প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাগত অবক্ষয়ের মাধ্যমেই গুনগত মানের অধপতনকেই পরিবেশগত অবনমন বলা হয় । এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা হয়ে থাকে। যেগুলি পরিবেশ থেকে এতো দ্রুত সম্পদ আরোহন করে পরিবেশ সেগুলি পূরন করতে সক্ষম হয় না, ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটে থাকে । কিছু কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন – ভূমিকম্প ও ভূমিধ্বস প্রকৃতির অবনমন ঘটায়। পরিবেশগত অবনমন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাসস্থান সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পরিবেশগত অবনমন এমন এক ধারণা যা বৃক্ষচ্ছেদন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, মরুকরণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রানীর অবলুপ্তি, দূষণ ও আরও অনেক কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।
পরিবেশগত অবনমন কারণ গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:-
১. জনবহুলতা ও মাত্রারিক্ত সম্পদ আরোহন করা।
যত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তত পরিবেশের উপর চাপ বাড়ছে। ফল স্বরূপ মাত্রারিক্ত সম্পদ আরোহন যা পরিবেশে ক্ষত সৃষ্টি করছে। এমন এক সময় আসবে যখন মনুষ্য চাহিদা কিছু কিছু অনবীকরন সম্পদের উপস্থিতিকে পেরিয়ে যাবে। ফলে দূষণের পরিমান ও সম্পদ আরোহনের পরিমান আরো বেশি বাড়বে।
২. ধ্বংসাত্মক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:-
ব্যাপক ও নিবিড় কৃষি ব্যবস্থার অতিরিক্ত প্রয়োগ পরিবেশের গুনগত মানের হ্রাস ঘটায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনেক অরণ্য ও তৃণভূমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। ফলে অরণ্য তথা স্বাভাবিক উদ্ভিদের পরিমান ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাপক ও নিবিড় কৃষি ব্যবস্থার অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকা দূষণের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেগুলি বৃষ্টির জলের দ্বারা বাহিত হয়ে নিকটবর্তী জলাশয়ে পড়ে, সে জলাশয়ের দূষণ ঘটায়।
৩. বর্জ্য পদার্থের নিক্ষেপ স্থল বা ভাগাড় :-
যে স্থানে বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয় সেই স্থানের বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পূর্ন ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। বর্জ্য স্থান থেকে নানা রকম বিষাক্ত কেমিক্যাল মাটির সাথে মিশে মৃত্তিকাকে দুষিত করে, স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিনাশ ঘটায় ও ভৌমজল কে দুষিত করে।
৪. বৃক্ষচ্ছেদনের পরিমান বৃদ্ধি:-
অতিরিক্ত জনসংখ্যার বাসস্থান, খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাপী বৃক্ষচ্ছেদনের পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃক্ষচ্ছেদন সারা পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন্য জীবজন্তুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এটি আবহাওয়া পরিবর্তন করে মানুষকেও প্রভাবিত করছে। যেমন – বৃষ্টিপাতের পরিমান হ্রাস, মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমান বৃদ্ধি প্রভৃতি ।
৫. পরিবেশ দূষণের ভয়ংকর রুপ:-
জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ থেকে পৃথিবীর পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে। জল, বায়ু, মৃত্তিকা দূষণের ফলে মানুষ তথা জীব প্রজাতি বেছে থাকা দুর্বিসহ হয়ে উঠছে।
৬. অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার:-
অপরিকল্পিত ভাবে ভূমি ব্যবহার, যেমন – নগর বিকাশ, খনিজ উত্তোলন, শপিং মল, শিল্পাঞ্চল প্রভৃতি গড়ে তোলার ফলে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অবনমিত হচ্ছে।
৭. প্রাকৃতিক কারণ :-
মনুষ্য সৃষ্ট কারণ ছাড়াও কিছু কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা পরিবেশের অবনমনে সাহায্য করে। যেমন – দাবানল, ভূমিধ্বস, সুনামি ও ভূমিকম্প, ঘূর্নিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিস্তৃর্ন পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয় ।
পরিবেশগত অবনমন ফলাফল গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:-
পরিবেশগত অবনমন মানুষ ও জীব প্রজাতির উপর দীর্ঘকালিন প্রভাব ফেলে।
১. মানুষের স্বাস্থ্যের উপর পরিবেশের প্রভাব :-
পরিবেশের অবনমন মানুষের স্বাস্থ্যকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। যেমন – দুষিত পানিয় জল গ্রহন, খাদ্যের গুনগত মানের অধপতন ও বায়ু দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের অধপতনের জন্য দায়ী। আবার দুষিত বর্জ্য থেকে নির্গত পদার্থ খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা রকম অসুখের সৃষ্টি করে।
২. দারিদ্রতার পরিমান বৃদ্ধি :-
পরিবেশ দুষনের ফলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তার দ্বারা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের গরীব মানুষরা বেশি প্রভাবিত হয়। এই সব দেশের মানুষরা তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় ন্যুনতম চাহিদা পূরণে সক্ষম হয় না। ফলে দারিদ্রতা ও অনাহারের পরিমান বৃদ্ধি পায়।
৩. আবহাওয়াগত পরিবর্তন :-
পরিবেশ অবনমন বিভিন্ন দিক যেমন বৃক্ষচ্ছেদন ও খনিজ পদার্থ উত্তোলন জল, বায়ু ও মৃত্তিকা দূষণ কে ত্বরান্বিত করছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন জলবায়ুগত বিপর্যয়ের পরিমান বৃদ্ধি বাড়াচ্ছে ও ওজোন স্তর ক্ষয় হচ্ছে, যার দ্বারা মানুষ নানা ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
৪. জীববৈচিত্র্যের বিনাশ :-
জলবায়ুর পরিবর্তন তথা পরিবেশের অবনমন বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির প্রাকৃতিক বাসস্থান যেমন অরন্যের বিনাশ ও পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, ফলে কিছু কিছু প্রজাতি তার প্রাকৃতিক বাসস্থান হারিয়ে ফেলছে ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে আবার কিছু কিছু প্রজাতি পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে অভিযোজনে সক্ষম না হওয়ায় অবলুপ্তির সম্মুখিন হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান হ্রাস :-
বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের অবিবেচনাকৃত উত্তোলন সেই সম্পদের হ্রাস ঘটাচ্ছে। যেমন – কৃষি জমি, জল, ভেষজ উদ্ভিদ ও খাদ্য শস্যের পরিমান দ্রুত কমে যাছে।
–~০০০XX০০০~–