শেষ হবে প্রাণীকুল
বর্ষা বিশ্বাস
অপরূপ সুন্দর সবুজ গালিচার বাগান চারিদিকে, যেন এক নারী তার ঘন সবুজ আর নীলচে আকাশি চুল চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সে যেন এক স্বর্গ। জন্মসূত্রে সে আমাদের চেয়ে ঢের বড়, প্রায় কয়েকশো কোটি বছরের। কথাটা কয়েক যুগ আগের, কথাটা আমাদের পৃথিবীর। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে সূর্যের সঙ্গে এক গুহানুর সংঘর্ষে জন্ম তার। তখন আমাদের পৃথিবী কেবল এক আগুনের পিন্ডের চেয়ে বেশি আর কিছুই ছিল না। আস্তে আস্তে সে ঠান্ডা হতে শুরু করল, ধীরে ধীরে তার উপরিতল শক্ত হলো, উঁচু নিচু ভূখণ্ড তৈরি হলো। তারপর কোন এক আশ্চর্যজনক ঘটনায় পৃথিবীতে সন্ধান মিললো জলের। তৈরি হলো এক অতিকায় বিশাল মহাদেশ এবং তাকে বেষ্টন করল এক বিপুল জলরাশি। এই দুটির নাম, প্যানজিয়া এবং প্যানথ্যালাসা। ধীরে ধীরে পৃথিবীর উষ্ণ লবণাক্ত জলে কোশের সৃষ্টি হল। তারপর এল উদ্ভিদ এবং কিছু জীব। চারিদিক আলো করে ভরে উঠলো সবুজে, দিক দিগন্তে খালি সবুজ আর সবুজ। আর এক অতিবিশাল অন্তহীন জলরাশি। তার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে এলো নানান বাহারি ফুল এবং কিছু জীবজন্তু। সেই প্রাণীকুলের এক বিরাট অংশের অবশ্য এক উল্কাপাতের জন্য বিলুপ্তিসাধন ঘটল, কিন্তু রয়ে গেল আরেক ছোট অংশ। আর সেই থেকেই নানান বিবর্তনের মাধ্যমে এলো পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিজীবী প্রাণী, মানুষ। সে এক অভিশাপ না আশীর্বাদ তা এখনো জানা যায়নি। এই মানুষ পৃথিবীর নানা উন্নতি ঘটালেও পরিবেশকে অতিরিক্ত দূষিত করে চলে। এই দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত পরিমাণে কৃত্রিম যন্ত্রপাতি ব্যবহার, বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ, উন্নত কৃষি কাজ যেমন মানব জীবনের বুদ্ধিমত্তা নজির ঠিক তেমনি পৃথিবীর এক সংকটপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ। সবুজহীন চারিপাশের অট্টালিকা, বড় বড় রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি যেমন গ্রাস করছে মানুষের পরিবেশ সুলভ ধ্যান-ধারণা কে, ঠিক তেমনি দূষিত করছে মাটি। শুধু অট্টালিকা নয়, খাদ্যাদি উৎপাদনে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক, এছাড়াও প্লাস্টিক, রাবার ইত্যাদি যেমন মৃত্তিকা দূষণে অংশ নেয় ঠিক তেমনি জল দূষনেও বিরাট ভূমিকা পালন করে। এগুলির বেশিরভাগই মাটির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এছাড়া পেট্রোল, ডিজেল, নানান জ্বালানি যেসব জিনিস মানব জীবনের এখন প্রায় সঙ্গী বললেই চলে, সেগুলি অতিমাত্রায় বায়ু এবং জলের দূষণ ঘটাচ্ছে। এক অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, বিদ্যুৎ, যা ছাড়া মানব জীবন এখন প্রায় অচল, তা পরিবেশ দূষণের এক অনেক বড় অংশ। তড়িৎ শক্তি উৎপাদনে তৈরি ধোঁয়া এবং তড়িৎ দ্বারা পরিচালিত জিনিস গুলি দ্বারা নির্গত CFC গ্যাস বায়ু দূষণের সঙ্গে সঙ্গে ওজন স্তরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। আর এই পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় অংশ, বৃক্ষচ্ছেদন, এটি মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল। এই বৃক্ষচ্ছেদনের জন্যেই মাটি ও বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে আর পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে মানুষ যে পরিমাণে কয়লা এবং পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করছে তাতে শুধু এই গচ্ছিত সম্পদের ভান্ডার-ই শেষ হবে না, শেষ হবে বায়ু, মৃত্তিকা এবং অবশেষে মানুষের বসবাস সুলভ আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী। উন্নতি ভালো, তবে এক নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনেই সেই উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। কারণ মানুষের এই অনিয়মিত অগ্রগতি মানুষকে একদিন ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে, এই কথাটা মানুষ যত দ্রুত বুঝবে ততই তার মঙ্গল। পরিবেশ দূষণ বন্ধ না করলে আমাদের এই বাসভূমি একদিন মৃত্যুর মুখে চলে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে আরো এক যুগ, শেষ হয়ে যাবে সমগ্র প্রাণীকুল। গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান।
—ooXXoo—