অবহেলায় হেলফেলা সেই ঢেঁকি
শ্রী নীলকান্ত মণি
ঢেঁকি ছাঁটা চাল পুষ্টিকর বটে!
কিন্তু থালাতে
বেল ফুল সম ভাতের দাপটে
নিরুপায় তারা গিয়েছে তো হটে
হলো বহুকাল
নিয়েছে বিদায় ঢেঁকিও তাহারই সাথে!
শত চেষ্টাতে
কঁকিয়ে কেঁদেও ফেরানো
যাবে কি তাকে!
ঢেঁকি আজকাল
অতীত দিনের স্মৃতি আগলেই
আছে বেঁচে কোনমতে!
ভাবলে অবাক লাগে
আদ্যি কালের মানব সমাজে
তাদের জন্য কী-ই না আদরে
সমাদরে
মানব হৃদয়ে
থাকতো আসন পাতা!
চকিত স্মরণে ভেবে সেই কথা
ঢেঁকি যদি
কখনো ক্বচিৎ পায় মর্যাদা
তবে তা অন্য কথা!
ঢেঁকি হারা আজ মানব জীবন
করেছে বরণ সীমা হীন অলসতা!
অলস মাথায় জন্মায় তাই
শয়তানী, কুটিলতা৷
আগের মতন
ঝরে নাকো স্বেদ দেহ হতে আর
শরীরে জমছে মেদ
স্থুলতা বাড়ছে,
স্থবিরতা
দেয় উপহার বেঢপ শরীর
জন্ম দিচ্ছে নানা অসুখের
হারাচ্ছে দেহ তার সবলীল সজীবতা!
মান হারা তার নীরব বারতা আজ
শ্রবণ শোনে না
শ্রমের সে বীজ করে না বপন
আজকে জীবন
কায়িক শ্রমের দিন কাটে বৃথা
নয়নে তাহার অনন্য শূন্যতা!
ঢেঁকি সাথে মিলে গড়ে ওঠা
যতো বাগধারা
অর্থ তাহার বোঝা, হয়েছে শক্ত
আজকালকার ছেলেমেয়েদের কাছে!
কেননা, জানে না তো তারা
লাগে কোন কাজে
ঢেঁকি! তা দেখতে কেমন
এখন কোথা বা বেচারা আছে!
সাহিত্য অঙ্গনে
শব্দ-বন্ধ সে সব যে অলকায়
সজতো অলংকারে, তুলতো যে ঝংকার
হয়ে দিশে হারা
অসহায় বোধে চুপ মেরে গেছে তারা!
কাকভোরে
পাতলেও কান
পাবে নাকো তার সাড়া!
কালে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল জুড়িয়া
ছুটতো যে ঢেঁকি
স্বর্গে গিয়েও ভানতো যে ধান
হয়ে ত্রিভুবন ছাড়া কি হাল হয়েছে তার
পারো যদি, অন্ততঃ একবার এসে কাছে
তারে দেখে যেয়ো,
একটেরে ঢেঁকিশালে অবহেলা সয়ে
কিভাবে এখন নির্জীব শুয়ে আছে!
—oooXXooo—