বুধিয়া
ডাঃ রঞ্জন কুমার দে
বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট একটা গ্রাম কেন্দুয়া, গ্রাম না বলে অবশ্য একে এক আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল বলা যেতে পারে। তথাকথিত মানব সভ্যতার ছোঁয়া আজও যে এদের উপর ঠিকমত প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তা এখানকার মানুষগুলোর আদব কায়দা, আচার আচরণ, সরলতা, পোশাক আশাক দেখলেই অনুধাবন করা যায়।
এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রা,খাদ্য, বাসস্থান, এবং জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস বনের ওপর নির্ভরশীল।যেখানে তারা ফল, সবজি, শিকড়, এবং অন্যান্য খাদ্য সংগ্রহ করে।বন থেকে সংগ্রহ করা কাঠ, পাতা, ফল, বীজ, ইত্যাদি বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের ছেলেরা ভোররাতে জঙ্গলে ঢুকে ফল, ফুল, সবজি, মধু সংগ্রহ করে। যত বেলা বারে , জংলী জানোয়ার আর পাগলা হাতির সামনে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে। তারপর আট দশ ক্রোশ পথ হেঁটে যেতে হয় বড় রাস্তার ধারে বড় বড় রিসোর্ট গুলোতে । কেউ মধু তো কেউ আনাজ বেচে সামান্য কিছু রোজগার হয়।
গ্রামের এক কোণে কুলকুল করে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক নদী, প্রতি বছর বর্ষায় নদীর জল উপচে পরে। গ্রামের চারিদিকে শুধুই ঘন জঙ্গল, বড় বড় গাছ গুলি শয়ে শয়ে বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে, এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বার্তা বাহক হিসেবে। উচু উচু গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকেই ছোট ছোট কিছু বসতি। এক দু ক্রোশ দূরে আবার কিছু বসতি নিয়ে এক একটা গ্রাম, মেরে কেটে ত্রিশ চল্লিশ ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রত্যেক টা গ্রামে। শাল, মহুয়া, চাপ, পিয়াল, বাঁশ, আকাশী ইত্যাদি সব গাছ যেনো গ্রাম গুলোকে যুগের পর যুগ ধরে আড়াল করে রেখেছে গ্রাম গুলোকে, রক্ষা করে চলেছে।
এমনি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল বুধিয়া, কাল রাতে নেশাটা একটু বেশীই করা হয়ে গেছে । এই এক বদভ্যাস তার । বুধির মত পরোপকারী শুধু এই গ্রাম কেনো, আসে পাশের তিন গ্রামে নেই। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই তাকে যেতেই হবে নদীর পাড়ের ঠেকে। যদিও সে এক ভারের বেশি মহুয়া কোনোদিনই খায় না। কাল যে কি হলো রতন খুড়োর পাল্লায় পড়ে দু ভার সে খেয়ে নিয়েছিল।
তাই আজ ভোরে ঘুম টা ভাঙেনি। যখন ঘুম টা ভাঙলো তখন সূর্য মামা গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে তার স্নিগ্ধ আলোয় উঠোন টাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে।
বউ মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলো ,তুই কি আজ আর যাবিক লাই। পাতা না আনলে হারি চরবেক লাই কিন্তু।
লজ্জায় মাথাটা হেট হয়ে গেলো বুধিয়ার।
ছি ছি ই আমি কী করলেম। মনে মনে বলল সে।
পাঁচ বছরের ছেলেটা একমনে দুয়ারে বসে মুড়ি খাচ্ছে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল বুধীয়া। আর কথা না বাড়িয়ে হাত মুখ ধুয়ে শত ছিদ্র গামছা টা কাধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বুধি।
