গল্প লিখতেই বসেছিলাম। আমার প্রিয় মানুষটি গল্প পড়তে ভালোবাসে।তাই এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। আজকাল সারাদিন মনের সাথে প্রেম করি।এত উড়নচন্ডী হলে কেমন করে লেখার রসদ আসবে? এখন মাঝরাত।গরমটা একটু পড়েছে।বিছানার পাশে জানালা।উপরের পাল্লা দুটো খুলে দিলাম। আঃ!কী শান্তি! কিন্তু কীভাবে গল্প শুরু করব!জানালার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখলাম। কী অন্ধকার। অমাবস্যা বোধহয়।আর এইসব দিন খুব ভয়ঙ্কর।ভাবলাম ওদের জীবনের প্রেম নিয়ে লিখি।যেই ভাবা ওমনি দেখি জানালার ওপারে কে যেন বাঁপ বাঁপ করছে।আমি গেছি।বৃন্দাবনের প্রেম লীলা অক্কা পেল।একটা গান শুনতে পাচ্ছি।কী মাদকতা সেই সুরে।ভালো করে শুনছি।”সুঁদু উঁউউঁউ দুজনে”। ভয়ে ভয়ে বললাম “কারা দুজনে?কী বলছো গো”!
মণিরাম শেষ পর্যন্ত মরার পরে হল স্কন্ধকাটা।কুলীন ভূতেরা তাকে দূরছাই করলে।শেষে ওই আশ্রয় নিলে আমার বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানে। এমনিতেই আমি একটু নাড়পটকা গোলাগালা।ও সেটা জানতো ।যখন পেরানবায়ু ছিল তখন এক আগুনে বিড়ি খেয়েছি।সেটা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার পলেস্তারা খসা বাড়ি।কাজেই প্রকৃতির ডাকে বাঁশবাগান ভরসা।সেদিন আবার বাউনদের ননীর বিয়েতে মরা পেটে চড়া দিয়ে নুচি গিলেচি।মাঝরাতে পেটে ফুটফাট।বললে “ওঠ এবার “।যেখেনে বাঘের ভয় সেখেনে সন্দে হয়।তবু যেতেই হবে।একটা পরিস্কার জায়গা খুঁজছি।আর ওমনি একটা শব্দ “বাঁআআআপ।বাঁআআআআপ”।
আমার কিন্তু মণিরাম কে চিনতে ভুল হয় নি।ফেসবুক থেকেই আমি সকলকে চিনতে পারি।সেদিন একটা কালো কিষ্কিন্ধ্যে দামড়াকে দেখে কী অবাক হয়েছি ।কদিন আগেও তাকে ফর্সা জানতাম। কাজেই বললাম “মণি।চালাকি ন চলিষ্যতি।আমার চিনতে বাকি নেই তোমাকে।” মণি র হাত গুলো ভরসা ।বললে “বাঁআআআপ “। আমি বললাম “চোপরাও।তুমিও কেন লাইনে মাথা দিয়ে স্কন্ধকাটা হলে বলো”? মানুষ এর চোখ মুখ দেখলে বোঝা যায় সে ভয় পেয়েছে কি না।এর তো তাও নেই। তবু কয়েক টা জিনিস লক্ষ করে বুঝলাম বেটা ভয় পেয়েছে।আমার কেন জানিনা ফুর্তি তে পরান গড়ার মাঠ ।এই মণিরাম এর জীবনের গল্প টাই লিখে দেবো।এটা কেউ ঝাড়া মাল নিশ্চয়ই বলবে না।তারপর ফেসবুক এর বিভিন্ন গ্রুপে লাইক আর কমেন্ট। কী হাতিঘোড়া নাচবে জানি না।তবে মণিরাম এর গল্প আমাকে জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে যাবে।মণিরাম যে গল্প বলল তা ভদ্রসমাজে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটা খুব চিন্তার বিষয়।