লঙতরাই
ডঃ ভিক্ষু রতনশ্রী
শরৎকাল। সূর্য্য দুপুর গড়িয়ে বিকালে এসে পড়েছে। মিষ্টি রোদ, গরম তেমন একটা নেই বললেই চলে। পাহাড়ের থলিতে সমতল ভূমিতে জনগণের বসবাস। জায়গাটার নাম ছামনু বাজার। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একস্রোতা মনু নদী। নদীর পাড়ে ধানক্ষেত, নানারকম শস্যের জমি। জমিতে সবে মাত্র সর্ষের ফুল ফুটেছে, পাশাপাশি বেগুন, লঙ্কা, শসা, আলু, পিঁয়াজ-রসুনক্ষেত থাকায় অপরূপ সুন্দর লাগছে।
ছামনুবাজারের বাসিন্দা নির্মল(=ডাকনাম গুড়াসোনা) মনুনদীর পাড়ে তার জমিতে বেগুন লাগিয়েছে। বেশ ভাল ফলন হয়েছে। আসলে বর্ষাকালে পাহাড়ধোয়া জলে মনুনদী ভরপুর হয়ে যায়। নদীর উপছে পড়া জলে তীরবর্তী জমিগুলি পলিমাটিতে ভরে যায়। ফলে জমিগুলি বেশ উর্বর হয়। এই উর্বর জমিতে যে কোন কিছু লাগালে ফলন ভাল হয়।
একদিন ছামনুবাজারের অপর এক বাসিন্দার বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে ভবরঞ্জন কথাচ্ছলে বলেই ফেলল, কি অপূর্ব রান্না! দারুণ স্বাদ হয়েছে। এইরকম স্বাদের নেপথ্যে কারণ হল উর্বর জমিতে ফলিত সবজি আর শুদ্ধ জল। দুটি মিলিয়ে সবজির রান্না স্বাদই হয়। অপরদিকে নির্মল বেশ দক্ষ একজন কৃষক। অনেকেই বলে তার হাতে নাকি জাদু আছে। সে যা’ই লাগায় তাতে ভাল ফলন হয়।
মনু নদী জলস্তর থেকে লঙতরাই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১.৫ কিমি। প্রতিবছরই এই লঙতরাই পাহাড়ে শিবচতুর্দশীর দিন পূজা দেবার প্রচলন রয়েছে। গ্রামের মহিলারা বিশেষতঃ ঐদিন শিবলিঙের পূজা করে থাকে। সেখানে আবার মাতৃযোনি পূজাও হয়ে থাকে। পাহাড়ের শীর্ষদেশে বৃহৎ একখণ্ড পাথর একইঞ্চি জায়গায় লেগে রয়েছে। এটা দেখতে লোকের ভিড় হয়।অবশ্য অনেকেই উক্ত স্থানে পৌঁছাতে পারে না। নির্জন মেটো পথ ধরে যেতে হয়। বিপদসঙ্কুল তো বটেই, সাহস না থাকলে ঐ পথ ধরে কেউ যেতে পারে না। তাছাড়া সচরচর ঐ পথে লোকজনের চলাচল কম। একমাত্র পূজারী ব্রাহ্মণই যাতায়াত করে থাকে। পথের দুপাশে থাকা জঙ্গলের মধ্যে ঝিঝি পোকার শব্দ, কখনও কোন কোন পাখীর আওয়াজ এবং টুং টাং শব্দ। নতুন কেউ হলে তো ভয়ে কাতর হয়ে যাবেই। পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। পথ চলার সময় আবার কোথাও সামান্য সময়ের জন্য বিশ্রাম করতে হয়। টানা কেউ পাহাড়ে উঠতে পারে না। তাই সঙ্গে একটু বোতলে করে পানীয় জল নিতে পারলে ভাল। পাহাড়ে হিংস্র তেমন কোন জন্তু জানোয়ারের দেখা মেলে না। মানুষের বিশ্বাস এই পাহাড়ে একটা হাতি বাস করে। তার সামনের পা অপেক্ষাকৃত পেছনের পা থেকে বেটে। তার নাকি অসম ক্ষমতা, সে অনেক কিছু করতে পারে। তাকে এলাকার লোকেরা মান্য করে। এলাকার অরবিন্দের কথায় ঐ হাতিকে উদ্দেশ্য করে কেউ অপমান সূচক কথা বললে আর রক্ষা নেই। সেদিনই অপমানকারীর মৃত্যু সুনিশ্চিত। অপমানকারী যদি কারও সঙ্গে লুকিয়ে থাকলে বা দলবদ্ধ হয়ে থাকলে ঐ হাতি এসে অপমানকারীকে চিহ্নিত করে তুলে নিয়ে গিয়ে আছড়ে মেরে ফেলে। ঘটনাটা নিচক আলাদা কোন ঘটনা নয়, একেবারে বিস্ময়কর ঘটনা। এ রকম ঘটনা বহুবার ঘটেছে। এজন্য স্থানীয় লোকজন এই হাতিকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করে থাকে। লোকে তাকে লঙতরাই বাবা বলে থাকে। ছামনুবাজারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে লঙতরাই বাবার একটা মন্দির করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ওখানে সকলে পূজো দিয়ে থাকে।