বউয়ের ঝামটা খাওয়ার ভয়ে বুধি বেরিয়ে তো পড়ল কিন্তু এত বেলায় জঙ্গলে ঢুকবে কীকরে তার কূলকিনারা করে পেলনা সে। এদিকে শাক পাতা না আনলে যে আজ হাঁড়ি চরবে না টা বউ পরিষ্কার বলে দিয়েছে। বাইরে সবাই বুধিয়া কে সমীহ করে চলে, কারণ সে উচিত কথা বলে , কিন্তু বউয়ের সামনে এসে কেমন যেনো খেই হারিয়ে ফেলে সে। তবে হাজার মুখ ঝামটা খেলেও কিন্তু বুধিয়া তার বউ অন্ত প্রাণ, সে জানে বউ ও তাকে খুব ভালো বাসে। বাইরে শক্ত হলেও মনটা খুব নরম এই মাইয়া ডার।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা শাল গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বাবা বলতেন এই সব গাছ গুলো নাকি তাদের পূর্ব পুরুষ রা লাগিয়েছে। একেকটা গাছ একেকটা মানুষের স্মৃতি বহন করে চলেছে। তাদের এখানে রীতি আছে , যার বাড়িতে সন্তান জন্মাবে তাকে সবার বাড়িতে গিয়ে একটা করে গাছ দিয়ে আসতে হবে। কেউ মারা গেলে তার কবরের উপর গাছ লাগানো হয়, কথিত আছে যে পূর্বপুরুষদের আত্ম এই গাছ গুলোকে রক্ষা করে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে। বুধিয়া যে গাছটার সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছে সেটা তার দাদুর কবরের উপর নিজের ডাল পালা মেলে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে, যেনো ওর দাদুই তার মাথায় হাত রেখে ছায়া প্রদান করে চলেছে।
বুধিয়া যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তার ঠিক পাস দিয়েই সরু মেঠে পথ টা চলে গেছে, আরও তিন ক্রোশ হেঁটে গেলে তবে বড় পাকা রাস্তায় গিয়ে পড়েছে। বড় রাস্তার ধার থেকে এক অজানা কারণে ,আস্তে আস্তে জঙ্গলের অস্তিত্ব লোপাট হতে শুরু করেছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় পাকা বাড়ি। শহর থেকে মানুষজন আসে। সবাই ইনজিরি না কিসব ভাষায় কথা বলে। মেয়েগুলো কেমন ছোট ছোট জামা পরে। জঙ্গলের মধ্যে সবাই বেড়াতে আসে, কেউ হেটে কেউ বা গাড়ী করে । বুধিয়া রা দুর থেকে দেখে। সবাই এসে ফিস্টি না কিসব যেনো করে, নাচগান করে , খায় দায় তারপর সন্ধ্যে হওয়ার আগে আবার সেই বড় বড় বাড়ি গুলোতে ফিরে যায়, রেখে যায় এক স্তূপ জঞ্জাল।
এই সেদিনকেই করা যেনো এসে সব জমি মেপে দেখছিল , বলল এখানেই নাকি গাছ কেটে সব ইট পাথরের বাড়ি হবে। শহর থেকে লোকেরা আসবে ফিষ্টি নিষ্টি করতে। বুধিয়া চুপ করে শুনছিল ওদের কথা। রতন খুরো দেখেছে এই সেদিনকেই করা যেনো এসে সব জমি মেপে দেখছিল , বলল এখানেই নাকি। গাছ কেটে সব ইটপাথরের বাড়ি হবে। শহর থেকে লোকেরা এখানেও আসবে ফিষ্টি নিষ্টি করতে।
রতন খুড়ো সেদিন গ্রামের সবাই কে ডেকে বলেছিল। এই গাছ আমাগো প্রাণ, মোরি যামু কিন্তু গাছ কাটতে দিবেক লাই। সবাই এক স্বরে তাকে সমর্থক করেছিল, বুধিয়াও ছিল সেখানে। রতন খুড়ো তাদের গ্রামের সব থেকে বয়স্ক মানুষ, বিয়ে থা করেননি, সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। ঠিক গ্রামের মাঝখানে তার ছোট্ট কুড়ে ঘর, সারাদিন বসে শুধু গাছের ঔষধি বানায় আর সন্ধ্যে হলেই মহুয়ার ঠেকে। এই রতন খুড়োর কাছেই বুধিয়া তাদের পূর্বপুরুষ দের কত গল্প শুনেছে, তাদের সভ্যতার ইতিহাস, তাদের সংস্কৃতি,সব কিছুই আবর্তিত এই জঙ্গল কে ঘিরেই , সেই জঙ্গলই যদি না থাকে তো তাদের অস্তিত্বও তো থাকবে না।
রতন খুড়োর ঘরের ঠিক পাশেই বড় অশ্বত্থ গাছটার গুড়িটা এমন ভাবে বেড়ে উঠেছে যে যেনো সেটা এক গণেশ দেবতার আকার নিয়েছে। এটাই তাদের আরাধ্য দেবতা। হাজার বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তারা এই গাছে অবস্হিত গণেশ দেবতার পূজা করে আসছে।এই দেবতার মাহাত্ম্য শুধু তাদের গ্রামে নয়, আসে পাশের তিন চারটে গ্রামের মানুষ ও তিন চার ক্রোশ পথ পেরিয়ে এসে এখানে পুজো দিতে, কথায় আছে যে পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এই গণেশ দেবতার মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়েছে, দেবতা কাউকে নিরাশ করেন না। বুধিয়াও এই দেবতার আশীর্বাদেই বিয়ের অনেকদিন বাদে সন্তান লাভ করেছে।
হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা ভাবতে গিয়ে বুধিয়া ভুলেই গেছে যে আজ শাক পাতা না আনলে দুপুরের খাবার জুটবে না। পেছন থেকে রতন খুড়ো ডেকে উঠল, বুধি নাহি, কৌণে যাস বাপ।
ও খুরা আজ তুমার ল্যাগে সোহালে উঠতি পারি নাই গো। জঙ্গলে যামু কহন বলো তো। শাক আনতি হবে, কাঠ আনতি হবে, নালি আজ আর হরে চুলা জলবোক লাই।
আরি বস দিকিনি, সে নালি আজকে আমার কাছ থেকে লয়ে যাবিক্ষণ। কিন্তু এদিহে যে বড় বিপদ বাপ। জঙ্গল কাটবো বইল্যা মানষের আনাগনা যে বারসে ইদিকে , হে কি দ্যাখছিস তু।
হু হুই,,,,,বইললেই হলো নাকি, গাছ উড়াইয়া লিবেক। ফুসে উঠলো বুধিয়া।
প্রাণ টরে লিয়ে লিমু না। ই জংলা মোদের মা আছেক বটে। মোদের পূর্বপুরুষ দের ভিটা আছে, মোদের রুজি রোজকার, পেটের ভাত যোগায় এই জঙ্গল। রাগে ফেটে ওঠে বুধিয়া।
শান্ত হয় রে বুদি, উরা বড়লোক আছে রে , উদের অনেক ক্ষেমতা, আমরা উদের সাথে পারবক লাই রে।
সে দেখা যাবে খুন, একবার আসুক লাই, দেখিয়ে দিব, আমারও নাম বুধিয়া আছেক বটে।
এবার বুধিয়া উঠে পড়ল, তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে হবে, নয়তো বউয়ের কাছে আবার ঝামটা খাবে। খুড়োর কাছ থেকে শাক আর জ্বালানি কাঠ নিয়ে বুধি বাড়ির দিকে চললো।
বাড়ি পৌঁছে বুধিয়া দেখলো বাচ্চাটা সারা টা উঠোনে দৌড়ো দৌড়ি করছে। বউটা তার ঘরের পেছনের বট গাছের সামনে দাড়িয়ে আছে, কেমন যেনো থম মেরে আছে। ও বউ কি হলো রে তোর, বুধিয়া ছুটে গেলো। শরীল খারাপ লাই তো। একরাশ চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন করলো বুধিয়া।
ভালো করে লক্ষ্য করলো বউয়ের মুখটা।বউ তুই কাদছিস কেনে??
তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে বউ বলল কিছু লয়। শাক আনছিস? রেইন্না টা করে লই।
তাড়াতাড়ি মুখটা সে ঘুরিয়ে নিলো, খুব চাঁপা স্বভাবের এই মাইয়াডা, বুক ফাটবে তবু মুখ ফুটবে না। বুধিয়া আর কথা বাড়ালো না,সে জানে যে বউ ঠিক নিজের মন চাইলে একমাত্র বুধিয়া কেই সব মনের কথা বলবে। তাই জোর করে লাভ নেই। অনেক বেলা হয়ে গেছে ,বুধিয়া নদীতে গেলো স্নান করতে, আর তার বউও রান্নায় মনো নিবেশ করলো।
দুপুরে খেতে খেতে বউ তার মুখ খুললো, সুন্দরীর মা বলছিল এই জঙ্গলে গাছ উড়াইয়া বড়া বড়া বাড়ি হবেক ,মোদের ঘর দোর ভেঙে লিবেব।
বুধিয়া অবাক হয়ে তাকালো বউয়ের দিকে, গাছ কাটার ব্যাপারটা তাহলে সারা গ্রামের রাষ্ট্র হয়ে গেছে। কি উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে বলল ,ওসব ছাড়তো বউ, গাছ কাটতে আসুক একবার। দেখে লিবো ওদেরকে, এক্কেরে রক্ত ঝরাইয়া দিমু না।
সন্ধ্যে নেমে এসেছে প্রায়। জঙ্গলের মধ্যে সূর্যের আলো ভালো করে পৌঁছায়না। তাই সন্ধ্যে টা একটু তাড়াতাড়িই নেমে আসে। ঝপ করে অন্ধকার নেমে গেলো, দুর থেকে মাদলের সুর ভেসে আসছে। চারিদিকে ঝি ঝির ডাক। না ইলেকট্রিকের আলো আজও এখানে এসে পৌঁছায়নি, বারান্দায় লম্ফ টা জ্বালিয়ে বউ উঠোনে তুলসী গাছে জ্বল ঢেলে প্রদীপ দিতে ব্যস্ত। আর বুধিয়াও ঘরের মধ্যে ছেলেটার সাথে খুনসুটি করছে।
ও বুদি, বুদি রে….বাইরে থেকে মুকরু ডেকে উঠল।
বুধিয়া ছুটে বেরিয়ে এলো,তু এহন এহখানে কি করছিস বটে?
