এই সময়ে বাড়ির জন্য ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। দুর্গা পূজার সময়ে দেশের মধ্যে থেকেও ঘরের ছেলে ঘরে নেই,ভেবে আমরাও মনে বড় কষ্ট পেতে লাগলাম। বিশেষ করে কালীপুজোর সময় চলতে ফিরতে প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়তে লাগলো তার কথা।সে পাড়ার ক্লাব “কিশোর মিলন”এর একজন একনিষ্ঠ কর্মঠ কর্মী। ক্লাবের কালী পূজায় নিজেই উপবাস করে পূজা মন্ডপে পূজা অর্চনার কাজে একান্ত সহযোগিতা করে পেতো মনের শান্তি।এমনিতে চিরকাল ৺কালী মায়ের প্রতি তার ভক্তি অসীম।২রা নভেম্বর ২০১৩ শনিবার কালী পূজার দিন সে ছিল মুম্বাইয়ের বেলাপুরে।পাড়ায় পুজোতে কোন্ দিন কি কি অনুষ্ঠান তা ফোন করে জেনে নিল।বাড়ি ছেড়ে এতটা দূরে থাকলেও পূজার দিন এবারও সে ছিল উপবাস।বারবার বাড়ির কথা মনে পড়ছিল।সন্ধ্যা হতেই মনটা হয়ে উঠল উতলা। কিছুতেই রুমে মন বসছে না।অস্বস্তিতে বেরিয়ে পড়ল।হাঁটছে যেন উদভ্রান্তের মতো।হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেল বাঙালি পূজা মন্ডপে।সারা শরীরের মধ্যে যেন অস্বস্তিতে আনছান করছে।আমায় ফোন করে ব্যাপারটা জানালো।আমি সান্তনা দিলেও কিছুতেই কোন পরিবর্তন হলো না।ফোন করলো ক্লাব সদস্য ওর বন্ধু বাবুকে।সে তখন পূজা মন্ডপে পূজার আয়োজনে ব্যস্ত কিন্তু দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর হঠাৎ এমনদিনে, এমন সময়ে তার ফোন পেয়ে সবাই অবাক হল।এবং মন্ডপে উপস্থিত সকলেই তার সাথে কথা বললো।তার মুম্বাইয়ের নতুন ফোন নাম্বার পেয়ে সাথে সাথে অনে- কেই তাকে ফোন করতে লাগলো।রাত ২ঃ২০ মিনিটে আমায় ফোন করে জানায় মনের স্বস্তিতে তখন সে যেন স্বাভাবিক।আমি হরিসাহা হাটে যাবার জন্য সবে প্রস্তুত হচ্ছি।এত রাতে ছেলের ফোন পেয়ে একটু অবাকও হলাম বটে।পরে তার মুখে বিস্তারিত জেনেই হাটে যাবার পথে চলে গেলাম পূজা মন্ডপে।ফোনের মাধ্যমে ছেলে মায়ের চরণে অঞ্জলি প্রদান করে জানালো তার মনের ইচ্ছা—। আমি পুরোহিতকে প্রদান করলাম অঞ্জলির জন্য প্রণামী।ছেলেকে সেই খবর ফোনে জানিয়ে দিয়ে সোজা চলে গেলাম আমার গন্তব্যে।পরের দিন দুপুরে ওর মার কাছ থেকে শুনলাম সেদিনের পুরো ঘটনাটা।এমন অলৌকিক অনুভূতির কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হলাম।৺মায়ের কাছে প্রার্থনায় শুধু জানালাম-তার দীর্ঘদিনের সকল স্বপ্ন যেন সার্থক হয়——!
