“উন্নয়নে মৃত্যু”
রণজিৎ মন্ডল
পরিবর্তন আর উন্নয়নের স্মৃতিচারণে,
কি ছিলাম আর কি হয়েছি
জীবন ধারণে।
ছিলাম যখন অনেক ছোট মায়ের কোলে,
বকা ঝকা খেয়েও মাকে যাইনি ভুলে,
অবুঝ ছিলাম তাই বুঝিনি বকত না মা
অকারণে।
খালি গায়ে খালি পায়ে কতই ছিল
ঘোরাঘুরি,
হাসাহাসি কানাঘুষির তোয়াক্কা কেউ
কি করি,
আনন্দে ঘুম ছুটতো তখন মহালয়ার
চন্ডী শুনে!
সারাবছর থাকুক যতই দূঃখ মোদের,
ফুটত হাসি নতুন জামা প্যান্টে অনেক সুখের,
ঝুলটা জামার বেশী হলে ধুয়ে ধুয়ে
কমিয়ে নিতাম নিজের গুণে।
জুতোর ভিতর দিতাম কত ন্যাকড়া
গুজে,
বড় হলেও হাটা চলা জেনে বুঝে,
সব পেয়েছি পূজোয় মোরা সারাবছর দিন গুণে।
পূজো এলো মা দূর্গা দেখতে গিয়ে,
জামা প্যান্টেই নজর যেত সব এড়িয়ে,
কোথায় কটা পূজো এবার নিতাম
জেনে।
কাঁচা ঘরের কাচ্চা বাচ্চা যাবে কাঁচা
রাস্তা দিয়ে,
এতো ভাবনা ছিল না তখন নিজেদের
বাচ্চা নিয়ে,
সন্ধ্যা হলেই ফিরবে সবাই সব মা বাবা সেটাই জানে।
পাকাটির ঘরে দূর্গা মায়ের সেই যে আবার আসা,
সারাবছর যেত কেটে পড়া শুনায়
ঐ একটি আশা,
আসবে কবে বছর ঘুরে মা দূর্গা
অসুর সনে।
খাওয়া দাওয়া পড়াশুনা, এসব নিয়ে
নেই ভাবনা,
খেলা ধূলা, ছবি আঁকা, লেখা জোকা
কি হল আর কি হল না,
ভাবার চেয়ে দেখার ছিল সবকটা
ঘরে ফিরল কি না!
খালি পায়ে স্কুলে, হেরিকেনে পড়ছি
শুনে,
হাসিমুখে বলত বাবা, খোকা এবার
উঠবে সেভেনে!
এখনকার এই উন্নয়নে, জল আসে
আজ দু নয়নে,
ব্যাগের ভারে বইয়ের চাপে বাচ্চাগুলো
বকা শুনে,
ক্লাসে প্রথম না হলে যে মরবে মায়ের
কির্তী জেনে!
বলবে বাবা রেজাল্ট কি গো, প্রথম
এবার হয়েছ তো?
না বললেই, টিউশন মাষ্টার ডেকে
পাঠায়, টাকাগুলো ফেরৎ দিনতো!
প্রথম যদি না হবে তো চাকরি বাকরি
হবে কেমনে!
আধুনিকতার মোড়কে মুড়ে বাচ্চাগুলো
যাচ্ছে মরে,
দেখেও যেন অন্ধ হয়ে তাদের উপর
অত্যাচার করে।
ছিল না তখন বিজলি বাতী, ইউনিফর্ম
আর উচ্চ আশা,
তবু আজও তারাই সেরা গর্বিত
তাদের কর্মে বাংলা ভাষা,
দেখি এই আধুনিকতা, এই প্রযুক্তির
উন্নয়নে,
মরছে শিশু, মরছে পিতা, মরছে মাতা,
মরছে সমাজ দিনে দিনে!
—oooXXooo—