মকরু কেঁদে উঠলো, মেহেটার গা খুব গরম রে, সোহাল থ্যাকে। দাগতার তারে লিয়ে যেতে হবেক রে ।
তু চল না। বলেই বুধিয়া বেরিয়ে পড়ল, একবার শুধু বউয়ের দিকে তাকালো, চোখাচোখি হলো, বউ সম্মতি দিলো যেনো।
ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারিদিকে শুধু তারার মতো জোনাকি পোকারা খেলা করে বেড়াচ্ছে। অন্ধকার চিরে এগিয়ে চলেছে তিনটে মানুষ। সামনে একটা হ্যারিকেন নিয়ে মকরু, পেছনে মকরুর বেহুঁশ মেয়েটাকে কাঁধে নিয়ে ছুটছে বুধিয়া, সবার শেষে মকরুর বউ। দশ ক্রোশ পথ গেলে তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ,ডাক্তার থাকেন সেখানে। ঘণ্টা খানেক হাঁটার পর তারা পৌঁছালো সেখানে। পুরো স্বাস্থ্য কেন্দ্র টাও যেনো ঘুমন্ত পুরী হয়ে আছে।
ও ডাগদার, ডাগদার গো, কাতর কন্ঠে চেঁচাচ্ছে তিনটে মানুষ। কিছুক্ষণ পর একটা ঘরের আলো জ্বলে উঠলো, একজন মধ্যবয়সী মহিলা বেরিয়ে এলো।
কে রে তোরা, এত রাতে এখানে কি করছিস, চেচাসছিস কেনো রে।
ও ডাগদার, দেখ না এই মাইয়াটার হুস ফিরছে না কেনে। বুধিয়া বলে উঠলো।
আমি তো ডাক্তার নই রে, আমি তো কম্পাউন্ডার। এখন তো ডাক্তার বাবু এখানে আসবে না রে। মেয়েটার গায়ে হাত দিলো সে। বাচ্চাটার গা টা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
ঘর থেকে একটা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এনে ওদের হাতে দিয়ে কম্পাউন্ডার বাবু ওদের বললেন ,এই নে এই ওষুধ টা খাইয়ে দে, যা ভাগ এবার ,কাল সকালে নিয়ে আসবি মেয়েকে।
দাগটার রে একবারটি ডাকো না, কাতর আবেদন করলো বুধিয়া।
এবার কম্পাউন্ডার বাবুর ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো, কর্কশ গলায় বললেন, বলছি তো এখন ডাক্তার বাবু আসবেন না। উনি সন্ধ্যার পর কোয়ার্টার থেকে বেরোবেন না, সকালে আসবি। আর যদি ডাক্তার দেখানোর এতই সখ থাকে তো বিষ্ণুপুরে বড় হাসপাতালে চলে যা।
সে আর দাঁড়ালো না, সপাটে ঘরের দোর বন্ধ করে দিলো।
বুধিয়া ,জানে এখান থেকে বিষ্ণুপুর পনেরো থেকে কুড়ি কিলোমিটার রাস্তা। হেঁটে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে। মাইয়াটারে বাঁচানো যাবে না হয়তো।
মকরুর বউ টা সমানে কেঁদে যাচ্ছে।
মকরু মিনমিনে গলায় বলল ও বুধি মাইয়াটা বাঁচবেক লাই।
বুধি মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলো, গুলি টা খাওয়াস লাই কেনে এখনও। বুধিয়ার মাথাও সেই মুহূর্তে কাজ করছিল না। এখন শেষ ভরসা রতন খুড়া।
চল ঘর চল। বলেই বুধিয়া একবিন্দুও সময় নষ্ট না করে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে ছুটতে থাকলো।
রতন খুড়া মহুয়ার ঘোরে বারান্দায় বসে ঝিমোচ্ছিল।
ও খুড়া মাইয়াডারে দেখো দেখি, বুধিয়ার চিৎকার শুনে খুড়োর ঘোরটা যেনো কেটে গেলো। বড় বড় চোখ করে তাকালো ওদের দিকে।
হা হয়ে দেখছিস কি খুড়া ,তাড়াতাড়ি তোর বুটি গুলা বার কর, মাইয়াটারে বাঁচা রে।
এবার রতন খুড়োর নেশাটা পুরো কেটে গেলো।অভিজ্ঞ বৈদ্য রতন খুড়া মেয়েটাকে দেখেই বুধিয়াকে বলল শিগগির যা বাপ, জঙ্গল থেকে এই পাতা গুলা আন তো।
