কৃষিতে দখলদারি সম্পূর্ণ
পার্থ চ্যাটার্জী
কৃষিতে দখলদারি সম্পূর্ণ, পরিবেশও সর্বনাশের দোরগোড়ায়
অধিকারের চেতনাকে ধ্বংস করে দয়া ও আপোষ নির্ভর চেতনা গড়ে তোলার কাজটি করছে NABARD
যারা চাষটাকে এইরূপ সর্বনাশ করার ফন্দি এঁটে ছিল তারা কিন্তু কেউ চাষি ছিল না ! চাষি না হয়েও তারা চাষবাস নিয়ে ভেবেছিল। কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল দুটো। প্রথম লক্ষ্য কৃষি নিয়ে ব্যবসা। দ্বিতীয় লক্ষ্যটা ছিল প্রচ্ছন্ন। সেই লক্ষ্যটা ছিল শাসকশ্রেণীর। সেটা ফুটে বেড়িয়ে ছিল এক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মুখ দিয়ে।”যদি একটা দেশের খণিজ সম্পদ দখল করা যায় তাহলে দেশটাকে দখল করা যায়,আর যদি খাদ্য দখল করা যায় তাহলে সেই দেশের মানুষগুলোকেও দখল করা যায়”।তারা এটা করতে পেরেছিল কারণ তাদের হাতে ক্ষমতা ছিল। আচ্ছা ক্ষমতা থাকলেই কি ভালো কিছু করা যায়? আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কাও তো চেয়েছিল চাষটাকে জৈব করতে। পেরেছিল কি? আসলে রাসায়নিক-লবি এতোটাই শক্তিশালী যে, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হয়ে যাবার অন্যান্য অনেক কারণ থাকলেও খাদ্য সঙ্কটটাকেই আসল কারণ প্রচার করিয়ে জৈব চাষকে কালীমালিপ্ত করলো। তার মানে সরকারি ক্ষমতা বাদ দিয়েও আর একটা বড় ক্ষমতা আছে যে ক্ষমতার জোরে একটা শক্তি গোটা পৃথিবীটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন আমরা নিরাপদ খাবারের জন্য আন্দোলন করছি তো ! ষাটের দশকে সবারই খাবার মিলবে এটাকে সামনে রেখেই ‘সবুজ বিপ্লব’-এর আগমন ঘটিয়ে ছিল।সরকারিভাবে সরকারি প্রচার যন্ত্রেই এই কথাগুলি প্রচারিত হয়েছিল, “ক্ষুধার কবল থেকে মুক্তি”, “আধুনিক কৃষির জয়যাত্রা”, “বিজ্ঞানের অগ্রগতি” ইত্যাদি ইত্যাদি। বর্তমানে আমরা কি দেখছি ? অক্সফ্যামের রিপোর্টই দেখিয়ে দিচ্ছে বেশির ভাগ মানুষেরই ঠিকমতো খাবার জোটে না। এদিকে বিগত ষাট বছর ধরে রাসায়নিক বিষের কারণে সমস্ত খাদ্য বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন অনেক মানুষ সচেতনও হয়েছে। তাই দেশের সরকারও সরকারিভাবে বিষমুক্ত চাষে উৎসাহ দিচ্ছে।এর ফলে কি সমস্ত মানুষই সুস্থ খাবার খাবে ? না একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। আগে তো রাসায়নিক-লবির ক্ষমতা খর্ব করার ব্যবস্থা হোক।
তাবলে কি আমরা নিরাপদ খাবারের দাবি করবো না ? অবশ্যই করবো।আরও জোরের সঙ্গে তুলবো। কিন্তু উপরিউক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এগোবো। একটা অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলি। একটা ছোট রাসায়নিক কারখানা। বিষাক্ত পরিবেশ। কিছু শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা এই যে বিষের মধ্যে কাজ করছেন শীঘ্রই অসুস্থ হয়ে মারা পরবেন তো ! তিনি উত্তরে বললেন, দেখুন আমি যদি কাজটা ছেড়ে দিই তাহলে না খেয়ে কালকেই মারা যাব,আর কাজটা যদি করি দশদিন তো বাঁচব। খাবার সহ সমস্ত সমাজটা বিষমুক্ত হওয়া তার জন্যই তো আগে দরকার। এখন আমরা কি আশা করতে পারি সহজে তাকে আমরা পাবো আমাদের আন্দোলনে ? এই কাজে প্রথমে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষত যাদের পরিবারে অন্য কেউ উপার্জন করেন তাদেরই, যেখানে কাজ করবার জন্য পড়ে আছে গোটা দুনিয়া। আমরা যদি সত্যিকার আন্তরিক হই, পূর্বের সমস্ত লেখাগুলির আগামী বিপদটা অনুধাবন করে , অন্তত কৃষিটাকে নিজেদেরই স্বার্থে বিষমুক্ত করার জন্য আশেপাশের গ্রামে গিয়ে আলোচনা চালাতে পারি। নাহলে আমাদের পরিণতি সেই শ্রমিকের মতোই হবে, উনি না খেয়ে দশদিন পরে মরবেন আর আমরা বিষ খেয়ে মরবো এই যা পার্থক্য।
—ooXXoo—