নেবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কি একটা জরুরি কাজে চ্যাংমারী গ্রামে যাবার জন্য তৈরি হয়েছে l মেঝ জ্যেঠু শোনা মাত্রই রেগে অগ্নিশর্মা l কারণ দক্ষিণ খালপারে একটা শেওড়া গাছ আছে আর ঐ গাছে গেছো ভূতের বাস l খাল পারের শেওড়া গাছের তলা দিয়েই তো চ্যাংমারী যেতে হবে l গাছের তলায় ওকে একা পেয়ে গেছো ভূত যদি ওকে ছোঁ মেরে গাছে তুলে নিয়ে গিয়ে ঘাড় মটকে দেয় তো কেল্লা ফতে l নেবু…. আমি একা যাব না সঙ্গে হাবলুও যাবে l তুমি ভয় পেয়ো না মেঝ জ্যেঠু l জ্যেঠু….. ভূত যদি সামনে পড়ে যায়, মুখের দিকে তাকাবি না l তাকালে ভূত রেগে গিয়ে ঘাড় মটকে দিতে পারে l নেবু আর হাবলু দক্ষিণ খালপার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যেই শেওড়া গাছের তলায় এসেছে এমনি ঝপাত করে কে একটা গাছ থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে l মাটিতে পড়ে থাকা ধুলো গুলো উড়ে জায়গাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার করে দেয় l কিচ্ছু দেখতে পায় না ওরা l ভয়ে ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে যায় l হাবলু বলে ওঠে…. বাপরে !! আজ বুঝি ভেকুদের বাড়ী আর যাওয়া হলো না l নেবু ভয়ে শিউরে ওঠে l শুয়ে পড়ে নাক দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকে l একটু পরে ধুলোর মধ্যে থেকে কঙ্কাল সার একটা ভূত বের হয়ে আসে l বলে…তোরা কারা ? হাবলু … আমি হাবলু আর ও নেবু l ভূত… তোরা কোথায় যাচ্ছিস ? হাবলু … আমরা চ্যাংমারীর” ভেকুদের “বাড়ী যাচ্ছি মহারাজ। নেবু গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বলে…. তুমি কে মহারাজ ? ভূত…আমার নাম শুনিস নি ? আমি গেছো ভূত l তোদের তো খুব সাহস l সন্ধ্যাবেলা শেওড়া গাছের তলা দিয়ে যাচ্ছিস l নেবু…. কেন স্যার আমরাও মানুষ আর আপনিও মানুষ l তা ভয় পাবো কেন ? গেছো ভূত…. কি বললি ? আমি মানুষ ? ভূত আবার মানুষ হয় কি করে ? তুই কি পড়াশোনা করছিস ? হাবলু … ওহঃ আজ না হয় ভূত হয়েছেন স্যার একদিন তো মানুষ ছিলেন l গেছো ভূত…. যখন ছিলাম তখন ছিলাম l এখন তো আর নেই l মানুষ একদম জাত নেমক হারাম l নেবু…. কেন স্যার ? ভূত …আমি যখন বুড়ো হই তখন আমার ছেলে আর বৌমা আমার খাবারে সেকোবিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো l সেই খাবার খেয়ে আমি মরে ভূত হয়ে যাই l তাতে ওদের কি আনন্দ !! আমি কতটুকু আর খাবার খেতাম ওদের বল ? সেটা সহ্য হলো না l এবার বুঝলি তো মানুষ কেমন নিষ্ঠুর ? ভূত অনেক ভাল রে ! হাবলু…… আপনাদের চেহারাটা হারগিলে হলেও শক্তি ও ক্ষমতা মানুষের থেকে বেশি l মানুষের চেহারা নাদুস- নুদুসই সার শক্তি ও ক্ষমতা কিচ্ছু নেই l ভূত…. বেঁচে থাকতে তো কেউ সম্মানই দিত না ভূত হবার পর তাও তোরা “স্যার”বললি l তোদের ডাকটা খুব ভাল l তোরা ভাল ছেলে l তোরা বাবা মাকে মেরে ফেলবি না তো ? নেবু কাঁপতে কাঁপতে বলে … না স্যার l এবার আমাদের ছেড়ে দিন স্যার l
গেছো ভূত… আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হতে দিল না হারামজাদারা l হাবলু … আপনার শেষ ইচ্ছাটা কি ছিল স্যার ? ভূত…. নাতনির বিয়েতে পেট ভরে ভাল-মন্দ খাবার একটু ইচ্ছা ছিল আমার l তার আগেই আমাকে পার করে দিল l নেবু…. ঠিক আছে মহারাজ এখন আমাদের ছেড়ে দিন ফেরার পথে আমরা আপনার জন্য ভাল ভাল খাবার নিয়ে আসবো l ভূত…. তোরা আবার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবি না তো ? তাহলে আমি আবার মরে যাবো l হাবলু …. না স্যার l আমরা খাবারে বিষ মিশাবো না l তাছাড়া ভূতের কি মৃত্যু আছে স্যার ? ভূত… তাই তো আমার আবার মৃত্যু কিসের ? ঠিক আছে যা l মনে করে খাবার আনবি কিন্তু l তোদের খাবার খেয়ে আমি মুক্ত হয়ে চলে যাব আর এখানে থাকবো না l নেবু… আপনি কোথায় যাবেন মহারাজ ? ভূত…. পগার পার l নেবু …যা আ!!! আমি যে আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে ফেললাম স্যার l কি হবে ? ভূত… কি আবার হবে আমি ভূত হলেও মানুষ তো l মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করব কেমন করে ? হাবলু….. স্যার আপনি কি মানুষ হয়ে গেছেন ? ভূত… ওহঃ কি যা-তা বলছি ? খাবার লোভে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে l যা তোরা এখন যা l
নেবু আর হাবলু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দক্ষিণ খালপার দিয়ে চ্যাংমারীতে ভেকুদের বাড়ী গিয়ে পৌঁছায় l ক্লান্তিতে হাবলুর একটু ঢুলোনি এসে গিয়েছিলো কিন্তু নেবুর তাড়ায় ও আর ঢুলতে পারেনি l চারিদিকটা খাঁ খাঁ করছে l খাল পারের রাস্তায় মাঝে মাঝে শিয়াল ডেকে উঠছিলো l শিয়ালের ডাক শুনে ভয়ে ওদের গা হিম হয়ে আসছিল l মনে হচ্ছিলো কেউ বুঝি বড়ফের শেখ দিয়ে গেল গায়ে l এই গ্রামের বাড়ী গুলো বেশ ফাঁকা ফাঁকা l তাড়াতাড়ি করে ভেকুদের বাড়ীর কাজ সেড়ে দোকান থেকে গেছো ভূতের জন্য রসগোল্লা, পান্তুয়া, জিলিবি কিনে শেওড়া গাছের তলায় এসে মহারাজ মহারাজ বলে ডাক ছাড়ে নেবু l মুহূর্তে গেছো ভূত দৌড়ে আসে l খাবার দেখে তো সে বেজায় খুশি l বলে… বিপদে পড়লে আমাকে স্মরণ করবি l আমি বাঁচাবো তোদের l খাবার খেয়ে ওদের বাড়ী পৌঁছে দিয়ে এসে শান্ত হয়ে বসে গেছো ভূত l