খুড়োর আদেশের অপেক্ষায় ছিল যেনো বুধিয়া। নিমেষের মধ্যে মগরুকে নিয়ে ছুটে গেলো। ছোটো বেলা থেকে খুরার সাথে অনেক পাতা জোগাড় করেছে সে। তাই এই পাতা নিয়ে আসতে তাদের খুব বেশি সময় লাগলো না।
তারপর রাতভর চললো খুড়ার হাতযশ। অনবরত সে পাতা বেটে চলেছে আর কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাটার মুখে তার রস দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, অন্ধকারের গা চিড়ে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং যমরাজ। লরে যাচ্ছেন প্রায় একশ বছর বয়সী এক অশীতিপর বৃদ্ধ, রতন খুড়া।
কোথায় যেনো ভোরের পাখিগুলো ডেকে উঠল, অল্প অল্প দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। মেয়েটা চোখ খুলে তাকিয়েছে। মা বলে ডেকে উঠল। মকরুর বউ বসে বসেই ঝিমোছিল, মা ডাক শুনেই আনন্দে জড়িয়ে ধরলো তার মেয়েকে।
সকাল থেকেই কেন্দুয়া গ্রামের সাজু সাজু রব। চারিদিকে সানাইয়ের শব্দ, ঘরের চালের বুলবুলি পাখিটাও যেন আজ ডাকতে ভুলে গেছে। কোথায় সেই সকালের মৃদু বাতাসে পাখিদের কিচিরমিচির গান। তার স্বরে মাইক বাজছে। একটা খোলা জায়গায় প্যান্ডেল বাধা হয়েছে। চারিদিকে নতুন লোকেদের আনাগোনা। গ্রামের মানুষ সবাই ভয়ে শিটিযে আছে। আজ নাকি শহর থেকে কোন নেতা আসবে। তার জন্যই এত আয়োজন। সকালে কয়েকটা অচেনা ছেলে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে ছেলেদের জন্য নতুন পাঞ্জাবি, মেয়েদের জন্য নতুন শাড়ি ও বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা দিয়ে এসেছে। বলে দিয়েছে , যেন সবাই নেতা আসার আগে , স্নান করে নতুন কাপড় পড়ে, হাতে ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করে, আর নেতা আসলেই তাকে যেন পরিয়ে দেয়। কিন্তু খবরদার নেতার গায়ে ছোঁয়া যেন না লাগে, তাহলেই কেলেঙ্কারি।
বুধিয়া হতভাগ হয়ে সব দেখছে, বুঝতে পারছিল না এতকিছু আয়োজন কেনইবা আজ। সব চ্যাংড়া পোংরা ছেলেগুলো চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা আজ কতই না ব্যস্ত। তাদের মধ্যে হাত কাটা একটা ছেলে সবাইকে কি সব বোঝাচ্ছে আর সবাই তার কথা অনুযায়ী কাজ করে চলেছে। বুধিয়া এই ছেলেটাকে চেনে। ও আসে মাঝে মাঝে ওদের গ্রামে। বছর খানেক আগে একবার এসেছিল। কি একটা কাগজে সবাইকে ছাপ দিয়ে নিয়ে গেছে। বলেছিল সবাইকে ঘর করার জন্য টাকা দেবে। কিন্তু সে টাকা আর তারা পাইনি। আর একবার এসেছিল ভোটের আগের দিন রাতে, সবাই কে রাতভর মহুয়া খাইয়েছিল, আর সকালে বলে গিয়েছিল কেউ যেন ঘর থেকে না বেরোয়, ভোট নাকি ওরাই দিয়ে দেবে।বুধিয়া কানাঘুষে শুনেছিল, এই ছেলেটার হাত নাকি বোম বাঁধতে গিয়ে উড়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর একজন মাঝারি মাপের নেতা এলেন সাথী থানার দারোগাবাবু। হাত কাটা ছেলেটিকে ডেকে বলল কিরে নেপু সব ঠিক আছে তো। হ্যাঁ দাদা একদম ঝাক্কাস। তুমি একদম চিন্তা করো না আমি সব সালটে দেবো। দাদা এবার আমার পঞ্চায়েতের টিকিটটা পাবো তো। পাবি রে পাবি একবার দাড়, আগে রিসোর্টটা বানাতে দে, তারপর যা চাইবি তাই দেব।