ছামনুবাজার সংলগ্ন একটা বুদ্ধমন্দির আছে। এই মন্দিরের নাম” অজন্তা বিহার”। এই বুদ্ধ বিহারকে কেন্দ্র করে মুষ্ঠিমেয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে। তারা নিজেদের মত করে বিভিন্ন পর্বানুষ্ঠান করে থাকে। অনুষ্ঠানের দিন তারা পরিষ্কার তথা অপেক্ষাকৃত নতুন জামাকাপড় পড়ে মন্দিরে আসে। বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে এক বা একাধিক ভিক্ষু বসবাস করে থাকে। তাদের কাজ মূলতঃ শাস্ত্রচর্চা, ধ্যানসাধনা করা, বৌদ্ধ সমাজের প্রয়োজনে সামাজিক কাজগুলি করা। বৌদ্ধ মন্দিরগুলি সাধারণতঃ স্বাধীনভাবে পরিচালিত
হয়। বাহ্যিক কারও দ্বারা বা কারও অঙ্গুলি নির্দেশে চালিত হয় না। স্থানীয় বৌদ্ধরাই উক্ত মন্দির পরিচালনা করে থাকে। লঙতরাই অঞ্চলের অন্তর্গত ছামনুবাজার অধ্যুষিত বৌদ্ধ পল্লী বেশ জমজমাট। এখানে শুধু যে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করে তা নয়, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকজনও বসবাস করে থাকে। সেখানে হিন্দু, উপজাতি এবং মাড়ওয়ারী ব্যবসায়ী আছে।
বৌদ্ধ মন্দির পেরিয়ে গেলেই পুরনো প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দেখা মেলে। স্কুলের এক বিশাল মাঠ আছে। ছামনু বাজারের বিপরীতে রয়েছে মিলিটারী ক্যান্টনমেন্ট। মিলিটারীর উচ্চপদস্থ কেউ বাইরে থেকে আসলে ঐ স্কুল মাঠে হেলিকপ্টার নামে। গ্রাম্য পরিবেশে হঠাৎ কোনদিন হেলিকপ্টার নামলে স্থানীয় লোকের ভিড় হয়, হেলিকপ্টার দেখার জন্য। গাড়ী চলাচল তখন তেমন একটা নেই বললে চলে। তবে ক্যান্টনমেন্টের কাছ থেকে ভলশেভিক নামে একটা বাস কৈলাশহরের উদ্দেশ্যে সকালে যেত আর বিকালে ফিরে আসত। তাছাড়া দু’চারটা জিপ গাড়ী চলত।এখন অবশ্য অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আগরতলা গামী বাস চলে। কখনও ধর্মনগর হয়ে কৈলাশহর যায়। আসামের বদরপুর ও শিলচর থেকে এই পাহাড় ঘেরা অঞ্চল দিয়ে আগরতলা অবধি রেললাইন হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে রেলগাড়ী আগরতলা অবধি চলে। লঙতরাইয়ের পাশ্ববর্তী আমবাসায় একটা রেলের স্টেশন হয়েছ। এতে জনগণের অনেক সুবিধা হয়েছে। আমবাসার কাছে সুপরিচিত আঠারমুড়া। আঠারটা বাঁক সমৃদ্ধ এই মুড়া বা পাহাড়। লঙতরাই এখন শুধু একটা পাহাড় নয়, অলৌকিক এক হাতির নাম নয়, একটা সাবডিভিশনও। আঠারমুড়া, আমবাসা লঙতরাই সাবডিভিশনের অন্তর্গত। ছামনুও ঐ সাবডিভিশনের অন্তর্গত।
ছামনু বাজার থেকে লঙতরাইয়ের দিকে যেতে পড়ে এক মাড়ওয়ারীর বাগানবাড়ী। সেখানে সজল নামে এক বাঙালী যুবক বাগানটির দেখাশোনা করে। প্রায়ই ঐ যুবকের আহ্বানে পরিমল নামে ছামনু বাজারবাসী ভদ্রলোক বৌদ্ধ মন্দিরের ভিক্ষুকে নিয়ে বাগানবাড়ীতে যেত। বাগানের ভিতর বিভিন্ন ফলাদির গাছ আছে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহের চাষ হয়। বাগানের ঐ কর্মী পরিমল ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মধু এবং অন্যান্য ফলাদি খেতে দিতেন। লঙতরাই মহকুমার মধ্যে পড়ে তালসরা নামে এক পাহাড়ী বাজার। সেখানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাজারে কেনাবেচা হয়। লঙতরাই মহকুমার লোকেদের জীবিকা নির্বাহ হয় চাষবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য। ব্যবসা বলতে কার্পাস তুলা, সরিষা, লঙ্কা এবং অন্যান্য সবজি ইত্যাদি।