ঐ সময়ে নভি মুম্বাইয়ের D.G.SHIPING APPROVED MEDICAL EXAMINER DR.SHRIKANT BIRBALE এর কাছে করলো তার মেডিকেল টেস্ট। পরের দিন সমস্ত সার্টিফিকেট ফরওয়ার্ড করা হলো দুবাই অফিসে। নির্দেশ এলো ভিসা সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করার। ৮ই নভেম্বর চীনের জন্য নির্ধারিত ভিসা হাতে পেল। ১৩ই নভেম্বর STANFORD কোম্পানি জানিয়ে দেয়, ১৯ শে নভেম্বরের ফ্লাইটে টিকেটের কথা । একই সাথে ওই কোম্পানির শীপে আরও তিনজনের একত্রে জয়েনিং হবে। যার যার লাগেজ রেডি রাখবার নির্দেশ এলো। সেই মতো তারা তিনজনেই একে অন্যের সাথে কন্টাক্ট করে নিজেরা প্রস্তুতি নিতে লাগলো। শিপে জয়েনিংয়ের তারিখ যতই এগিয়ে আসতে লাগলো মারাঠী বন্ধুদের মাঝে মায়ার বন্ধন যেন আরও গভীর হতে লাগলো। ইতিমধ্যে মারাঠি বন্ধু শচীনের ব্যক্তিগত উদ্ভূত সমস্যা,সমাধানের ব্যাপারে তার সহযোগিতার জন্য তাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল। সকলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে সকলেই হলেন খুশি। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ছেলেকে জানায় অনুরোধ।তুলনামূলকভাবে তার ছেলেবেলার বন্ধুদের পাশে ভিন রাজ্যের এই বন্ধুদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে আমাকে প্রায় প্রতিদিনই সব জানাতো। আমি তার মানসিক শান্তির কথা চিন্তা করে সব সময় সঠিক পথে চলার উপদেশ দিতাম।
১৯শে নভেম্বর ২০১৩ মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনাল থেকে CATHAY PACIFIC AIRWAYS এর রাত ১০:৪৫ মিনিটের ফ্লাইট মুম্বাই থেকে হংকং। আবার হংকং থেকে চীন-সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে। আগে থেকেই রিজার্ভ করা ট্যাক্সি নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে।যাবার আগে আমাকে ফোন করে জানাল। আমাদের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে শুরু করল যাত্রা। ফ্লাইট ছাড়বার আগ্ পর্যন্ত যখন যেমন তখন তা ফোন করে জানিয়েছে। রাত ১০:৫০মিনিটে প্লেনের ভিতরে বসেই ফোন করে জানালো- প্লেন সবে ছাড়লো। বিধাতাকে জানালাম প্রার্থনা-ওদের যাত্রা হোক শুভ–! পরদিন ভোর ৫ঃ৬।আমি তখন হরিসাহা হাটে। বড্ড টেনশনে ছিলাম।কখন পাবো আমাদের কথা মত তার মিসড কল।ফোনে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকায় শুধু মিসড কল দিয়ে সংকেত জানাবার কথা বলে দিই। প্রয়োজন হলে আমি রিং ব্যাক করে কথা বলে নেব। কিন্তু ব্যালেন্স কম থাকায় রোমিংয়ের ভয়ে তার পক্ষে তার মোবাইলে কল রিসিভ করা সম্ভব ছিল না। ভোর পাঁচটা ছয় মিনিটে মিসডকল এর পর দ্বিতীয় বার মিসডকল পেলাম ৬টা২মিনিটে।বুঝলাম চীনের FUZHOU AIRPORT পৌঁছেছে কিন্তু তারপর দীর্ঘ সময় আর কোন মিসড কল না পেয়ে ভীষণ চিন্তিত হতে লাগলাম।মুম্বাইয়ে ক্যাম্পাইজি ও বিবেক স্যারকে ফোন করে যতটুকু খবরা খবর পেয়েছি তা জানিয়ে দিলে বিবেক স্যার আমাকে নিশ্চিন্তে থাকতে বলেন কিন্তু অশান্ত পিতৃ হৃদয় অশান্তই থেকে গেল। সময় একটু একটু করে গড়াতে থাকে।সন্ধ্যা ৭টা১৪ মিনিটে একটা আননোন ইন্টারন্যাশনাল নাম্বার থেকে মিসডকল পেলাম।সাথে সাথেই রিং ব্যাক করলাম। অপর প্রান্তের ভাষা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলাম না পরে ছেলের সাথে কথা বলে জানলাম এটা হোটেলের এক চাইনিজ বয়ের ফোন। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি কোন ভাষাই বোঝেনা। বোবা মানুষের মত আকার ইঙ্গিতে ল্যাপটপে বাড়ির ছবি, বাবা-মায়ের ছবি দেখিয়ে বুঝাতে সক্ষম হয় যে -সে বাড়িতে ফোন করতে চাইছে তার মোবাইল দিয়ে।তখন জানতে পারলাম – হোটেলে আছে। ওখানে প্রচন্ড ঠান্ডা।