আজ গ্রামের কেউ কাজে যায়নি, কারোর ঘরে হাড়ি চাপেনি। বাচ্চাগুলো খিদের জ্বালায় কাঁদছে। ঠিক সকাল এগারোটায় হুকুম হল, এবার যেন সবাই জামা কাপড় পরে তৈরি হয়ে নেয়। পাক্কা দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর, হঠাৎ করেই রব উঠল,মন্ত্রী মশাই এসে গেছেন। তিনি গ্রামের লোকের দিকে ফিরেও তাকালেন না,, সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সোজা চলে গেলেন মঞ্চের দিকে। সেখানে সেই মাঝারি নেতা তাকে মালা পরিয়ে দিল। তারপর নিজেই মাইক নিয়ে বলতে থাকলো, আজ আমাদের খুব আনন্দের দিন ইমিলি সাহেব নিজে এসেছেন আমাদের মধ্যে। এবার আপনাদের সব দুঃখ ঘূচে যাবে। মাইকটা এগিয়ে দিলেন বড় নেতার দিকে।
উনি বলতে থাকলেন বন্ধুগণ আমাদের সরকার আপনাদের সব দিয়েছে মাসে মাসে মায়েদের হাতে টাকা দিচ্ছে, আপনাদের ঘর করার জন্য টাকা দিয়েছে, ছোটদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে,আপনাদের জন্য বিনা খরচে বড়ো বড়ো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, আপনাদের চাল ডাল দিচ্ছে, এরকম আরো কত কি দেওয়ার কথা উনি বললেন। এ ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মনে মনে হয়তো ভাবছে, আধ পেঠা খেয়ে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলোর সাথে এই ন্যাতা কি মজা করছে।
উনি আরো বলতে লাগলেন, আজ আমি আপনাদের জন্য এমন এক ব্যবস্থা করে যাব যাতে আপনাদের সারা জীবনের খাওয়া পরার অভাব না হয় । এখানে আমরা রিসোর্ট বানাবো, শহর থেকে মানুষ বেড়াতে আসবে ,আপনারাও কাজ পাবেন, আপনাদের ছেলে মেয়েরা সুখের মুখ দেখবে। আপনাদের ভালো করার দায়িত্ব আমরা নিলাম। হাততালিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠলো, চাঁপা পরে গেল এই আদিবাসী মানুষ গুলোর বৃথা আর্তনাদ।
ইমিলি সাহেব ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন, তারপর যেমন এসেছিলেন তেমনি সাঙ্গবাঙ্গ নিয়ে বিদায় নিলেন।গ্রামবাসীর দিকে একটিবারের জন্য ঘুরেও তাকালেন না। ন্যাতারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, এত এত মানুষ কেমন যেন নিমিষীর মধ্যে হাওয়া হয়ে গেল , মানুষের চিৎকার কলোরব সব যেনো নিমেষের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল, কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা। আবার পাখিদের কিচির মিচির শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠলো। সবার শেষে গেল সেই হাত কাটা ছেলেটি। যাওয়ার আগে তার এক সাকরেত কে বলে গেল, দেখিস চাদু কাল থেকেই কিন্তু কাজ শুরু হবে। বুলডোজার আসবে গাছ কাটা শুরু হবে কোনরকম ব্যাঘাত যেন না ঘটে।
গ্রামের সবাই তখনো চুপ করে বসে, যেন বাকরুদ্ধ। প্রথম কথা বলল রতন খুড়া।
ইরা সব শয়তান, মোদের জীবন বরবাদ কইরতে ইসেছে। সব শেষ করে দিবেক। সব গাছ উড়িয়ে লিয়ে যাবেক যে, মোরা কি নিয়ে বাচুম। চারিদিক থেকে কান্নার রোল উঠলো।
ও খুড়ো উপায় কি লেই রে। বুধিয়া বলে উঠলো।
জানি না রে বাপ।
