শুধু কবিতার জন্য…
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
(৪র্থ পর্ব)
শিলং
পিনাকী ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ, কোথায় তােমার বাড়ি?
শিলং পাহাড় পেরিয়ে আড়াআড়ি
সামনে জলপ্রপাত
খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা দূর এসে
লেখা- কাটা– লেখায় কায়ক্লেশে
রক্তারক্তি হাত!
কোথায় অমিত ? লাবণ্য আজ কোথায় ?
পাহাড় ঘুরে কোন্ নদীটার সোঁতায়।
ঘটিয়েছিলে ওদের অ্যাকসিডেন্ট?
শিলং পিক-এ উঠতে উঠতে নাচ
আমরা আমােদগেঁড়ে কলমবাজ
হুল্লোড় ব্যাকসিটে
সবুজ শহর ছাড়ছে সবুজ শাড়ি
কোথায় ? কোথায় ? তােমার রঙিন বাড়ি
পাইনবনে লুকিয়ে আছে আজ
তুমিও ছিলে ঠিকানাহীন কবি,
চাকরি খুঁজে ধ্বস্ত মুখচ্ছবি
এমনই আন্দাজ !
……………..
অনুধ্যানের আখরে
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
……………………
শিলং বাঙালীর স্বপ্নময় প্রশ্রয়ের জায়গারই অন্য নাম। সেখানে সকালবেলার মেঘ অযথাই এসে রাতের নীরব জ্যোৎস্নার মত জড়িয়ে ধরে। পাইনবনে ভারসাম্য হারিয়ে একে অপরের হাত ধরে। তাই শিলং এর কথা মনে আসলে বা সেখানে এলে সবাই লাবণ্য আর সবাই অমিত হয়ে যায়।
সেই অণ্বেষণ কানে কানে এসে কবিতার মত বলে দেয়,
“সবুজ শহর ছাড়ছে সবুজ শাড়ি
কোথায় ? কোথায় ? তােমার রঙিন বাড়ি
পাইনবনে লুকিয়ে আছে আজ
যে ত্রস্ত নাগরিক আজ বিষপেয়ালায় চুমুক দিতে অভ্যস্ত, সে স্বাভাবিক কারণে কখনোই শিলং পাহাড়কে ছেড়ে যায় না।
আসলে পেশাগত কাঠিন্য তাকে যে দূর্বল করে দেয়নি সেটাই সে শেষপর্যন্ত বুঝতে পেরে একবার অন্তত শিলংএ আসে। স্বল্পকালের তীব্রতায় সে জেনে গেছে যে এই আনন্দযাপন ও একাকীত্ব দুটোই আসলে এক ও বিরামবিহীন অণ্বয়ের এক নাম।
তাই সে ভাষার বাঁধনে বলে ওঠে,
“তুমিও ছিলে ঠিকানাহীন কবি,
চাকরি খুঁজে ধ্বস্ত মুখচ্ছবি
এমনই আন্দাজ !” এটাই সদ্য প্রয়াত কবি পিনাকী ঠাকুরের Lyrical ভারসাম্য।
তিনি যথার্থ নাগরিক কবি ও সংবেদী।
তাই কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মরদেহ কাঁধে তুলে শ্মশানযাত্রী হতে পারেন অবলীলায়।
তাঁর পূর্বজ যে এটাই শিখিয়েছিলেন তাঁদের প্রজন্মকে, সেদিন আর এক মহীরুহ কবিবর বুদ্ধদেব বসু’র প্রয়াণের দিনযাপনের কালে। এটাই তো যথার্থ উত্তরধারা হয়ে কলম ধরার প্রবেশিকার পাঠ!