কুসংস্কার
রণজিৎ মন্ডল
বলি ও ভালো মানুষের মেয়েরা, এক ধামা চালের গুড়ো বানাতে এক বেলা গইড়ে গেল, আরো দুধামা গুড়ো বানাবে
কি আমি মইরে গেলে?
কি হয়েছে ঠাম্মা?
কি হবে, পৌষ পার্বন দুদিন পর, পিঠেপুলি খাবিনে?
খাবো, তা তিন ধামা চালের গুড়ো দিয়ে কত পিঠে পুলি বানাবা, গেরামের লোক কি নেমন্তন্ন করবা নাকি?
তুই যা এখেন থেকে, খাবার সময় তো পেটে গরুর হাট বসে !
প্রথম ধামার গুড়ো পুকুরের জলে ফেলে দিতে হয় তা জানিসনে ব্যাটার পো?
ওরে বাবা… এ আবার কি হুকুম!
কি জন্যে ফেলে দিতে হবে ঠাম্মা?
অত জানিনে, আমরা ঘরে এয়েছি যেখান থেকে আমাদের শাশুড়িরাও এই এক ধামা চালের গুড়ো পুকুরের জলে
ফেলে দিতে বলত।
ফেলে দিতে বলত আর তোমরা ফেলে দিতে? হ্যা রে হ্যা।
শোন ঠাম্মা, না দেখে না বুঝে কিছু
করা উচিৎ না, মূর্খ কালিদাস যে ডালে বসে ছিল সেই ডাল কাটছিল, সবাই চেঁচিয়ে বলেছিল ” তুই যে ডালে বসে আছিস সেই ডাল কাটছিস, এক্ষুনি তো মরবি!
মূর্খ কালিদাস পরে পন্ডিত কালিদাস হল, লোকে ভুলটা ধরে দিল বলেই তো!
তুমি যে চালের ভাত খেয়ে পেট ভরাও সেই চালের গুড়ো পুকুরের জলে ফেলে দেচ্ছ?
যা যা মোড়লিগিরি করিস না, তিনদিন স্কুলে গিয়ে তিন যুগের জ্ঞান বিলি করছে।
শোন, আমার শাশুড়ির কাছে শুনা কথা, শাশুড়ি যেখন বৌ ছেল, চাল কুটে গুড়ো ঘরে এনে রাখলে, ঢেকে না রেখে আল্গা রেখে দিয়েছিল, কখন কুকুর ঢুকে সেই চালের গুড়োয় মুখ দিয়ে খাচ্ছে কেউ দেখতে না পেলেও শাশুড়ি ঠিক টের পেয়েছেল।তাই সেই চালের গুড়ো পুকুরের জলে ফেলে দিয়েছিল। সেখেন থেকে সব বৌরাই তাই মেনে আসতেছে, তুই এসে পান্ডিত্ব ফলাচ্ছিস। ও বাবা, কোনকালে ঘি খেয়েছি হাত সুখে দেখ, তোমাদের কোন বিবেচনা নেই, কবে তিন পুরুষ আগে কুকুরে চালের গুড়ো খেয়েছে তাই এখনো একধামা করে গুড়ো ফেলে দিতে হবে?
হ্যা দিতে হবে, এই আমার শেষ কথা। একেই বলে কাজির বিচার ঠাম্মা। তুমি মূর্খ তাই সবাইকে মূর্খ বানাতে চাও।
না না, মা জেটি কাকিদের সঙ্গে সব বলব, এই কুসংস্কারকে মেনে না নিতে। তবে রে বলেই হাতের লাঠিটা দিয়ে সপাং করে এক বাড়ি, ওরে বাবারে…
সবাই জড়ো হয়ে গেল, কি হল এভাবে ছেলেটাকে মারলে কেন মা?
মারবো না, আমার কথার অমান্নি!
কি হয়েছে বাবা, মা ঠাম্মার কথা শুনে চালের গুড়ো আর জলে ফেল না। সব শুনে মা জেঠিমা কাকিমা ছেলের কথাই ঠিক বলে মেনে নিল। কুসংস্কার বিদায় নিল।
–~০০০XX০০০~–