আমি গঙ্গা
সুপর্ণা দত্ত
✍️✍️✍️✍️
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী থেকে নির্গত হয়ে
ছুটে চলেছি অনবরত অবিরাম,
গোমুখ থেকে পড়তে পড়তে
মালভূমি হয়ে সমতল ধাম।
আমি চঞ্চল, আমি উচ্ছ্বাস
প্রবল জোয়ারে হয়েছে নগরি উৎখাত,
বয়ে চলেছি কত শতাব্দীর ইতিহাস
যুগ যুগ ধরে গ্রাম-শহর হয়েছে ধূলিস্যাৎ।
মিশে গিয়েছি বিপুল জলস্রোতে
হারিয়ে গিয়েছি অতল সাগরে,
গড়ে তুলেছি কত কত সভ্যতা!
ধ্বংস করেছি শত শত মহানগরে।
আমাকে নিয়ে লেখা হয়েছে কত গল্প-গাঁথা!
বোনা হয়েছে হাজার নক্সীকাঁথা,
আমি পূজিত হই মর্তে দেবীরূপে সর্বকালে
মুক্তি পায় পাপী, মর্তবাসী করে লৌকিকতা।
পুরান মতে,দেবতাদের তুষ্ট করে মুনি ভগীরথ
মর্তলোকে আহ্বান করলেন আমায়,
জটাধারীর জটা থেকে হল আমার মর্তে আগমন
আমার শীতল জলে হল উপকৃত মানবজীবন।
তিনটি গতিতে আমি আদর্শ একটি নদী
উচ্চ প্রবাহের আমি উচ্ছ্বসিত সুন্দরী নারী,
মধ্যমাতে চলতে চলতে দুই তীর গড়ি
পলি জমাতে জমাতে নিম্নে শান্ত হয়ে পড়ি।
বহু তীর্থস্থান,পীঠস্থান গড়ে উঠেছে দুই তীর জুড়ে
কল-কারখানা,দুর্গ গড়ে ওঠা আমায় কেন্দ্র করে,
প্রতিবছর আমার জলেতে করে পিতৃপুরুষের তর্পণ
শবদাহে সদগতি চিতাভস্ম করে গঙ্গা জলে অর্পণ।
আমার জল সিঞ্চনে হয় সকল পবিত্র
আমার জলেতে হয় দেবতার আহ্বান,
সকাল-সন্ধ্যায় পূজা আরতি হয় আমার স্মরণে
গঙ্গাসাগর মেলা বসে সাগরের সাথে মিলন স্থানে।
ভাগীরথী নাম আমার ভগীরথের আহ্বানে
জাহ্নবী নাম পাই আমি মুনি জহ্নুর মুক্তি দানে।
যতই দূষিত ও কলুষিত করুক জলকে আমার
পরিত্রাণ পায় সবে “গঙ্গা” নামেতে আমার।
—ooXXoo—