হুলো বেড়ালটা মাটিতে বসা, আর মিনি’টা দু’হাত উঁচু একটা পাঁচিলে। লেজটা ঝুলছে , হুলোটা ওকে লক্ষ করে অনেকক্ষণ ধরে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে। বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন কায়দায় ওকে ভোলানোর চেষ্টা করছে। যাকে বলে পটানো।
মিনি’টা যথারীতি পাত্তা দিচ্ছে না, লেজ নাড়িয়ে আপত্তি জানাচ্ছে আর মাঝেমধ্যে করুণা করে কান দুটো নাড়াচ্ছে আর বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। যা-কে বলে ভাও বাড়ানো! হুলোটাও আশা ছাড়ছে না, ধৈর্য ধরে মিষ্টি সুরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে! সাহস করে মিনি’টার ঝুলেথাকা লেজটাতে হাত বোলাচ্ছে। প্রথমে বাঁ হাতে, পরে ভুল বুঝতে পেরে উপযুক্ত সম্মানে ডান হাত দিয়ে আদর করতে লাগল! আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল, কারণ ওদের কথাগুলো বুঝতে পারছিলাম না। তবে বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে এবং আমার সামান্য জ্ঞানবুদ্ধিতে যা কুলোয় তাই বলার চেষ্টা করছি–
হুলো :- বাবা, একটু তাকাচ্ছিসও না মাইরি! হ্যাঁরে, তুই কি আমার উপর কোনও কারণে রাগ করেছিস? মিনি:- বিরক্ত করিস না তো, তোর ন্যাকামো একদম সহ্য হয় না! হুলো:- যাহ্ বাবা, আমার ভালোবাসাটাকে তোর ন্যাকামো বলে মনে হচ্ছে! মি:- ঐ খগেনকাকুদের কালটিটার পেছন পেছন যখন ঘুরিস তখন কোথায় থাকে তোর এই ভালোবাসা? হু:- ছিঃ ছিঃ, এসব তুই কী বলছিস ! তুই থাকতে ওরকম একটা কালো ধুমসির পেছনে কেন ঘুরতে যাব! কাল দেখা হল, তাই দুটো কথা কইলাম- “লকডাউনে বাবুদের যা বাজারের নমুনা তাতে করে চেহারা ঠিক থাকছে না, সাতদিনের ফ্রিজে রাখা মাছ, তাতে না আছে স্বাদ না আছে গন্ধ ! তুই খাচ্ছিসটা কীকরে”! মি:- চুপ কর, বাজে বকিস নে, তোর মতো হ্যাংলাকে আমার হাড়ে হাড়ে চেনা আছে! তোর মতো লুচ ক্যারেক্টার এ তল্লাটে আর একটাও নেই। হু:- তুই কী করলে বিশ্বাস করবি বল। ঠিক আছে, আমি আমাদের টুসু’সোনার দিব্যি কেটে বলছি- “ঐ কালটির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই!” এবার মিনি রেগে গিয়ে হুলোর দিকে মুখ করে বলল- “খবরদার বলে দিচ্ছি, আমার ছেলের দিব্যি কাটবি নে”! হু:- ও, টুসু বুঝি তোর একারই ছেলে, আমার কেউ নয় যেন! মি:- হলেও, তুই একাই ওর বাপ নোস। ধলা, কাশি, স্টোনি ওরাও তো ওর বাপ। হু:- তোর বলতে লজ্জা করছে না, একটা সন্তানের যদি এতগুলো বাপ হয় তবে ভদ্র সমাজে আমি মুখ দেখাব কেমন করে? মি:- এই যা তো এখন থেকে! সমাজ নিয়ে তোর কত মাথা ব্যথা তা আমার জানা আছে। নিজের বেলায় আটিশুঁটি পরের বেলায় দাঁত কপাটি ! আমার ছেলের বাপ তোকে আর হতে হবে না!
এবার বেগতিক দেখে হুলো একটু থেমে গেল, তারপর ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলল-
তোর আর আমার কতো দিনের মেলামেশা, তুই রেগে গিয়ে কী না কী একটু বললি! তার জন্য আমি রাগ করব! ছাড় ওসব কথা, কী খাবি বল, ইদুঁর না চড়ুই ? গাম্ভীর্য বজায় রেখে মিনি উত্তর দিল- “ইঁদুর কালকেই একটা খেয়েছি। আজ একটা চড়ুই হলে মন্দ হয় না। খাওয়া দেখি, তাহলে আমিও তোর ইচ্ছা পূরণের কথাটা ভেবে দেখব। ওদের কথা শেষ না হতেই পাশের পাড়ার হাবলুদের বাড়ির হুলোটা একটা হৃষ্টপুষ্ট শালিক এনে ফেলল মিনির সামনে, ব্যস তাই দেখে মিনির কী গদগদ ভাব , চোখে মুখে খুশির ফোয়ারা ! একগাল হেসে হুলোকে বলল- “ওর কথাই তোকে বলছিলাম, দেখেছিস তো, কেমন আমার খেয়াল রাখে”! হুলোর তো রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে- “এত কষ্ট করে যাও বা মানানো হল, শালাটা একটা মড়া শালিক মেরে নিয়ে এসে হিরো হয়ে গেল!”
বেচারা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না!
ঐ যাহ্, একটা কথা বলতেই তো ভুলে গেলাম- হুলো আর মিনির মধ্যে এই যে গোপন কথাবার্তা হচ্ছিল সেখানে শুধু আমি একাই উঁকি মারিনি, আমাদের বাড়ির উল্টো দিকের একতলা বাড়ির ছাদে একটা হনুমানও মন দিয়ে পেয়ারা খাচ্ছিল আর মাঝে মধ্যে ওদের কথা শুনছিল। শুধু তাই নয়, হলুদ দাঁতগুলো বার করে হি হি করে হেসেও যাচ্ছিল!
যাই হোক, হুলোটা হাবলুদের বাড়ির হুলোটাকে যাচ্ছেতাই রকমের গালাগাল করতে শুরু করল, বেশ ভ্যারাইটি ছিল ওর গালাগালিতে! আজকাল যেমনটি শোনা যায়! অবশ্য হুলোর সব কথা বোধগম্য না হলেও “বহিরাগত” কথাটা ভেংচি কেটে হাত-পা ছুঁড়ে অনেকবার বলেছে- এটা স্পষ্ট শুনেছি এবং দেখেছি। ওই হুলোটা প্রতিউত্তরে যা বলেছে তা আর আমি মুখে আনতে পারবো না! “চোর, লুচচরিত্র” কিচ্ছু বাদ দেয়নি। ওদের কোন্দল যখন চরমে তখন যাদের বাড়ির পাঁচিলের সামনে দুটো হুলোর একটা হুলিকে নিয়ে টানাটানি চলছিল তখন সেই বাড়ির ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে চিৎকার ক’রে এমন একটা বাজে কথা বলল তা শুনে হুলো আর হুলিরা খাবার ফেলে লেজ তুলে পইপই করে পালালো!
এরপর যে ঘটনাটা ঘটল তা শুনলে আপনারা আরও হতবাক হয়ে যাবেন-
আমার সহ-প্রতক্ষদর্শী ঐ হনুমানটা এক লাফে নেমে এসে সপাটে একটা চড় কষাল ঐ ভদ্রলোকের গালে! তা দেখে ভদ্রলোকের গিন্নী বললেন- “বেশ হয়েছে, সব সময় খালি আজেবাজে কথা বলা” !