ননীগোপাল ডট কম (চতুর্থ পর্ব)
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
ননীগোপাল দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে “বলেই দেখো। আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন “।
কুহকিনী আবার বলে “আচ্ছা। উনি মারা গেলে অনেক টাকাও পাওয়া যাবে। যেমন ধরুন ওঁর পি এফ,গ্রাচুয়িটি সব। আর আপনার বয়স কম মামণি। বাপির থেকে অনেক ছোটো। অনেক দিন বাঁচবেন। এছাড়া যদি আরও সঞ্চয় থাকে সব পাবেন। “
গিন্নির চোখ আনন্দে চিকচিক করে। খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে “সে উনি সব করেছেন আমার জন্য। সবকিছুর নমিনি আমি।
কুহকিনী বললে “ওটাই তো ঠিক মামণি। তবেই না বিবাহ। আমিও তাই চাই। আপনার ছেলে যদি চাকরি না পায় তবে আমার ভবিষ্যত কী হবে?”
ননীগোপাল এইসব শুনে কী করবে বুঝতেই পারে না। বাড়ির সবাই তাহলে তার মৃত্যুর প্রত্যাশী। এই বয়সে আবার অন্য সংসার করবে নাকি !সেটাকে সবাই মেনে নেবে কি?
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই গিন্নির আওয়াজ পেল। সে বললে “স্বাভাবিক মৃত্যু তো হবার নয়। তাহলে মৃত্যু কী করে সম্ভব “?
চমকে উঠল ননীগোপাল। এও সম্ভব নাকি?
এবার ছেলে মুখ খুলল। বলল “আত্মহত্যা করবে বাবা। গলায় দড়ি কিংবা বিষ খেতেই পারে”।
গিন্নি চিৎকার করলে। “গলায় দড়ি প্রচুর কষ্ট। না না। অত কষ্ট করে ওকে মরতে দেবো না আমি। “
কুহকিনী বললে “এটা খুবই কষ্ট। ঠিক আছে। খাদ্যে বিষক্রিয়াটাই সঠিক হবে”।
ননীগোপাল মনে মনে বলে “তোরা মর। তোদের চোদ্দ গুষ্টি মরুক। “না না। ওদের হাতে কোনও খাবার খাবে না ননীগোপাল। এই কুহকিনী সংসারের সেদ্ধ ধান কলিয়ে দেবে। বাপরে বাপ!
কুহকিনী চলে যাবার পর বাড়িতে প্রবেশ করল ননীগোপাল। বৌ বেশ চওড়া করে সিঁদুর পরেছে। ননীগোপাল বললে “এইসবের আর দরকার কী? এত বড়ো করে সিঁদুর পরার প্রয়োজন নেই। আর কদিন পরেই তো,,,,,,,,,,,”
গিন্নি ভাবলে ননীগোপাল মরবার কথাই বলছে। কাঁদো কাঁদো হয়ে গিন্নি বললে “জানি গো। তবে ভালো কিছু পেতে গেলে কিছু তো হারাতে হবেই। তবে মনে রেখো তোমার এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাস এ লেখা থাকবে। ধৃতরাষ্ট্র পর্যন্ত সেখানে ফেল।”
আজ ননীগোপাল এর কপালে হরিমটর। পেটে কিল মেরে পড়ে রইল বিছানার একপাশে। ওদিকে গিন্নি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। ননীগোপাল মনে মনে বললে “শালা! প্রেম ভালোবাসার নিকুচি। এখন তাকে সরিয়ে তার টাকাতে জীবন কাটাবে ফাতরা লোক। ভীষণ আপশোষ হচ্ছে আজ। মনে পড়ছে সেই মেয়েটার কথা। কেমন ভালোবাসতো। লোক বলবে ননীগোপাল পরকীয়া করছে। সেই ভয়ে মেয়েটার ডাকে সাড়া দিল না। আর আজ। তাকেই ভীষণ প্রয়োজন ছিল। খুঁজতে হবে তাকে। মেয়েটার নাম ছিল ঐন্দ্রিলা। আহা। কত রোমান্টিক মুহূর্ত কেটেছিল। অথচ এই গিন্নিটার জন্য অতবড়ো স্বার্থ ত্যাগ করেছিল ননীগোপাল। ভাবতে গেলে কিছুই থাকে না। কাল অফিসে গিয়ে আজকের সব কথা ভবেশকে জানাতে হবে।
(ক্রমশ)