ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা
মধুমিতা
দ্বিতীয় পর্ব – মা জননী ,দাদাভাই ও বসু পরিবার
(দ্বিতীয় অংশ)
….নেতাজী লিখেছেন– “বৃহৎ পরিবারে জন্মগ্রহণ করার অসুবিধা অনেক। শৈশবে যে বিশেষ যত্নের একান্ত প্রয়োজন তা লাভ করা যায় না, তার উপর, ভীড়ের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব যেন বিলুপ্ত হয়ে যায়, ফলে ব্যাক্তিত্বের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে আত্মকন্দ্রিকতা ও কুনো স্বভাবের পরিবর্তে সমাজের সকলের সঙ্গে মিলে মিশে বাস করার একটা প্রবণতা গড়ে ওঠে। ছোটোবেলা থেকে শুধু নিজের অনেক ভাইবোনের মধ্যেই আমি মানুষ হয়ে উঠিনি, মামা,জ্যাঠা এবং মামাতো ও পিসতুতো ভাইবোনদের সঙ্গে একত্রে বাস করার মতো এক জীবনধারা ও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। ‛কাজেই’ পরিবার কথাটির মধ্যে যে অর্থনিহিত আছে তা আপনা থেকেই ব্যাপকতর হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া দেশ থেকে যে সব দূর সম্পর্কের আত্মীয় আসতেন তাঁদের জন্যও আমাদের বাড়িতে অবারিত দ্বার ছিল। দীর্ঘকাল ধরে চোপটি ভারতীয় প্রথা অনুসারে কটক শহরে সম্ভ্রান্ত কোন অতিথি আগমন করলেই, তাঁর সঙ্গে পরিচয় থাক আর নাই থাক, আশ্রয়লাভের ভরসায় সোজা তিনি আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। যেখানে হোটেলে বাস করার তেমন রীতি নেই, ভালো হোটেলও নেই, সেখানে সামাজিক প্রয়োজনেই যে কোনো প্রকারের একটি বাবস্থ্যা করে দিতে হয়।”…..
এছাড়া নেতাজী তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন,“আমাদের পরিবারের বিরাটত্বের কারণ শুধু তার আয়তনের জন্যেই,পোষ্য ও ভৃত্যের সংখ্যাও ছিল প্রচুর, আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল প্রাণীজগতের প্রতিনিধি – গরু,ঘোড়া,ছাগল,ভেড়া, হরিণ,ময়ূর,বেজি ইত্যাদি।ভৃত্যদের নিয়ে ছিল নিজস্ব এক জগৎ, তাদের পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে ধরা হত। তাদের অনেকে আমার জন্মের বহু আগে থেকেই কাজ করে আসছিল এবং কাউকে(যেমন সর্বাপেক্ষা বৃদ্ধদাসী)আমরা সকলে সমীহ করে চলতাম (তাদের কেউ কেউ পরিভিকাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছে ও পেনসান ভোগ করছে , কেউ কেউ মারা গেছে)। ব্যবসায়ী সুলভ মনোবৃত্তি এসে তখনও মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়নি; ফলেভৃত্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল যথেষ্ট নিবিড়। শৈশবের এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীকালে ভৃতশ্রেণী সম্পর্কে আমার মনোভাব গঠনে সাহায্য করেছে। পারিবারিক এই আবহাওয়ায় স্বভাবতই আমার মনের প্রসার ঘটেছিল; তবু তা আমার মুখচোরা স্বভাবটিকে ছাড়াতে পারেনি। পরবর্তী জীবনে এই স্বভাব বহু বহু বছর ধরে আমাকে পীড়া দিয়েছে, এবং সন্দেহ হয় এখনো আমি তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি কিনা। আমি বোধহয় অন্তর্মুখী ছিলাম এবং এখনো আছি।
(এরপর ক্রমশ…)