হেনরিরা আজও কাজ করে
সুপর্ণা দত্ত
একদা হেনরির জয়গাঁথা গেয়েছিল সারা আফ্রিকা
করেছিল স্টিল ড্রিল মেশিনের সাথে প্রতিযোগিতা একা
রাতদিন এক করে হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে সে বিদ্যুত ঝরিয়েছে
সুড়ঙ্গ কেটেছে গ্রানাইটের পেশীতে যন্ত্রকে সে হারিয়েছে।
প্রতি মে দিবসে মানুষের সুরে সুরে শোনা যায় হেনরির বীরগাঁথা
পাখিদের কলরবে পূবালী আকাশে ভাসে তার আমৃত্যু কাজের কথা,
আফ্রিকান লোক নায়ক মেশিনকে হারিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে
কালো পাথুরে মূর্তিটা স্থাপিত আছে বিগ বেন্ড টানেলের উপরে।
আজও পৃথিবীর সভ্যতা বাঁচে হাজার হাজার হেনরির শ্রমে,
যতই আসুক না আধুনিক মেশিন সেওতো চলে মানুষের দমে।
শ্রমিকের শ্রমে গড়া পৃথিবীর সভ্যতা আজও দেয়না সঠিক মূল্য তার,
তাকে করে রাখে পদানত,অপব্যবহার হয় তার অদম্য ক্ষমতার।
শ্রমিকের সম্মানে প্রতি বছর সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় মে দিবস,
স্কুল কলেজ অফিস আদালত সর্বত্র গাঁথে তারই যশ,
ছুটি পায় তারাই প্রতি বছর করতে পালন মে দিবস,
হেনরিরা আজও হাসিমুখে কাজ করে পায়না কোনো নাম যশ।
অর্থনৈতিক,সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে
বাড়েছে বেকারত্ব,বাজারে জিনিসের বাড়েছে মূল্য ধাপে ধাপে।
আন্দোলনে পা মেলাচ্ছে আজ গ্রামে-গঞ্জে, শহরে যারা ন্যায্য দাবিদার
চাকরি হারিয়ে পথে নেমেছে তারা ফিরে পেতে নিজ অধিকার।
যোগ্য কাজের অভাবে শিক্ষাও আজ শ্রমের কাছে করছে মাথা নত
দুমুঠো ভাত দুবেলা পেতে আজ শিশু শ্রমিকও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
বাস্তব বড়ই কঠিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে জীবন ওষ্ঠাগত
চোখে পট্টি পড়া সমাজের ক্ষমতাশালীর দিনদিন বাড়ছে দৌরাত্ম্য।
হেনরিরা আজও আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করে নীরব যন্ত্রণা সয়ে
শরীরের শোণিত কণা প্রতিনিয়ত মাটিতে ঝরে নোনা ঘাম হয়ে।
কালও পায়নি,আজও পায়না হেনরিরা তাদের শ্রমের যোগ্য মর্যাদা
পরাধীনতার গ্লানি নিয়ে তারা খেটে মরে আর রেখে যায় বিজয় গাঁথা।
—oooXXooo—