এই মানুষগুলোর জীবন জীবিকা সবকিছুই তো এই জঙ্গলকে ঘিরে। এদের রুজি রোজগার তো এই জঙ্গলেই। জঙ্গল এদের মা বাবা সবকিছু। এই বড় বড় একেকটা গাছ তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে শত শত বছর ধরে। এই গাছ কেটে নেওয়া মানে একটা আদিবাসী জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন করে দেওয়া।ভূখাপেটে থাকা অশিক্ষিত মানুষগুলোর কাছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আর কোন উপায় রইল না। কি করবে, কার কাছে যাবে, কিভাবে প্রতিরোধ করবে, সে চিন্তা ভাবনার বুদ্ধি বা ক্ষমতা কোনটাই যে এদের নেই। একটা দমকা হাওয়ায় যেন এই আদিবাসী মানুষ গুলোর সুখ, শান্তি সবকিছু যেনো ওলট পালট হয়ে গেল।
অভুক্ত ক্লান্ত শরীর নিয়ে যে যার ঘরে ফিরে গেল।
সারাটা রাত ঘুমোতে পারিনি বুধিয়া। শুধু এপাশ-ওপাশ করেছে।ও বউ ঘুমোলি রে। সে জানে তার বউও তাকে ছাড়া ঘুমোতে পারে না।দুটো নিদ্রাহীন মানুষ যেনো আজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার শপথ নিতে ব্যস্ত।
প্রতিদিনের মতো আজকের সকালটাও তার স্নিগ্ধতা দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। তবে কোথায় যেন একটা সুর কেটে যাওয়ার অনুররণ, বিষাদের ছায়া। সকাল যত বাড়ছে মনের আশঙ্কাও তত বাড়ছে। এই বুঝি সবাই এলো গাছ কাটতে।
বেলা দশটা নাগাদ সবার আশংকাস কে সত্যি করে জঙ্গলে বিকট শব্দে বুলডোজার ঢুকলো। সাথে সেই হাত কাটা ছেলেটি ও তার সাগরেদরা। গ্রামের মানুষ হা হা করে ছুটে গেল, কান্নার রোড উঠল,। উ ভাই মোদের কিছুটি চাই না, ই গাছ মোদের প্রাণ টা আছে রে, উগুলো কাটিস লাই রে। রতন খুড়ো ছুটে গেল, তুর পায়ে পরি বাপ।
হাত কাটা নেপুর পায়ে লুটিয়ে পরল রতন খুড়ো।
আই বুড়ো ছাড়, পা ছাড় বলছি।
না ছার বুক লাই, তু আগে কথা দে, ই গাছ তুরা কাটবিক লাই।
এ বুড়ো কি বলে রে, এর যে দেখছি বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে। ছাড় বলছি, পা টা ঝটকা মেরে ছড়িয়ে নিলো সে।রুগ্ন, শীর্ণকায় রতন বুড়ো দুহাত দূরে ছিটকে গেল ।
এই দেখে বুধিয়ার যেন রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠলো।শরীর কঠিন হলো ইস্পাতের মত। ছোট বেলায় বাপ মারা গেছে, এই রতন খুড়া কেই সে ব্যাপারে মতো শ্রদ্ধা করে।
এ্যই শুয়ারের বাচ্চা, তু আমার খুড়াকে লাথ্থি দিলি, বলেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেগুলো হতবাক হয়ে গেল। বুধিয়ার শক্ত সমর্থ পেটুয়া চেহারার মানুষের এক ঘুষিতে ছিটকে পড়ল হাত কাটা ন্যাপু।
এবার তার সাকড়েদ দের যেন সম্বিত ফিরলো। তিনজন মিলে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো বুধিয়ার উপর। তাদের এলোপাতাড়ি ঘুশিতে বুধিয়ার নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করল গলগল করে। বুধিয়াও দমবার পাত্র নয়। নিজের শক্তি দিয়ে একেক টাকে কাবু করতে তার বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। সবাই ছিটকে পড়লো দুই হাত,চার হাত দূরে। ছেলেগুলোকে ঘায়েল করে বুধিয়া বীর দর্পে উঠে দাঁড়িয়েছে।
