অভিমান
দীননাথ চক্রবর্তী
জৈষ্ঠ্যের একটা সুন্দর অভিমান থাকে। একেবারে নিজস্ব ঘরানা । সেই ঘরানার মধ্যে না আছে কোন মেদ। না আছে কোন খাদ। আবার কোন কৃত্রিমতাও নেই। নেই কোন বজ্রগর্ভ হুঙ্কার । তবু আছে কিছু একটা। কিচ্ছু ভালোলাগা ,মৌসুমী বাতাস ,মেঘ সূর্যের লুকোচুরি ,আর একটু একটু রাগ । অভিমান আর রাগের যুগলবন্দিতে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে অনুরাগ। চোখের পাতা বারেবারে ভিজে যায় । ভিতরে ভিতরে ফোঁপানি নাসিকা পথে মাঝে মাঝে আটকে যায় । আবার কখনও বা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এসে বুককে লাঘব করে। এরপর মাথাটা বুকে লেপ্টে যায় । অনুরাগের প্লবতায় ভরাডুবি আর হয়না। ভেলা হয়ে পাল তুলে দেয় । পালে বাতাস লাগে । কণ্ঠে ভাটিয়ালী মৃদুমন্দ জলতরঙ্গে অনুরণন তোলে। ভাসতে ভাসতে একসময় বৈতরণী পার হয়ে যায় । যে ঘাটে ভেলা ফেরে সেই ঘাটের মাঝিরা নাকি হৃদয়ের স্বপ্ন দিয়ে রচনা করেছে সে সব। এর মধ্যে আছে একটা অন্যরকম উত্তেজনা । একটা আবেগ। একটা মাতলামি । সন্ধ্যের ঝড়ে সে মাতলামিটা প্রকট। মেঘ ছিঁড়ে দুফাঁক হয়ে যায় আলোর রেখায়। সেই ফাঁক দিয়ে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে বৃষ্টি । অভিমান আর রাগের রসায়নে জারিত অনুরাগের বৃষ্টি । গাছের মগডালে থাকা একটা বুলবুলি প্রথমে তা পান করে । দুটো শালিক গাছ থেকে আসে নেমে মাটিতে ভিজতে । এক মা শিশুকে কোলে নিয়ে ভেজে । মনটাও কখন ভিজে যায় ।
—ooXXoo—