মিঃ ওয়াকারকে দিয়ে শুরু করি। মিঃ ওয়াকার বলতে আপনার মনে যদি কোনো স্মৃতির উদ্রেক না হয় , তবে এ লেখা আপনার জন্য নাও হতে পারে। অরণ্যদেব বা বেতাল , যখন তার গুহাবাস ছেড়ে শহরে যেত, তখন চয়ড়া হ্যাট , লম্বা ওভারকোট ও সানগ্লাসের সঙ্গে এই পোশাকি নামটাও পরে নিত।ওয়াকার অবশ্য একা থাকত না , তার সঙ্গে থাকতো পোষা নেকড়ে , যার নাম বাঘা বা ডেভিড।
এয়ারপোর্টে বা ট্রেনে ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা অবশ্য হাঁ হাঁ করে উঠত , ওয়াকারকে নোটিস দেখিয়ে দিত , যাতে লেখা , কুকুর নিয়ে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। ওয়াকার আইনের ফাঁক দিয়ে অবশ্য গলে যেত , কারন তার পোষ্য কুকুর নয় , নেকড়ে। তবে এরকম জলজ্যান্ত নেকড়েকে দেখে সহযাত্রীরা খুব প্রসন্ন হতেন না , বলাই বাহুল্য।
ভারতের দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে , শুধু এয়ার ইন্ডিয়া আর আকাশ এয়ার পোষ্য নিয়ে উড়তে দেয় , যদিও কেবিন ক্লাসের একদম শেষ সারির আসন বরাদ্দ হয় পোষ্যসহ যাত্রীর জন্য। পোষ্য নিয়ে চলতে গেলে , আকাশ এয়ার আরেকটা শর্ত আরোপ করে , সেটা হল , পোষ্যর ওজন ১০ কেজির বেশি হতে পারবে না।
ভারতীয় রেল পোষ্য নিয়ে ভ্রমণের অনুমতি দেয় , তবে তার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম আছে যেমন পশু চিকিৎসকের সার্টিফিকেট , পার্সেল অফিসে গিয়ে কিছু ফর্ম পূরণ, এই সব। অনুমান করতে পারি , পশু চিকিত্সকের সার্টিফিকেট নিশ্চয়ই আকাশপথেও লাগে।
পোষ্যদের নিয়ে অবশ্য আজকাল অনেক ভ্রমণ সংস্থাই একটু দরাজ হতে শুরু করেছে , যেমন উবের নাকি তাদের ‘পেট ফ্রেন্ডলি ‘ প্যাকেজ চালু করেছে , কিছু হোটেল এবং রিসর্টও তাদের মক্কেলদের অনুমতি দিচ্ছে পোষ্য নিয়ে ভ্রমণ করার। এতে নিশ্চয়ই অনেকের খুব সুবিধা হবে , কারণ পোষ্যকে কোথায় রেখে যাবেন , এই চিন্তায় আত্মীয় বন্ধুদের অনেককে বিব্রত হতে দেখেছি ।
তবে সবার উপর দিয়ে যায় কোচি এয়ারপোর্ট। কোচি এয়ারপোর্ট পোষ্য সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধার কথা ফলাও করে ঘোষণা করার পর , এই বন্দরে পোষ্য নিয়ে ভ্রমণ করার হিড়িক বেশ বেড়ে গেছে। খবরে প্রকাশ ,ইভা নামে এক বছর বয়সী একটা বিড়াল , সেই এয়ারপোর্টে প্রথম ‘ইম্পোর্টেড ক্যাট ‘ হওয়ার সুবাদে , প্রায় সেলিব্রিটির সম্বর্ধনা পায়।
তবে , এত সব সুখবরের মধ্যে , কলকাতার বেশ কিছু পার্কে , বড় বড় করে ‘কুকুর নিয়ে প্রবেশ নিষেধ ‘ সাইনবোর্ড দেখে পশুপ্রেমীদের ভ্রূ কুঞ্চিত হতে পারে। তবে , নিরপেক্ষ ভাবে দেখলে , কিছু পোষ্য মালিকদের অবিমৃষ্যকারিতাই হয়ত এর জন্য দায়ী। কারণ , পোষ্যকে নিজের বাড়িতে টয়লেট ট্রেনিং এর বন্দোবস্ত না করে , তারা একটি শর্টকাট বেছে নেন , রাস্তা , মাঠ ময়দান এবং অবশ্যই পার্কে নিয়ে গিয়ে পোষ্যদের মলমূত্র ত্যাগ করানোর , নিজের বাড়ির সমুখটুকুও বাদ দিয়ে।
এবার আসি লাইকার কথায় । লাইকা ছিল মস্কোর , যাকে বলে রাস্তার কুকুর , তাই। তাকে ধরে বেঁধে রাশিয়ার মহাকাশযান স্পুটনিকে চাপিয়ে , মহাকাশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মহাকাশের বৃত্তে সে অবশ্য কয়েক ঘন্টা মাত্র বেঁচে ছিল। বিজ্ঞানের ইতিহাসে অবশ্য লাইকা রইল ওমর হয়ে।
এই লেখায় সার্ভিস এনিমেলের কথা অবশ্যই এসে যাবে। এয়ারলাইন্স পরিভাষায় ‘সার্ভিস এনিমেল ‘ বলে একধরণের পোষ্য আছে , যাদের বিশেষত্ব হল , তাদের মালিক হচ্ছে শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী এবং পোষ্যটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত , যাতে সে তার মালিকের চলাফেরায় সাহায্য করতে পারে। সার্ভিস এনিমেলরা এয়ারলাইন্স থেকে বিশেষ সমাদর পেয়ে থাকে। আমেরিকার ডেল্টা এয়ারলাইনসের এক প্লেনে একবার এক যাত্রীকে , নাকি ,সার্ভিস ডগকে জায়গা দেওয়ার জন্য , বিজনেস ক্লাস থেকে নিচে নামিয়ে ইকনোমি ক্লাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে ভদ্রলোক এই নিয়ে বিস্তর গোলমাল করেন বটে , তবে তাতে ফল বিশেষ হয় নি। আপনাদের মধ্যে কারো এরকম পোষ্যের সঙ্গে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে কিনা জানা নেই। আমি অবশ্য কোন পোষ্যকে সহযাত্রী হিসেবে পাই নি , তবে আমার ক্যাটল ক্লাসের পাশের সিটে এক পিস্ ল্যাব্রাডোর যদি এসে বসে , খুব যে খুশী হব, তা নয় !
আমার এক প্রবাসী বন্ধুর থেকে সার্ভিস ডগের ব্যাপারে কিছু জ্ঞান আরোহন করলাম I . মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বত্র পরিষেবা কুকুরের অনুমতি রয়েছে। আমার ছোট বন্ধুর মেযে , টাইপ 1 ডায়াবেটিসে ভোগে , সে জন্য সে একটা সার্ভিস ডগ নিয়ে প্লেনে চাপে। এই কুকুরটি তার আশ্চর্য ঘ্রাণশক্ত্রির সাহায্যে বেশি সুগারের খাবার বেছে তাকে সতর্ক করে দেয়। তবে , সেখানে সার্ভিস ডগের আলাদা বসবার সিট্ থাকে না , তাদের জায়গা সিটের নীচে।
তবে পোষ্যরা এমনিতেই তাদের প্রভুদের এত ন্যাওটা হয়ে থাকে , সময় ও সুযোগ থাকলে,তাদের নিয়ে ঘোরার আইডিয়া মন্দ নয়। কে না জানে , বন্যেরা বনে সুন্দর , পোষ্যরা প্রভু সনে !