রাতের নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন পথে যাবো ? ‘তোমারি নিজের ঘরে চ’লে যাও’ – বলিল নক্ষত্র চুপে হেসে – অথবা ঘাসের ‘পরে শুয়ে থাকো আমার মুখের রূপ ঠায় ভালোবেসে ; – জীবনানন্দ দাশ
চাষীরা ভীষণ ভাবে সমস্যায় জর্জরিত। তাঁরা যেহেতু সমাজের অর্ধেকের বেশী অংশ,আর যে রাজনৈতিক-সামাজিক কারণে তাঁরা বিপদগ্রস্ত, সেই সমাজের উৎপত্তি বিকাশ নিয়ে আমাদের একটু অনুসন্ধান করে নিতে হবে।
অতীত থেকে বর্তমান সমাজ : খুব সংক্ষেপে বললে, মোটামুটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে সামন্ততান্ত্রিক ব্যাবস্থা ক্ষয় হওয়া শুরু হয় এবং পুঁজিতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে থাকে।তারও আগে ছিল প্রথমে আদি সাম্যবাদী সমাজ তারপর দাশ সমাজ।পাঠ্য বইতে এগুলি আমরা সবাই পড়েছি। এখন একটা সমাজ ব্যবস্থা তার পূর্ববর্তী সমাজ থেকে অবশ্যই উন্নততর। এই যে একটা সমাজ ব্যবস্থা থেকে পরবর্তী সমাজের দিকে বিবর্তন – কেন তার প্রয়োজন হয় ? প্রয়োজন পড়ে এই কারণে যে, পূর্বের সমাজটা আরও প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করে।সমাজ বিজ্ঞানের এই ধাপগুলো ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভালোভাবে সংগঠিত হতে পেরেছিল।ঐ সময়ে এই প্রগতিশীল কাজটি যাদের নেতৃত্বে হতে পেরেছিল তাদের বলা হয় বুর্জোয়া।আর তাদের সহায়তা করেছিল কৃষক এবং মেহনতি মানুষজন। এই ঘটনাগুলো ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে সংগঠিত হতে পারে নি। করতে দেয় নি ব্রিটিশরা।ভারত ছিল দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে উপনিবেশ।তারা যখন ভারতে আসে তখন সামাজিক নিয়মেই ছিল সামন্ততন্ত্র।আর অবশ্যই ছিল দেশীয় শিল্প বিকাশের একটা ধারা। ক্ষমতা দখল করে ব্রিটিশরা এদেশের সামন্ততন্ত্রকে ধ্বংস করার দিকে তো গেলোই না, উল্টে ভারতের সম্পদ লুটের জন্য আরও সাংঘাতিক শোষণমূলক ব্যাবস্থা চালু করলো।যেমন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ইত্যাদি।আর ধ্বংস করলো ভারতীয় শিল্প বিকাশের ধারা।একইভাবে ততদিনে ইউরোপে একসময়ের প্রগতিশীল বুর্জোয়া শ্রেণীর চিন্তা ভাবনায় অধঃপতন ঘটতে শুরু করেছে। পরবর্তী আরও উন্নত সমাজের দিকে না গিয়ে, কেবলমাত্র নিজের বা নিজ শ্রেণীর ভালো থাকার লক্ষ্যে সংকীর্ণতায় আবদ্ধ হয়ে থাকলো। আপোষ করলো সামন্ত তন্ত্রের সঙ্গে।বর্তমানে গোটা দুনিয়াতে এই বুর্জোয়া শ্রেণীই তাদের মতো করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। সেই সব দেশগুলোকেই বলা হয় সাম্রাজ্যবাদি দেশ। তবে দেশে দেশে তাদের শোষণের ধরনটা বদলে নিয়েছে। সেটা কি রকম ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অন্য দেশে তাদের প্রভুত্বের প্রধান রূপ ছিল উপনিবেশিক শাসন। বিশ্বযুদ্ধের পরে সেটাই বিবর্তিত হয়ে নয়া উপনিবেশিক শাসন, প্রাধান্য ও শোষণের রূপ নিয়েছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। গোটা পৃথিবী সহ ভারতে পরবর্তী উন্নত সমাজে যাওয়াটা এখানেই থমকে আছে। সেই কর্তব্যটা যতদিন না সম্পন্ন করা যাচ্ছে, ততদিন অবধি সকল মানুষের নিকট নিরাপদ আহার পৌঁছানো তো দুর অস্ত, সাধারণ আহারও সহজে পৌঁছাবে না।যাই হোক আজকের পৃথিবী আরও জটিল রাজনীতিতে আবর্তিত হচ্ছে।যার বিষাক্ত প্রভাবে ভারতীয় জনগণ জ্বালা যন্ত্রনায় ভুগছে।তার অনুসন্ধান পরবর্তী সংখ্যায় আমরা করবো।