তার অজান্তেই হাত কাটা নেপু পকেট থেকে ধারালো ছুরিটা বার করে পিছন থেকে ঝাপিয়ে পড়ল বুধিয়ার উপর। পিঠের উপর গেঁথে দিলো ছুরিটা, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে পড়ল বুধিয়ার বউয়ের গালে। এতক্ষণ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। বাড়ির উঠোনে একটা কাটারি পড়ে ছিল। সেটা দিয়েই গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কেটে ফেলল নেপুর এই হাতটাও। কাঁধের কাছ থেকে হাতটা কেটে পড়ল মাটিতে। ক্রোধের আগুনে পুড়ে সে যেনো মা কালীর রূপ নিয়েছে।
এবার যেনো গ্রামবাসীর ঘুম ভেংগে গেল। যে যা পেলো, বোঁটি,কাটারি, সাবল,রুখে দাঁড়ালো সবাই,। রে রে করে তেড়ে গেলো ছেলে গুলোর দিকে। হাত কাটা নিপু তার কাটা হাত টা ফেলে রেখেই আর্তনাদ করতে করতে ছুটতে থাকলো, বিপদ বুঝে পেছন পেছন তার সাগরেদ রাও ছুটলো। বুলডোজার পিছু হটলো। বুধিয়ার পবিত্র রক্তে বনের মাটি কলঙ্ক মুক্ত হলো।
বুধিয়ার নিথর দেহ টা পড়ে আছে মাটিতে। চোখে মুখে এক যুদ্ধ জয়ের প্রশান্তি। রতন খুড়া একভাবে কেঁদে চলেছে। বউটা আবার কেমন যেনো থম মেরে গেছে। গ্রামের সবাই শোকস্তব্ধ। এক মাত্র খেলে চলেছে বুধিয়ার পাঁচ বছরের ছেলেটি, একবার রঙিন প্রজাপতির পেছনে ছুটে চলেছে, তো আরেকবার অশ্বত্থ গাছটার গুরি ধরে বিশ্রাম নেয়। এই মাটি যে তার জন্মস্থল, এই জঙ্গল যে তার ঘর। এই বাতাসে যে সে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ আগে যে তার বাবা সেই জন্মভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছে। এই জঙ্গল কে তার বাস যোগ্য করে দিয়ে গেছে, এই জঙ্গলের মানস পুত্র, আজকের নায়ক বুধিয়া মুর্মু। ছোটো এই পবিত্র মন বাপ হারানোর কষ্টকে অনুধাবন করতে পারার মত তৈরি হয়নি এখনও।
দুঘন্টা পর পুলিশ এলো,বুধিয়া কে নিয়ে গেলো ,কাটাছেঁড়া করে হয়তো দেখবে। আধ পেটা খাওয়া ,অশিক্ষিত এক আদিবাসী ছেলের শরীরে কি এমন ছিল যে সে আজ তথাকথিত শিক্ষিত অমানুষদের ক্ষমতার অহংকার ও টাকার লোভ কে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এই পৃথিবী কে আরো কিছুদিনের জন্য নতুন করে জীবন দান করে দিয়ে গেলো।
পরের দিন দুপুরে সাদা চাদরে মোড়া বুধিয়া ফিরে এলো। নিজের মাতৃভূমিতে তার চীরনিদ্রায় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে তখনও। ওর মৃতদেহ টাকে রাখা হলো ওদের দেবতা গণেশ রুপি বট গাছটার ছাওয়ায়। আস্তে আস্তে সূর্য টা ঢেকে গেলো কালো মেঘে। কোথায় যেনো আকাশ ঝলসে মেঘ ডেকে উঠলো। ভগবান যেনো শঙ্খধ্বনিতে বরণ করে নিলো তাকে। বাতাসে হওয়ার বেগ টা বেড়ে চললো। শাল, মহুয়া, পিয়াল, অশ্বত্থ গাছ গুলো ডাল পালা নাড়িয়ে পাতা ঝোরালো, যেনো পুষ্প বৃষ্টি হতে থাকলো। এবার তাকে প্রকৃতির মাঝে বিলীন করে দেওয়ার পালা। মাটির তলায় চাঁপা পড়ল তার নিথর দেহটা। কান্নার রোল উঠলো। প্রকৃতিও আজ নিজেকে সামলাতে পারল না, অঝোর ধারায় কাদতে থাকলো সে। বৃষ্টির জলে সিক্ত হলো কবরের মাটি। সেই মাটিতে বটের চারা পুঁতে নতুন জীবনের সূচনা করল বুধিয়ার ছেলে।
—oooXXooo—