ওর স্বপ্ন ছিল বড় লেখক হবে। আদবকায়দাতেও ছিল দস্তুরিচাল।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে বাংলায় ব্যাক পেল।পরের বছর পাশ করে ভিনরাজ্যে গেল শ্রমিকের কাজ করতে।আলুজমির ভিতে টেনে ন হাজার টাকা পেয়ে একটা মোবাইল কিনলে।আর ওটাতেই পেয়ে গেল লক্ষ্যের পাঁচিলটা। মণিরাম বললে “দ্যাখ। আমি হলাম গিয়ে অষ্টম গর্ভের সন্তান। কৃষ্ণের মতো আমার ও অনেক ইয়ে ছিল। ফেসবুক এ পরথম দেখা হল এক লেখিকার সঙ্গে।তার ঠমক চলন,ছলক বলন”। আমার কৌতুহল তখন আকাশ চুম্বী।বললাম “তারপর”।স্কন্ধকাটা হয়েও মোবাইল ছাড়ে নি মণি।আমাকে দেখালে ওর কেত দেওয়া ছবিগুলো।আমার ভুরু দুটো তখন মাথার চুল গুলো স্পর্শ করেছে।বললাম মণি রে।তোকে তো মাইকেল এর মতো লাগছে রে।আর একটাতে পুরো উত্তমকুমার। আরিব্বাস।কী করে এমন করলি? এমনিতেই তো কেলে পিলসুজ।আর অমন সুন্দর হলি কি করে?
আমার কথা শুনে গ্রাম বাংলার ভূত স্কন্ধকাটা মণিরাম কেঁদেছিল। তবে চোখ তো নেই। হৃদয়ের টানে বুঝেছিলাম। ও বললে পরথম যে ভালোবাসার ফাঁদে পড়েছিলাম ওই লেখার টানেই।পরে জানলাম সব টুকলিফাই। বড় বড় লেখকদের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিত মেয়েটি।আর আমি ভাবতাম আমার প্রেয়সীর হাত ধরে আমিও লেখক হবো।কী কপাল আমার।বলা বলি কথা কি এত বড় একটা সাহিত্য প্রতিভা মাঠে মারা যাচ্ছিল।এবার মণি পেলে সাহিত্য রচনার উন্মুক্ত অবসর।আমরা একসাথেই ছোটবেলায় নিমাই মাস্টারের কাছে পড়েছিলাম। মণিরামের সাধুভাষার ব্যুৎপত্তি বিশাল।আর্ধেক লোক না বুঝেই বলে বেশ লেখা।তোফা লেখা। উড়ে এসে জুড়ে বসাতে বেশ দক্ষ এখন মণিবাবু।একদম মার্জিত সংস্করণ।ঘটল একটা ঘটনা।এতদিনে মণিরাম বেশ নাম করেছে।বিশেষ করে রমণীমহলে।সকলের বন্ধু সে।সকলকেই বলে “বিশ্বাস করে দেখতে পারেন। বন্ধু হিসাবে আমার দুনম্বরী নেই “। মণিরাম এর সাধনা সফল হতে চলেছে।লেখে আর বন্ধুদের হাঁক দেয়।একটা সুন্দর কমেন্ট করে দাও। এমনি করে মণিরাম আজ বিরাট লেখক। মণিরাম আমার সহপাঠী ছিল। ওর বাকী জীবনের গল্প লিখতে গিয়ে মনটা ঢ্যামন আঁচড় দিচ্ছে।বুদ্ধিমান পাঠকেরা বাকিটা বুঝে নেবেন। তবে দুকান কাটা অনেক বন্ধুর সাক্ষাৎ পেয়েছি।এ আবার স্কন্ধকাটা।কান দুটো সাথে মাথাটা ফিরি। হে বন্ধুগন!ফেসবুকীয় ভূত সাম্রাজ্যে অনেক এককান কাটা,দুকান কাটা পেয়ে যাবেন। তবে যদি স্কন্ধকাটা দেখেন তবে জানবেন সেটা মণিরাম। আর গান যদি শুনতে চান তবে শুনতে পাবেন “সুঁদুউঁউঁ দুঁজনে।