তবে কোন রকম অসুবিধা হয়নি। FUZHOU AIRPORT থেকে FUZHOU KALDA INTERNATIONAL SHIPPING AGENCY CO.LTD এর এজেন্ট এসে তাদেরকে রিসিভ করে যাবতীয় ইমিগ্রেশন করিয়ে সোজা নিয়ে যায় নামী ওই হোটেলে। সেদিন তারা বড় ক্লান্ত। প্রচন্ড শীতে ঠান্ডায় যবথব হয়ে যায়।আগত অন্য সহকর্মী ক্রিউদের অনুরোধে অত্যন্ত ঠান্ডা থেকে সাময়িক রিলিফ পাবার জন্য ওয়াইন খেতে বাধ্য হয়। ক্লান্তি নিরসনে সবাই ডিনার সেরে সটান ঘুম। পরদিন STANFORD MARINE এর কর্মী এসে সোজা নিয়ে যায় নির্ধারিত জাহাজ STANFORD HAWKএ। এই জাহাজ একদম নতুন। ফুলের মালা ও রং বেরঙের বেলুন সহ আকর্ষণীয় সজ্জায় সজ্জিত হয়ে হবে শুভ উদ্বোধন।কোম্পানির উচ্চপদস্থ অফিসারেরা সবাই এলেন। এক সুন্দর পরিবেশে সুন্দরভাবে হল শুভ উদ্বোধন। সবাই খুশি- শুরু হয়ে গেল সকল কাজ কর্ম।
৩০ শে নভেম্বর ২০১৩। তখন মর্নিং ওয়াকে ব্যস্ত।সঙ্গে মর্নিংওয়াকের নিত্য সঙ্গী সন্দীপ দত্ত। হঠাৎ মিসডকল। রিং ব্যাক করতেই তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কথা বলতে বলতে বাড়ি পৌঁছেই ওর মাকে ফোন দিতে গিয়ে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ওর মায়ের ফোন থেকে কথা বললাম। ভালো আছে। বিস্তারিত সংবাদ যা জানতে পারলাম তাতে সবাই খুশি হলাম। অনর্থক কোনো রকম দুশ্চিন্তার অবকাশ রইলো না। ভালো হোক- ভালো থাকুক এই কামনাই করলাম! তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তাদের জাহাজ হংকং যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পোর্টে কয়েকবার পাক খেয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। হংকং থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে দুবাই।সেখানে পৌঁছাবে ডিসেম্ব- রের ২০ কিংবা ২১ তারিখে।এই সময়ের মাঝে আর কোন যোগাযোগ নাও হতে পারে তাই যেন কোনো রকম দুশ্চিন্তা আমরা না করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই যোগাযোগ হল বিচ্ছিন্ন। বুঝলাম তারা টাওয়ারের বাইরে প্রবেশ করেছে। তারপর শুধু অপেক্ষা।১৩ই ডিসেম্বর রাত্রি ৯টা ৩৬। আমি তখন দোকানে। হঠাৎ তার ফোন পেলাম। দেখলাম এটা মিসড কল নয়। কিছুক্ষণ পরখ করে ফোন রিসিভ করে জানতে পারলাম হংকং হয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা পেরিয়ে কেরালার পাশ কাটিয়ে চলেছে দুবাই অভিমুখে।তাই তারা তখন ইন্ডিয়ান আইডিয়া সিম থেকে নিজেরাই কথা বলতে পারছে। জলদস্যুদের আক্রমণের ভয়ে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে জাহাজ ব্লাক আউট করে চলছে। তখন ব্রিজে উঠে সবাই যে যার বাড়িতে ফোন করছে।তবে যে কোন সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। কথা বললাম খুব ব্যস্ততার সাথে। সব শুনে চলেছি তখন মনের মধ্যে এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় বড্ড কাতর! ভাবছি কি করব? বলবো কি- বলবো না! আর চেপে রাখতে পারলাম না- বলেই ফেললাম- ১০ই ডিসেম্বর২০১৩ খোকাদা না ফেরার দেশে চলে গেছে!সংবাদ শুনেই থমকে গেল ক্ষণিকের জন্য। একদম সাইলেন্ট। আমি হ্যালো, হ্যালো বলতে সে বলল- বল। তখন সে কাঁদছে। পরে বললো- “পুনেতে তাকে দেখে কেন জানিনা আমার খারাপ লাগছিল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি—- কেউ ভাবতেও পারিনি” ঝিকির সাথে কথা বলতে চাইলে ফোন নিয়ে গেলাম ওদের বাড়ি, কিন্তু কিছুতেই আর সংযোগ হলো না। সুপ্ত বেদনা প্রকাশের অপেক্ষায় রইল। আমরা শুধু বারবার ভাবতে লাগলাম তার বর্তমান মনের অবস্থাটা নিয়ে! এই সময়ে শুধু মনে মনে ভাবা ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না।২০শে ডিসেম্বর সকাল ১০টা৩৫ ।সে ফোন করল দুবাই থেকে। কথা হলো মাত্র এক মিনিট। তখন দুবাই পোর্ট থেকে তিন চার কিলোমিটারের দূরত্বে পৌঁছে গেছে। ভালো আছে।