দিনান্তে
কাকলি ঘোষ
গাড়ি থেকে নেমে সাইনবোর্ডটা দেখলেন লাবণ্য। শেষের কবিতা। আহা! মুগ্ধ হলেন আবারও! শুধু নামটা শুনেই ঠিক করেছিলেন এখানেই আসবেন। বৃদ্ধাশ্রমের এর থেকে উপযুক্ত নাম আর হয়? চমৎকার পরিবেশ। দুপাশে কেয়ারি করা মরশুমী ফুলের মাঝখান দিয়ে লাল মোরাম বিছানো পথ শেষ হয়েছে একসারি শ্বেত পাথরের সিঁড়িতে। ওপরে সুসজ্জিত, ছিমছাম অভ্যর্থনা কক্ষ। সামনে দু পা এগোতেই তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন এক ভদ্রলোক।
“ সুস্বাগতম। আমি দীপ্ত সান্ন্যাল।আমার সাথেই আপনার ফোনে কথা হয়েছে।”
হাত জোড় করে প্রতি নমস্কার জানালেন লাবণ্য।
“ আসুন। আপনাকে ঘরে নিয়ে যাই।”
“এমন চমৎকার বিকেল। এখনি ঘরে যাব?”
উদাত্ত হাসলেন দীপ্ত সান্ন্যাল।
“ বেশ তো। দেখুন না ঘুরে। আমি বরং আপনার জন্য এক কাপ চা পাঠিয়ে দিই।”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে এগোলেন লাবণ্য। গোটা এলাকার সীমানা জুড়ে বড় বড় গাছ। আর তারই ছায়ায় ছায়ায় চমৎকার রঙিন আসন। বসার ব্যবস্থা।ওদিকে কি গোলাপ বাগান? আরো কয়েক পা এগোলেন লাবণ্য। আর পরক্ষনেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কি অসাধারণ দৃশ্য!গোলাপ বাগানের ধার ঘেঁষে এক মনোরম সরোবর। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে খুব বড় নয় কিন্তু কাকচক্ষু জলে ভাসানো আছে রং বেরঙের ছোট ছোট নৌকা। আর তার ওপর! আহা! মরি মরি!রঙিন বাঁশের অপূর্ব ছোট্ট সেতু। এই স্বপ্নই না একসময় দেখেছিলেন! মোহগ্রস্তের মত আরো এগোলেন লাবণ্য আর তৎক্ষণাৎ চমকিত হলেন।
“একি লাবণ্যে পূর্ন প্রাণ প্রাণে এসো হে”
এমন উদাত্ত কণ্ঠে কবির গান কে গায়? গলাটা যেন বড্ড চেনা! সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।গান থামল। একমাথা এলোমেলো কাঁচা পাকা চুলের দীর্ঘদেহী মানুষটি। চোখে চোখ মিলল।
“ বন্যা!”
“ মিতা!”
“ তুমি এসেছ বন্যা। কবে থেকে আমি অপেক্ষা করে আছি। দ্যাখো। সেই সরোবর, রঙিন সেতু, সেই নৌকা। সব প্রস্তুত। এবার পাঠাও তোমার পত্র। সুগন্ধি রুমালে আতর ঢেলে নিয়ে যাব। আজ তোমার গৃহে হোক আমার অভিসার।”
“ মিতা। এখনও তেমনি ছেলেমানুষ তুমি।”
“ বন্যা —আমাদের যে দিন গেছে তা কি একেবারেই গেছে?”
“ মিতা ,রাতের সব তারারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।”
—oooXXooo—