লঙতরাই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে তালসরা বাজার। এই বাজার সপ্তাহে একদিনই বসে। এলাকার লোকজন তাদের জমিতে উৎপাদিত পণ্য এই বাজারে বিক্রয় করার জন্য নিয়ে যায়। বাজারটি বিকাল ৩ টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। বাজারটি দূর্গম অঞ্চলে অবস্থিত।
লঙতরাই পাহাড় সংলগ্ন থলিতে অনেক উপজাতি ও কতিপয় বাঙালী পরিবারের বসবাস। তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায় একমাত্র চাষাবাদ এবং ছোটখাট ব্যবসাবাণিজ্য। তারা পাহাড়ে জন্মায় এমন কিছু গাছপালার কচি অবস্থায় সবজি রূপে ব্যবহার করে থাকে। পানীয় জল হিসাবে পাহাড় ধোয়া ঝর্ণার জল পান করে। এক স্রোতা নদীতে স্নান এবং অন্যান্য কার্য সম্পন্ন করে থাকে। নদীর ধারে পাহাড় সংলগ্ন সমতল জায়গায় মোহন কারবারী ওরফে চাকমা স্ত্রী, দুই কন্যা নিয়ে বাস করে। মোহন কারবারীর স্ত্রী অহনা খুবই কর্মট। তবে ফর্সা সুন্দরীও বটে। মোহনের দুই কন্যা সুদর্শনা ও সুরমাও খুবই সুন্দরী। মায়াবী চেহারা, মিষ্ঠভাষী। ঘরে কোন অতিথির আগমন হলে তারা দুই বোন অত্যন্ত যত্ন সহকারে আপ্যায়ণ করে থাকে।
মোহন কারবারী পরম্পরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তাদের ঘরে বৌদ্ধ ভিক্ষুর আগমন হলে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাপ্লুত চিত্তে সেবা করে।
একদিন বিকাল বেলা সুদর্শনাদের ঘরে বৌদ্ধ ভিক্ষুর আগমন হল। সুদর্শনার ছোট বোন সুরমা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। ভিক্ষুপ্রবরকে দেখে সে বিছানায় ছটফট করছে। কেননা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না ভিক্ষুপ্রবরকে দেখার জন্য। তার তো ইচ্ছা হয়েছে ভিক্ষুপ্রবরকে অঞ্জলীবদ্ধভাবে প্রণাম করার, একটু সেবা করার কিন্তু সে পারছে না। ভিক্ষুপ্রবর তার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। ভিক্ষুপ্রবর ধীরে ধীরে তার কাছে গেলেন, সুরমা ভিক্ষুপ্রবরকে দেখে হাতজোড়া করে পরম ভক্তিশ্রদ্ধা সহকারে প্রণাম নিবেদন করলেন। ভিক্ষুপ্রবর তাকে আশির্বাদ করলেন। আসলে ভিক্ষুপ্রবর তাদের ঘরে গেলেন একমাত্র “তামানতঙ” পূজার কাঠামো তৈরীর কথা বলতে। সুরমার বাবা বেশ ভাল একজন কারিগর। তিনি বাঁশ দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরী করতে পারেন। এলাকায় তাঁর অর্থাৎ সুরমার বাবার সুনাম আছে। তামানতঙ অর্থ ভাতের চুড়া। প্রায় এক মণ চালের ভাত রান্না করে ধাপে ধাপে চুড়া বানাতে হয়। তারপর পূজা করা হয়। এই পূজা করার মূল উদ্দেশ্য দুর্ভিক্ষগ্রস্ত মানুষদের উপকার সাধন করা। প্রচলিত বিশ্বাস এই পূজা যারা করে তারা ভাতের কষ্টে ভোগে না। উপজাতীয়রা তাই এই পূজা করে থাকে। যতদিন এই পূজা নিজে থেকে নষ্ট না হবে ততদিন এই পূজার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকে।
