দার্জিলিং চায়ের সুগন্ধে ভরে উঠল গোটা রান্না ঘর। চা ছেঁকে কাপে ঢেলে ট্রে তে করে নিয়ে এলো শিখা। সঙ্গে প্লেটে বিস্কুট। এসব ওই দোলা বৌদিই শিখিয়েছে। সব কিছু সুন্দর করে সামনে ধরতে হয়। তবে খাবার আনন্দ পাওয়া যায়। বড় বড় চোখ মেলে দেখছিল রিন্টি। দেখছিল শিখার নিপুন হাতের কাজ। দোলা বৌদির চমৎকার সাজানো রান্না ঘর। ঝকঝকে গ্যাসের উনুন। “ ও কোথায় থাকে ?” চায়ে আলগা চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করে দোলা। বিস্কুট মুখে দিয়ে চিবোচ্ছিল শিখা। এবার গিলে নিয়ে উত্তর দেয়, “ ওই তো তারকেশ্বর এর ওই দিকে। এখন আমার কাছে এসেছে। কাজ কর্মের জন্য। দেখো না বৌদি যদি হয়।” “ অর্চনা তো বলেছিল ওর একটা লোক দরকার। তোমাকে দেখে খুব পছন্দ। বলছিল তোমার মতই একজনকে দিতে। মনে আছে তোমার অর্চনাকে?” একটু ক্ষণ চিন্তা করে নেয় শিখা। তারপর বলে ওঠে “ ওই ফর্সা বব কাট চুল। ওই বৌদি তো?” “ হ্যাঁ।” ঘাড় নাড়ে দোলা। “ উনি তো খুব ভালো। ঠিক তোমার মত। তো এখন লোক কি নেওয়া হয়ে গেছে?” ঈষৎ শংকিত স্বরে প্রশ্ন করে শিখা। “ জানি না। ক’দিন কথা হয় নি অর্চনার সঙ্গে। দাঁড়াও। ফোন করে দেখি।” হাতের মোবাইলটা খুলে সামনে ধরে দোলা। মনে মনে দুবার বাবা লোকনাথ কে স্মরণ করে কাজে লেগে যায় শিখা। চিকেন স্টু পছন্দ করে বৌদি। সেটাই করবে। দাদা আবার পাতলা ঝোল মোটেই পছন্দ করে না। চিকেন ও না। তাই দু পিস মাছ বের করে রাখে ফ্রিজ থেকে। বেশ একটু তেল ঝাল করে দেবে রুই মাছের।ভাত বসাতে হবে। চাল টা মেপে রিন্টির দিকে এগিয়ে দেয় শিখা। ধুয়ে ভাত টা বসিয়ে দিক। এদিকে ও স্টু এর জোগাড় করে নেবে। সবজি একটা করতে হবে। আনাজ গুলো দেখতে দেখতে মনে মনে ভাঁজতে থেকে শিখা – কী রাঁধবে? পাঁচ মিশালী সব্জী একটা করলে হয়। দাদা ভালোবাসে। শুকনো শুকনো ওই পাঁচ মিশালী চচ্চড়ি ওর হাতে খোলে ভালো। বৌদিও পছন্দ করে। ওটা করলে আর চিন্তা করতে হবে না। ফটাফট আনাজ কাটতে থাকে শিখা। ভাত বসিয়ে দিয়েছে রিন্টি। মুহ ফুটে কিছু বলার আগেই মাংস ধুতে শুরু করেছে। মনে মনে খুশি হয় শিখা। এই যে বুঝে নেওয়া। কাজ দেখলে ভাবতে পারা কার পর কোনটা করতে হবে। এটাই আসল। মেয়েটার মধ্যে এই বোধ গুলো আছে। কোথাও কাজ করতে গেলে এই গুন গুলো দরকার। কাজটা জুটিয়ে দিতে পারলে বাঁচে শিখা। ঘাড়ে করে আর বইতে হয় না ওই অত বড় সোমত্ত মেয়েকে। আর তাছাড়া অর্চনা বৌদির বাড়ি কাজে লাগলে কপাল ভালই বলতে হবে। বৌদি খুব হাসি খুশি । দেখলেই বোঝা যায় ভালোমানুষ। বৌদির ছোটবেলার বন্ধু। খুব ভাব দুজনায়। ওনার বাড়িতে লোক অবশ্য বেশি। অর্চনা বৌদির দুই ছেলে মেয়ে। শ্বশুর শাশুড়ি, বর। থাকার জায়গা নিশ্চয়ই আছে। না হলে আবার মুশকিল। এই মেয়ে থাকবে কোথায় ? ওর বাড়িতে জায়গা কই ? ভুল হয়ে গেছে। থাকার কথাটা বলা হয় নি তো বৌদিকে। শুধু রান্না নয়। থাকা খাওয়ায় কাজ করতে চায় রিন্টি। পিছন ফিরে একবার তাকায় শিখা। বৌদি কথা বলছে এখনো। এ এখন চলবে। একবার কথা শুরু হলে দু তিন ঘণ্টা কোন ব্যাপারই নয় ওদের কাছে। কী যে এত বকছে ! আসল কথাটা বলল কি? জানিনা বাপু। ওর হয়েছে যত জ্বালা। একজন তো ঘাড়ে গছিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে গ্রামের বাড়িতে বসে আছেন। অন্যজন কারখানায় গিয়ে অ্যামেচারে তার লাগাচ্ছেন। আর ও মরছে ভেবে। মাছে নুন হলুদ দিয়ে রেখেছে রিন্টি। ভাজতে বসালো শিখা। আড়ে আড়ে দেখছে বৌদির দিকে। ওই তো ফোন ছেড়েছে এতক্ষণে। কী কথা হল কে জানে ? “ শোন শিখা।” খুন্তি টা রিন্টির হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাশের রডে রাখা ন্যাকড়াটাতে হাত মুছতে মুছতে সামনে এগিয়ে যায় শিখা। এটাও বৌদির শিক্ষা। আগে ও আঁচলে হাত মুছত। দেখতে বিচ্ছিরি লাগত। বৌদি বারন করল। তারপর থেকে আর করে না। “ হ্যাঁ বৌদি। বল।” “ অর্চনা বলছে রান্নার লোক রাখা হয়ে গেছে। কিন্তু এমনি সব সময়ের জন্য একটা লোক দরকার। প্রয়োজন হলে রান্না করতেও হবে। আর অন্যান্য কাজ তো আছেই। ও কী করবে?” দ্রুত চোখ ফিরিয়ে রিন্টির দিকে তাকায় শিখা।
খুব সুন্দর লেখা