মানুষের আনন্দ প্রকাশের কয়েকটি ধরন আছে। যেমন হাসি, আলিঙ্গন, সহভোজন ইত্যাদি। ব্যক্তিগত ধরণও থাকতে পারে। তবে তা কখনোই শব্দবাজি ফাটানোর মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়। অথচ পুজো কিংবা সামাজিক উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে শব্দবাজি ফাটানোর যে ধুম তা ক্রমশ সমাজের সর্বস্তরে বিস্তারিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার নিচ্ছে।
বাজি এবং বোমা প্রস্তুতকরণের প্রণালী প্রায় একই রকম। উপাদানও প্রায় এক। শুধু শক্তির পার্থক্য। যে পটাশ, বারুদ বাজি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তা অতি নিম্নমানের। আর বোমার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয় অতি উচ্চমানের। সঙ্গে অবশ্য আরও শক্তি উৎপাদনকারী রাসায়নিকও সংযোজন করতে হয়। ফলে বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা থাকে বাজির থেকে অনেক বেশি। বহু মানুষ হতাহত হয়, অপরদিকে বাজির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা যেহেতু কম, এতে মানুষ না মরলেও এরা কীট পতঙ্গ ধ্বংস করতে বেশ সক্ষম।
এই বাজি যে অনেক সময় মানুষের পক্ষেও ক্ষতিকারক, দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার যথেষ্ট দৃষ্টান্ত আছে। যেমন – সেদিন এক পথচারী আনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পথে একটি ছেলে এক বাজির সলতেতে আগুন দিয়ে দূরে নিজেকে নিরাপদে রেখে সেটা বিস্ফোরণের জন্য অপেক্ষা করছিল। পথচারীটি সে বিষয়ে অবগত না থাকায় সে আনমনে বাজির ঠিক অব্যবহৃত পাশেই পা রেখে দিলেন। সেই মুহূর্তে বিস্ফোরণ। একেবারে ধরাশায়ী। অন্যান্য পথচারীরা তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। দেখা গেল উক্ত পথচারীর পায়ের এক অংশ উক্ত বিস্ফোরণে ঝলসে গেছে। তারপর…
একটি মেয়ে ঘরে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘরের জানালা সামান্য খোলা। হঠাৎ সেই জানালার খোলা অংশ দিয়ে একটি হাওয়াই বাজি ঘরে একেবারে পড়ার টেবিলে আছড়ে পড়ে। ফলত মেয়েটির চিরতরে অন্ধত্ববরণ।
শব্দবাজি ফাটলে সবচেয়ে আতঙ্কিত হয় পাখিরা। তারা শব্দের উৎস নির্ণয় করতে না পেরে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে দিশাহীনভাবে আকাশে চক্কর দিতে থাকে। রাত্রিবেলা শব্দবাজি ফাটলে তাদের আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়।
পরিবারের যে বয়স্ক বয়স্কারা বার্ধক্যের ভারে ক্ষিপ্রতা হারিয়েছেন, ইন্দ্রিয় শিথিলতার শিকারে পরিণত হয়েছেন, তাদের কাছে এই শব্দবাজি এক মহা অস্বস্তির কারণ। কারণ অসুস্থদের ক্ষেত্রেও।
শিশুরা খেলার বস্তু ভেবে অনেক সময় পোড়া বাজি নিয়ে মুখে দেয়। এতে বিষক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। কখনো কখনো বাজি তৈরির কারখানাতেও অসাবধানতাবশত বিস্ফোরণ ঘটে যায়। তাতে প্রাণহানি, আহত হয় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। উদাহরণ স্বরূপ বুড়িমার বাজির কারখানা একবার এরকম বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আজকাল প্রায়ই এই ঘটনা ঘটতে শোনা যায়।
অধিক বিস্ফোরণের ফলে যে দূষিত ধোঁয়া বায়ুমন্ডলে মেশে তা গ্রীনহাউজ গ্যাস সৃষ্টি করে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পরিবেশ উষ্ণায়নে সহযোগিতা করে, যা জীবজগতের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।
বর্তমানে ডিজিটাল বাজির উদ্ভব হয়েছে যা দূরে নিরাপদে বসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সে নিরাপত্তা তো শুধু নিয়ন্ত্রকের জন্য। জনসাধারণ অহেতুক তার জন্য সতর্ক থাকতে যাবে কেন ?
পরিশেষে আলোর বাজির কথা যদি বলি, তাহলে বলবো আলোর জন্য তো বিজলী বাতির ব্যবহারই যথেষ্ট। বর্তমানে আলোকসজ্জার শিল্পীরা বিভিন্ন কৌশলে যখন তাদের উৎকর্ষতা দেখাতে সক্ষম তাহলে বিদ্যুতের পরিবর্তে রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই দূষণ ছড়ানোর প্রয়োজন আছে কি ?