আমার এই পথ চাওয়াতেই
“স্বাগতা ভট্টাচার্য”
***********************
জীবনের ছোট ছোট অনুষঙ্গগুলো’ই হয়তো বাঁচার প্রেরণা…
এই যে তুমি আছো…
অমোঘ অনিবার্য!…
অথচ, তোমায় জড়িয়ে,
তোমার ঘামে সপসপে ভেজা বুকে মুখ লুকিয়ে বলতে পারছিনা…
ভালোবাসি, ভালোবাসিইইই !……
একটিবার চোখ বন্ধ করে দেখো কবি!…
তোমার অভিমানী উড়ণচন্ডী ঠোঁটে,
খেলা করছে আমার অবাধ্য আঙুল,
না…না…আঙ্গুল না,
শঙ্খচিলের মেঘ ভাঙা উড়ান,
না.. না… উড়ান না,
আকাশের নীড় থেকে
চুরি করে আনা বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা…
বুনো ফুলের আদিম গন্ধ…
সে যে আমার প্রেম!….
আমার সংশয়াতীত ভালোবাসা।…
ভীষণ ভীষণ দুর্লভ…
মূল্য দিয়ে তাকে মাপা যায় না কবি!…
সেদিন কাকভেজা বৃষ্টিতে তুমি দাঁড়িয়ে আছো চৌরাস্তায়, দূরগামী বাসের অপেক্ষায়…
আমি দূর থেকে অপলক….
কিংবা, মেট্রো স্টেশনে বসেই লিখে ফেললে জীবনের শ্রেষ্ঠ পাঁচ-পাঁচটা কবিতা !…
সেদিন আমি তোমাকে উপহার দিলাম,
টিউশনির টাকায় কেনা সামান্য এক কলম,
কিংবা…কিংবা….
তুমি সদ্য স্নান সেরে চন্দনের সুবাস ছড়িয়ে ডুবে গেলে তোমার সেই আকাশী নীল কবিতার খাতায়,
পাশে ঢাকা পড়ে থাকলো তোমার রাতের খাবার,
আমি চুপি চুপি পেছন থেকে এসে,
কেড়ে নিলাম তোমার সেই গোপন খাতা,
ঘেঁটে দিলাম তোমার পরিপাটি আঁচড়ানো চুল,
তুমি শিশুর মতো বৃষ্টি চোখে মুখ গুঁজলে আমার পালক পালক বুকে!
পরের দিন সকালে সূর্যমুখী ফুলের মতো,
নিজে হাতে চার লাইন কবিতা লিখে
উপহার দিলে আমায়….
অপূর্ব সুন্দর!…
তুচ্ছ এ জীবন আলো আলো আলো আলো
হয়ে গেল আমার..!
তুমি আমার গোপন গর্ভে সঞ্চার করলে তোমার সৃষ্টির শত লক্ষ অমৃতবীজ!….
দু’চোখ বুজে আসার আগে তোমার কলমের নির্যাস ঝিরঝিরে সবুজ পাতায়
অরণ্যের রোদ হয়ে,
উদাস বাউল হয়ে,
জীবনানন্দ বিভূতিভূষণ ছুঁয়ে,
ইছামতীর জলে ডুব দিয়ে,
তামাম বেলপাহাড়ি,পলাশতলী, মহুলবনী রাঙিয়ে…
অযোধ্যা পাহাড়ের দিগন্তে দিগন্তে ছড়িয়ে দিলো লাল লাল শিমুলের নেশা!…
তোমার সৃষ্টি কবিতা হয়ে, গান হয়ে,
তোমার বুকের খুদকুঁড়োর গন্ধ হয়ে
আমার নীলাম্বরী খোলাচুলে মাতাল মাতাল!…
তারপর!
তারপর আমার প্রসাধনহীন চোখের কান্না…
তোমার গাল বেয়ে, বুক বেয়ে, কোল বেয়ে…
তোমার… তোমার.. তোমার…
পায়ের পাতা ধুইয়ে মিশে গেল
রূপনারায়ণের জলে,
আমার অন্তিম নিঃশ্বাসে।…
–~০০০XX০০০~–