আচ্ছা খলিফা ছেলে এই ভবেশ। ননীগোপাল কে বলে ওসব কিছুই নয়। বাঁ হাতের খেল। বেড়ে ফিমেলের পার্ট করে এই ভবেশ। অ্যামেচার দলের যাত্রায় সেবারে রাণী সেজেছিল। কে বলবে যে ওটা পুরুষ মানুষ। মুগ্ধ চোখে যুবক বৃদ্ধ চেয়েছিল ওর সৌন্দর্যের দিকে।
ভবেশ ননীগোপাল এর অভিন্নহৃদয় বন্ধু। অবরে সবরে ননীগোপাল ওকে টাকা ধার দেয়। গায়ের রঙটাও বেশ ফরসা।ননীগোপাল কানের কাছে এক কথা বলে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার। ভবেশ এসবের আমল দিচ্ছে না। শুধুই বলছে বাঁ হাতের খেল। ননীগোপাল যে কত যন্ত্রণার মধ্যে আছে তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। আর ঐন্দ্রিলাকে কী ফিরে পাওয়া যাবে? সেই চুঁচুড়া নৈহাটির লঞ্চঘাটে রোজ দেখা হোতো। যেন কাজলনয়না হরিণী। আর তার জীবনটা এরা যেন ফুটবলের মতো খেলছে। সব মিথ্যা। সেই যে কার যেন গান ছিল সমাজ সংসার মিছে সব।
না না। তাই বলে ননীগোপাল চুপ করে বসে থাকবে না। অফিস থেকে ভবেশ আগেই বেরিয়ে গেছে। ননীগোপাল ও বেরিয়ে পড়ল। আজ আবার সেই বাগান থেকে লক্ষ করতে লাগল ওদের কার্যকলাপ। দেখবে ননীগোপাল। আর কতদূর ওরা যেতে পারে।
আজ কুহকিনীর সাথে তার মা এসেছে। বুড়ি মানুষ অথচ যেন কনে সেজে এসেছে। গা পিত্তি জ্বলে যায় ননীগোপাল এর। গিন্নিকে জিজ্ঞেস করলে “গতকাল রাতে মরবার ব্যাপারে কিছু আলোচনা কী হল?” শুনেই গিন্নি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। বললে রপ্তে রপ্তে বলব।অনেক দিন আছি একসাথে। এখন তবে একা হয়ে যাবো। কী হবে আমার তখন “? ছেলের মুখ গম্ভীর। বললে “তবে আর কি! আমার কথা ভাববার সময়ই নেই তোমার। এখন আবেগের সময় নয়। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে”। ননীগোপাল ফিক করে হাসলে। পথে এসো বাবা। মুনি ঋষিরা বলে গেছেন ভালোবাসা বৃথা যায় না। গিন্নির চোখে জল যখন তখন ভিতরে ভিতরে একটা জোর পেলে ননীগোপাল। এরমধ্যেই কুহকিনীর মা বললে “কর্তা মরলে আমি তো আছি। দুজনে সারা পৃথিবী ঘুরবো। কত আনন্দ তখন। সেই সুযোগে আমার মিশরটা ঘোরা হয়ে যাবে। দুজনে খুব আনন্দে থাকব”। গিন্নি চোখ মুছে সায় দেয়। আর ননীগোপাল এর কান্না পায়। তিল তিল করে সঞ্চয় করে রাখা টাকায় এই এরা মিশর ঘুরবে। ছ্যা! এই সংসার ত্যাগ করে সে বিবাগী হবে। বলিহারী বঙ্গনারী। বেঁচে থাকতেই এসব শুনতে হচ্ছে। মরলে না জানি কী হয়। ছেলে বললে “এবার কাজের কথায় আসা যাক। এক এল আই সি এজেন্ট আমার বন্ধু। সে বলেছে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে যদি খুনের সন্দেহ থাকে পুলিশের তবে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনও টাকাই পাওয়া যাবে না। আর মদ্যপান করে মরলে কোনও টাকা নয়”। গিন্নির কথা কানে এল। বলল “তোর বাবাকে খুন তো করতেই হবে। নৈলে নিজে নিজে কেউ মরে!”