নদী মাতৃক ভারত
সুপর্ণা দত্ত
✒️✒️✒️✒️✒️✒️✒️✒️✒️✒️
নদী মানেই তার প্রথম পরিচয় বহমান জলধারা,
কলকল নাদ,শীতল জল,আঁকাবাঁকা গতির রূপ মনোহরা।
মাটির সঙ্গে সখ্যতা রেখে তার নিয়মিত পথ চলা,
গতিপথ বুঝে প্রকৃতির তালে তাল রেখে কথা বলা।
আবহাওয়া বুঝে নিত্য নতুন সেজে ওঠা দুই পার,
এক কূল ভেঙ্গে অপর কালকে গড়া কাজ তার।
নদী মাতৃক দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষ,
সুপ্রবাহিনী নদীর দাক্ষিণ্যে পুষ্ট হয়েছে ভারতবর্ষ।
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম নদীর বেরাজাল বোনা,
ছোট-বড়ো নদী কত যে আছে তা যায় না গোনা।
পাহাড়-পর্বত ডিঙ্গিয়ে মালভূমি পেড়িয়েছে
সমভূমি হয়ে সাগর-মহাসাগরে মিশেছে।
নদীর তটেই কত নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছে,
নদী তীরে ভারতের শহর,নগর,জনপদ গড়ে উঠেছে।
সুদূর অতীত থেকে প্রভাবিত মানুষের জীবনধারা,
নদীর জলেই পুষ্ট ভূমির শস্য-শ্যামলা, সুফলা রূপ ভরা।
নদীকে কেন্দ্র করেই স্থাপিত হয়েছে প্রাচীন ধর্মস্থান,
মানুষ পেয়েছে সেই নদী তীরে আপন কর্মসংস্থান।
কার্পাস,বয়ন,চিনি,পাট সবই নদী নির্ভর শিল্প,
নদীপথে যেতে পরিবহন খরচ অপেক্ষাকৃত অল্প।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে নদীর ভূমিকা প্রচুর,
পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে নদনদী ভরপুর।
বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদীর স্রোতস্বিনী অবারিত,
পূর্ণার্থীরা অর্চনা হয়ে নদীর জলে স্নাত।
নদীতে জেলের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে,
কৃষিক্ষেতে চাষী নদীর থেকেই জলসেচ করে।
দিল্লী,আগ্রা,কানপুর,বেনারস শহর গঙ্গা-যমুনার ধারে,
তেমনই আছে নাসির,কাঞ্চি,মহীশূর কাবেরী-গোদাবরী তীরে।
নদীই হল মানব সভ্যতার প্রথম ধাত্রী ও পালিকা,
নিজ স্বার্থে মানুষ নদীকে করেছে ধ্বংসের আহ্বাযয়িকা।
প্রাকৃতিক এই জলধারাকে করেছি নিজের সুবিধাজনক,
তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি নিজেই পরিবেশ সংকটজনক।
নদীর নিজ সুশৃঙ্খলাকে মানুষ করেছে শত ছিন্ন,
তারই কুফলের শিকার হচ্ছে মানুষ আজ ভিন্ন ভিন্ন।
কোথাও মানুষ সর্বস্ব হারায়, কোথাও স্বজন হারায়,
কোথাও আবার ঝড়ের দাপটে গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
—oooXXooo—