পরে বিস্তারিত কথা বলবে কিন্তু পোর্টে পৌঁছে যাবার পর কোম্পানির উচ্চপদস্থ অফিসারেরা বারবার জাহাজে আসতে থাকেন। কাজের চাপ যায় বেড়ে। চলতে থাকে প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে সাউথ আফ্রিকায় যাত্রার প্রস্তুতি। সংগ্রহ করা শুরু হয় খাদ্য সামগ্রী সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজতেই পাঠালাম HAPPY NEW YEAR – 2014 SMS কিন্তু নেটওয়ার্ক ফেইল করায় SENT হলো না। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। পরদিন পয়লা জানুয়ারি ২০১৪ সকালে একই SMS পরপর দুইবার পাঠালাম।মেসেজ SENT হল কিন্তু এবারও ডেলিভারি হলো না।সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় ফোনে কথা হল। জাহাজ ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে তখন আমরা সবাই তাকে জানালাম HAPPY NEW YEAR -2014 । সেও আমাদের সবার সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করল। শুরু হল আফ্রিকা যাত্রা—–।
২ রা জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১টা ২০ মিনিট। আমার পাঠানো এসএমএস ডেলিভারি হতেই দু মিনিট বাদে পেলাম তার মিসড কল। বুঝলাম OMAN পৌঁছেছে। পরে ১৫ জানুয়ারি রাত্রি ১ঃ ৩ মিনিটে সাউথ আফ্রিকা থেকে একটা আননোন স্যাটেলাইট ফোনের কল পাই। কল রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম তারা ডারবান পোর্টের কাছে পৌঁছেছে। দুবাই পোর্ট ছেড়ে ১৬ দিনের সমুদ্রপথ অতিক্রম করে সবেমাত্র জাহাজ ডারবান এসে পৌঁছেছে। তখনও পোর্টে পৌঁছাতে পারেনি। কিছুটা দূরে শীপ অ্যাঙ্কার করে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যায় তা প্রায় শ’খানেক হবে। দুবাই হেড অফিস থেকে নির্দেশ এসেছে, কোন অবস্থাতেই কোন নাবিক যেন ল্যান্ডে না নামে। নামলেও অবশ্যই সিকিউরিটি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে এবং দুপুরের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে।গ্যালিতে চিপকুকের কাছেও নির্দেশ পৌঁছে গেল।প্রথম দিন শীপের চারজন নাবিক ঘুরেফিরে দেখার জন্য ল্যান্ডে নেমে পড়ল। সঙ্গে তারা নিল সিকিউরিটি।ওরা গাড়ি করে দিব্যি ঘুরেফিরে দুপুরের মধ্যেই সুস্থভাবে শীপে এসে পৌঁছালো।ছেলে ওদের মুখে বিস্তারিত জেনে শুনে আরও উৎসাহিত হল। তখনই সিদ্ধান্ত নিল পরের দিন বিকালে তারাও ল্যান্ডে নামবে।করলও তাই। তার সেদিন সেই সময়কার সঙ্গী হল ওই শীপের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার মোহাম্মদ সেলিম। দুপুরের লাঞ্চ সেরে ওরা বেরিয়ে পড়ল।ভারতীয় সময় অনুযায়ী সেখানকার সময় সাড়ে চার ঘন্টা পিছিয়ে। ভারতে সকাল দশটা বাজলে সেখানে ভোর সাড়ে পাঁচটা। বিকাল ছটার পর সব রাস্তাঘাট হয়ে যায় ফাঁকা। তারা চিন্তা করলো আফ্রিকা এসেছি আর কবে আসবো,আদৌ আসা হবে কি- হবে না! এতদূর এসেও এখানকার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যাব? একথা ভেবে মনের আশা পূরণের উদ্দেশ্যে নেমে পড়ল ওরা দুজনে ল্যান্ডে।হাঁটতে হাঁটতে ওরা একপা- দুপা করে এগোতে লাগলো।সব দৃশ্য দেখতে দেখতে সি বিচ থেকে উঠে এলো ফুটপাতে।আফ্রিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে সব দৃশ্য দেখার আনন্দে ওরা ভুলে গেছে সময় গড়িয়ে যাবার কথা।ওদের বিদেশি টাকা চেঞ্জ করার বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু নির্দিষ্ট দোকান ওরা খুঁজে পাচ্ছে না।বিভিন্ন দোকান ঘুরতে গিয়ে ওরা দেখল সেখানে জিনিসের দাম প্রচুর।ভারতে একটা সামান্য ছোট্ট কোকোকলা ক্যান যার মূল্য মাত্র কুড়ি টাকা, তার মূল্য ওখানে ৫০০ টাকা।কুড়ি লিটার জলের দাম আড়াই হাজার টাকা।সব জিনিসের এমন দাম দেখে ওরা সবাই অবাক হয়ে গেল।