সুদর্শনার লঙতরাই গ্রামে সঞ্জীব চাকমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে। সুদর্শনার স্বামী ওভারশিয়ার। সে সরকারী চাকুরী করে। সুদর্শনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা পড়াশুনা করে। পড়াশুনায় বেশ ভাল। ভাল হবে না কেন, সুদর্শনাও তো পড়াশুনায় ভাল ছিল। কৈলাশহর কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেছে। তবে সুদর্শনা ছামনু উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাল ছাত্রী ছিল। পাশাপাশি সুদর্শনার ছোট বোন সুরমা চাকমাও বরাবরই পড়াশুনায় ভাল ছিল। পড়াশুনার ব্যাপারে দুই বোনের মধ্যে খুনশুটি লেগেই থাকত। সুরমা ঐ ছামনু উচ্চবিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করেছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে মাধ্যমিকে ভাল ফল করার জন্য সুরমা চাকমাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সুরমাও কৈলাশহর কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বি. এ. পাশ করেছিল। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. পড়ার সময় ছৈলেঙটার এক ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সঙ্গে সুরমার বিয়ে হয়। সুরমার এই বিয়ে দেখেশুনে নয়, পরস্পর ভালবাসার কারণে হয়। ছেলেটি নাম ছিল দিনেশ চাকমা। কলেজজীবন থেকে দিনেশের সঙ্গে সুরমার ভালবাসা। দিনেশ ছিল বিজ্ঞানের ছাত্র আর সুরমা ছিল মানবিকের ছাত্রী। দুজনেই বেশ মেধাবী ছিল। ভালবাসা নিবেদন করতে গিয়ে ভবিষ্যতের কথা পরস্পর বলে ফেলল। সুরমা বলেছিল আমাদের ছেলে হলে তাকে প্রকৌশলী বানাব আর মেয়ে হলে তাকে মানবিকে স্নাতক বানাব। সুরমার প্রস্তাবে দিনেশ রাজী হয়ে গেল। এর পর বিয়ে করে তারা প্রায় চার বছর পর সন্তানের বাবা-মা হল। ধীরে ধীরে সন্তানকে লালনপালন করে পরিকল্পনা মাফিক লক্ষ্যে এগোতে লাগলেন।সুরমা ও দিনেশের প্রথম ছেলে হল। দু’বছর পর তাদের মেয়ে হল। সুরমা এতটুকু পড়াশুনা করে কখনও চাকুরী করার ইচ্ছা পোষণ করেনি। মোহন কারবারীর ভাগ্য ভাল যে তিনি দুই মেয়েকেই সুপাত্রস্থ করতে পেরেছিলেন।
মোহন কারবারী একটা বৌদ্ধ বিহারও নির্মাণ বৌদ্ধসঙ্ঘে দান করেছিলেন। তিনি জীবনে যতই পেরেছেন দান ধর্ম করেছেন। শেষ জীবনে স্ত্রী কালগত হলে তিনি বৌদ্ধসঙ্ঘে দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাসব্রত অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর সংগৃহীত সম্পত্তি তিনি বৌদ্ধসঙ্ঘে দান করে দেন। মোহন কারবারীর এই কাজে দুই মেয়ে বাধা প্রদান করে নি। ফলে মোহন কারবারী দুশ্চিন্তামুক্ত ছিলেন। মোহন কারবারী ৮৪ বছর বেঁচে ছিলেন। লঙতরাই অঞ্চলে লোকমুখে মোহন কারবারীর নাম শোনা যায়।
পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুই মেয়ে বৌদ্ধ সঙ্ঘে তথা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অকাতরে অর্থ দান করেন। শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সামাজিক কাজে অর্থদান করেন।
সুদর্শনা এখন সত্তর বছরে উপনীত। আলাপচারিতায় তিনি লঙতরাই অঞ্চলের কথা, উপকথাগুলো বলে থাকে। অপর দিকে সরমার এখন পঁয়ষট্টি বছর। তিনিও শৈশবের কথা বলতে গিয়ে অনেক কথাই বলে। লঙতরাই সন্নিহিত ছামনুবাজার এলাকা এখন আর সেই পুরনো দিনের মত নেই। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। মনু-ছামনু নদীর উপর পুল হয়ে গেছে। মানুষ এখন সহজেই যাতায়াত করতে পারে। এসব কারণে লঙতরাই অঞ্চল অনেক অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ পুরনো ঐতিহ্য, কথা, উপকথা ভুলে যায়নি। হয়ত কস্মিন কালেও এই ঐতিহ্য ধ্বংস হবে না। লঙতরাই তার নিজের জায়গায় সমুজ্জ্বল।
সমাপ্ত