তবে খুন করবে ননীগোপাল কে। ননীগোপাল ভাবলে একবার চিৎকার করে বলি আমি তোর বাপ রে হতভাগা। শাস্ত্রশিক্ষা নীতিশিক্ষা কিছুই নেই তোর। ওই প্রেম তোর জানলা দিয়ে পালাবে। আর ধর্ম পত্নী। কী হাল দেশের। সীতা সাবিত্রী দময়ন্তীর দেশের মেয়ে হয়ে আহা!কী পতিভক্তি।
না না। এরকম জীবন ননীগোপাল চায় নি। বয়েই গেছে এদের কথা ভাবতে। আজ মনে হচ্ছে ঐন্দ্রিলার ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত ছিল। কত ভালোবাসা ছিল তার হৃদয়ে। ভবেশ কে বলেছে ননীগোপাল। যেমন করে হোক ঐন্দ্রিলাকে তার চাই। সব বিবরণ দিয়েছে। ভবেশ বলেছে ঐন্দ্রিলাকে খুঁজে দেবে।আর কারো কথা ভাববে না ননী।
এবার ছেলে বেণীমাধব কুঁই কুঁই করতে লাগল। কুহকিনী বললে “খুন প্রমানিত হলে তো কোনও টাকাই পাওয়া যাবে না। তাই এমন করে মারতে হবে যাতে আমাদের চাকরি বা টাকা পেতে অসুবিধা না হয়”। গিন্নি বললে “কিন্তু মরবে কী করে সেই উপায়টা বলো। ওকে যদি মরতে বলি ও কী মরতে চাইবে? তোমরাই বলো?” কুহকিনীর মা বললে “এতদিনের ভালোবাসার মানুষ। আপনি বললে না করতে পারবে না। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করবেন। তাহলেই হবে”।
কুহকিনী বললে “মারবার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে মামণি। কারণ ধরা পড়লে শাস্তি আছে। আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কাজেই যদি খুন প্রমাণ হয় তখন আপনার উপর দিয়ে সাজা হবে। আর এমনিতেই আপনার জীবন কেটেই গেছে। আর স্বামীর মৃত্যুর পর আপনিও বেঁচে থেকে কী করবেন। তাই না?”
ননীগোপাল এর চোখ দুটো এবার ঠিকরে কপালে উঠে এসেছে। আর গিন্নিমার মুখ চুন। ছেলে বললে “দেখেছো মা। কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চলেছি। কেমন দূরদর্শিতা”। গিন্নি কাঁই কাঁই করে বললে “কুলাঙ্গার কোথাকার “।
এবার খেলা জমেছে। ননীগোপাল তাইরে নাইরে করে ঘাড় নাচাচ্ছে। ঠিক তখনই ঘরে এক মহিলা প্রবেশ করল। গিন্নি বললে “কে আপনি? কাকে চাই? “ সকলের দৃষ্টি মহিলার দিকে। ননীগোপাল আশ্চর্য হয়ে গেল। কী অপূর্ব দেখতে। ফর্সা। টানা চোখে কাজল। তার উপরে কী স্বরের মূর্ছনা। গা ভর্তি সোনার গহনা। কুহকিনীর থেকে অনেক সুন্দর। ঠমক ঠমক চলন। গলা কাঁপিয়ে বললে “ননীগোপাল বাবু আছেন। আসলে ওর সাথে খুব দরকার। কয়েক বছর দেখা হয় নি। প্রাণটা আকুলি বিকুলি করছে। “
কুহকিনীর মা খুব জাঁদরেল। বললে “আপনার নাম কী? কোথায় বাড়ি। ননীগোপাল কে কীভাবে চেনেন? বলি আকুলি বিকুলির মানে কি”? মেয়েটা গলা কাঁপিয়ে বললে “প্রেম। আমাদের যে চিরকালের প্রেম। “ মেয়েটার কন্ঠ শুনে ননীগোপাল ও অবাক। কিন্তু ননীগোপাল তো একে চিনতে পারছে না। ঐন্দ্রিলা এখন এরকম হয়ে গেছে নাকি! যাইহোক। ননীগোপাল একে আর ছাড়বে না। শুনেই গায়ে সুড়সুড়ি লাগছে। ওর প্রান ননীগোপাল এর মতো মানুষ এর জন্য আকুলি। আহা। ধন্য নারীজন্ম তোমার”।